ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

২০ জুন, ২০২০ ০১:৫৫

ঠেলায় পড়লে বিড়ালও গাছে চড়ে!

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনেকদিন পর হঠাৎ করে উদয় হয়েই গত বৃহস্পতিবার বলেছেন বাংলাদেশ থেকে করোনা সহজেই যাবে না বরং আরও ২/৩ বছর স্থায়ী হবে! উনি যেটি বলেছেন সেটি অবশ্য একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই! কিন্তু প্রশ্ন হলো, আজ কেন উনি এই কথা বলছেন? কেন আজ এই অচলাবস্থা তৈরি হলো? কেন আজ এমন আত্মঘাতী একটা সম্ভাবনা তৈরি হলো? এই অচলাবস্থার জন্য তো পুরোটাই তার অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়ী।

সেই প্রথম থেকেই তারা বিন্দুমাত্র প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও অবিরতভাবে শতভাগ প্রস্তুতির বয়ান দিয়ে এসেছেন, টেস্ট নিয়ে তুঘলকি সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কনটাক্ট ট্রেসিঙের ধারেকাছে দিয়েও হাঁটেননি। আইইডিসিআর স্বেচ্ছাচারিতার সর্বোচ্চ দেখিয়েছে। পিপিই আর মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা নাইবা বললাম। তাদের প্রস্তুতির বয়ানে এবং করোনাকে হালকাভাবে দেখার প্রয়াসে সরকারও আশ্বস্ত হয়ে করোনা মোকাবেলার ব্যাপারটাকে প্রথমে নিতান্তই মামুলিভাবেই নিয়েছে!

কর্তৃপক্ষ প্রথমে লকডাউনের নামে রাজনৈতিক দলের বিশেষত বিএনপির হরতালের মতো প্রহসন করেছে! গার্মেন্টস, ঈদ মার্কেট ও ঈদের আগে পরিবহন খোলা-বন্ধ নিয়ে তেলেসমাতি দেখিয়েছে! সর্বশেষ এই জুনের শুরুতে সব খুলে দিয়ে আরও মরণঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে! পরে আবার শনাক্ত বা আক্রান্তের বিচারে পুরো শহরকে লকডাউন না করে হাস্যকর পকেট-পকেট সব জোনিঙ করেছে যা ব্যর্থ হতে শতভাগ বাধ্য! এবং এইসব কারণেই এমনভাবে করোনার কম্যূনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বা হচ্ছে যে এই বাঙাল মুল্লুক থেকে সহসাই করোনা বিদায় নেওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই! তাছাড়া শীঘ্রই করোনার বিপরীতে কোন কার্যকারী ওষুধ বা ভ্যাকসিন আসারও কোন সম্ভাবনা নেই। তাড়াতাড়ি করোনা বিদায় না হওয়ার এটাও একটা কারণ।

যাইহোক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের যখন মহাপরিচালকের এই বক্তব্যকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তখন সবাই মহাপরিচালক'র বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন অথচ আজ যারা মহাপরিচালকের সমালোচনা করছেন তারা এতদিন চুপ থেকেছেন অথবা এড়িয়ে গেছেন! এদিকে, মহাপরিচালকও তার অবস্থান পরিবর্তন করে আজ উল্টো সুরে কথা বলেছেন অথচ তার আশঙ্কাটা কিন্তু একেবারেই অমূলক ছিলোনা!

আমরা সেই প্রথমদিন থেকেই শুধু মহাপরিচালকই নয় বরং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আওয়াজ তুলেছি। তখন শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা কেউই পাত্তা দেয়নি। মহাপরিচালকও সেইসময় তার অবস্থান পরিবর্তন করে দুঃখ প্রকাশ করেননি বা তাদের ব্যর্থতাগুলো সারানোর কোন উদ্যোগই নেননি! অথচ আজ তিনি একটি সঠিক সম্ভাবনার কথা বলেও তার স্ট্যান্ড ধরে রাখতে পারেননি সুর পাল্টে ফেলেছেন! এজন্যই বলে ঠেলায় পড়লে বিড়ালও গাছে চড়ে!

ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ যে 'ঠেলা'টি দিয়েছেন। আমরা এতে খুশি হয়েছি কিন্তু আমরা আরও বেশি খুশি হতাম যদি তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও এমন একটি ঠেলা দিয়ে গাছে চড়াতে পারতেন!

এই অচলাবস্থা, এই অব্যবস্থাপনা, এই ব্যর্থতা, এই সমন্বয়হীনতা এবং সর্বোপরি এই 'ইম্পেণ্ডিং কলাপ্স'র জন্য শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই দায়ী নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও সমানভাবে দায়ী। তাই ওবায়দুল কাদের বা রাষ্ট্রের আরও শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি প্রকাশ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও এমন একটি ঠেলা দেওয়া হতো তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও আজ গাছে উঠতে বাধ্য হতো।

যদিও ওবায়দুল কাদের বা রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে এমন প্রকাশ্যে ঠেলা দেওয়া খুবই স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার তারপরেও আমরা মনে করি কাজটি করতে পারলে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও উপকৃত হতো। সর্বোপরি, করোনার করালগ্রাস থেকে বাঁচার এখনো যে সম্ভাবনাটুকু আছে তা পুরোপুরিই কাজে লাগানো যেতো!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত