সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ এপ্রিল, ২০২১ ১২:৩৫

নেগেটিভ সনদ নিয়ে ভারতে গিয়ে ফিরছেন পজিটিভ হয়ে

করোনা ভাইরাসের নেগেটিভ সনদ নিয়ে ভারতে গিয়ে পজিটিভ হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ১২ জন। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে গত ১৫ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ভারত থেকে বাংলাদেশ এসেছেন ৩ হাজার ৮০১ জন। এর মধ্যে ১২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ভারতফেরত এই করোনা রোগীদের নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে রীতিমতো তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ আশঙ্কা করছে, তাদের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। এরই মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান ১০ জন করোনা রোগী। এদের মধ্যে ভারতফেরত রয়েছেন সাত জন। তাদের সবাইকে আবারও পুলিশ চিহ্নিত করে তাদের নিজ নিজ জেলার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। তবে এর মধ্যে কত জনকে তারা সংক্রমিত করেছে, তার কোনো হিসাব নেই।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলছেন, ভারতে আশঙ্কাজনক হারে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির অন্তত চারটি রাজ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। সীমান্তে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, ভারত থেকে যারা আসবে, তাদের দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। শুধু যাদের করোনা নেগেটিভ আসবে, তাদের ছেড়ে দিতে হবে। এই ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশকে চরম খেসারত দিতে হবে।

দেশে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের পেছনে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট সক্রিয় ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এছাড়া দেশে মিলেছে নাইজেরীয় ভ্যারিয়েন্টও। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভারতীয় ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট, যা প্রতিবেশী দেশটিকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে। দেশটি করোনায় সংক্রমণ ও মৃতের তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে উঠে আসার পেছনে এই ভ্যারিয়েন্টই সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এখানেই ঘটছে বিপত্তি। পাশের দেশের এই পরিসংখ্যান দেখে আতঙ্কিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।

ভারতের এই পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত দেশের বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাস দেশে ঢুকলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়াবহ। বিপর্যয় নেমে আসতে পারে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। পাশের দেশ ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবিলা করা ‘বিরাট চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। সেজন্য কমিটি সম্প্রতি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল, যেন ভারতের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ আপাতত বন্ধ রাখা হয়। সে অনুযায়ী রবিবার থেকে ১৪ দিনের জন্য ভারতের সঙ্গে সব স্থলবন্দর দিয়ে মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে থেকেই বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ভারতের সঙ্গে। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে দেশের কোনো কোনো ডাক্তার বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে করোনার ধরন একই। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দাবি করেছেন, একই নয়, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট দ্রুতগতিতে ছড়ায় এবং শরীরের ক্ষতিও করছে দ্রুত। এটাকে কেন্দ্র করে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কেউ এলেই তাকে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি ও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সীমান্তের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ যা যা করার তা-ই করছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, অনেকে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসে। তাই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভয়ংকর, এটা তীব্র গতিতে ছড়ায়। ভারত থেকে আসা সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণক্ষমতা অন্য ভাইরাসের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে এলে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও ফাঁকি দিতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট। তাই সতর্ক থাকতে হবে। ভারত থেকে কেউ এলে তাকে দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট এলে ছাড়তে হবে।

আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে দেশে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।

খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১০ জন করোনা রোগীর মধ্যে সাত জন ভারতফেরত। নার্সের কাছে ভর্তির কাগজ জমা না দিয়ে তারা পালিয়ে যান। তবে তাদের পাওয়া গেছে এবং পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে যা যা করণীয় তা-ই করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত