ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

২৪ জুন, ২০২১ ০৪:৩৬

আ.লীগের বাহাত্তরে যদি প্রতিপাদ্য হতো বাহাত্তরের সংবিধান

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল বুধবার। এই ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অন্যতম প্রতিপাদ্য হতে পারতো ৭২'র সংবিধানে পুরোপুরি ফিরে যাওয়া। বর্তমান বাস্তবতায় এই আশা বুঝি আর পূরণ হবার নয়!

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আরেকটি চাওয়া হতে পারতো যত দ্রুত সম্ভব একজন দক্ষ ও চৌকস এবং কর্মীবান্ধব ও নিরহংকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা যিনি কর্মীদের নিকট 'স্যার' নয় 'নেতা' হতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, যিনি দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় নিজেকে ফটোসেশনে ব্যস্ত না রেখে বরং সংগঠন নিয়ে ভাববেন, কর্মীদেরকে নিয়ে ভাববেন।এই চাওয়াটি পূরণ হওয়া অলীক কিছু নয়।

বিগত প্রায় একযুগ একটানা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার ফলে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে যেসব হাইব্রিড ও মধুমামাদের আবির্ভাব ঘটেছে তা রীতিমত ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বারংবার এইসব হাইব্রিড ও মধুমামাদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে এদেরকে দল থেকে বিতাড়নের কিংবা নতুন করে এদেরকে দলে অন্তর্ভুক্ত না করার কঠোর নির্দেশনা দিলেও দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে এবং সভানেত্রীর রানিংমেট হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তার দীর্ঘ দুই মেয়াদে অন্তত এই বিষয়ে কোন কার্যকারী উদ্যোগ নিতে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইসব হাইব্রিড ও মধুমামাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তার দিকেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রমাণসহকারে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় হয়তো এইসব মধুমামাদের অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা থেকেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন যদি কখনো তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে তবে এদের দ্বারাই ঘটবে এবং যদি সত্যি সত্যিই তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে তবে তিনি হয়তো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবেন! দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা এখনই যদি সতর্ক হয়ে এই ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধু যে ভবিতব্য করেছিলেন অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমাদেরকে সেদিকেই এগিয়ে যেতে হবে! যতদিন প্রিয় নেত্রীর দেহে প্রাণ আছে ততদিন সেই আশঙ্কা নেই, ইনশাল্লাহ। কিন্তু মানুষ তো চিরজীবী নয়, সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে সকল মানুষের মতো নেত্রীকেও একদিন বিদায় নিতে হবে! তখন কী হবে? তখন কাদের হাতে যাবে এই সংগঠনের নেতৃত্ব? যাদের হাতে যাবে তাদের হাতে কতোটুকু নিরাপদ থাকবে এই সংগঠন? আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের এখনই জরুরি ভিত্তিতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে।

যদি তারা তা না পারেন তাহলে এমন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদযাপন অচিরেই একদিন সত্যিকারার্থেই অর্থহীন হয়ে পড়বে! আমরা তৃণমূলের কোটি কোটি নেতাকর্মীরা আদৌ সেই দিনটি দেখতে চাই না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত