ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

১৫ এপ্রিল, ২০২২ ২৩:৪৮

মঙ্গল শোভাযাত্রা নাকি পুলিশি মহড়া?

ছবি: সংগৃহীত

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি দেখে বুঝার উপায় নাই এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নাকি কোন পুলিশি মহড়ার ছবি! বাস্তবতা হলো, আজ থেকে পনের কুড়ি বছর আগেও পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এমন কড়া পুলিশি কর্ডনের প্রয়োজন হতো না। ভয়হীন নিঃসঙ্কচিত্তে সবাই তখন মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতো, গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে মেলার পসরা বসতো।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় এই পুলিশি কর্ডন দেখে অনেকের মতো আমারও খুব আক্ষেপ করে বলতে মন চায়, জিহ্বায় পলিথিন পেঁচিয়ে রসগোল্লা খেলে কি আর রসগোল্লার স্বাদ পাওয়ায় যায়? তখন রসগোল্লা শুধু গেলায়ই হয়, স্বাদ আর পাওয়া যায় না! মনে খেদ থাকলেও এখন যে জিহ্বায় পলিথিন পেঁচিয়ে রসগোল্লা খাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ও নেই। বর্তমানে ধর্মান্ধ ও উগ্র সাম্প্রদায়িক মানসিকতার এই সমাজে যেন এই পুলিশি কর্ডনের বিকল্পও আমাদের হাতে নেই! অন্তত এই মুহূর্তে তো নেই-ই-নেই।

ধরেন, এই মঙ্গল শোভাযাত্রা কোনরকম পুলিশ প্রটেকশন ছাড়াই শুরু হলো এবং কিছুক্ষণ পরেই জঙ্গি হামলা হলো (জঙ্গি হামলা যে হবে না তার তো কোন গ্যারান্টি নেই) এবং সেই হামলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো তখন আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? নিশ্চিতভাবেই আমরা তখন প্রশ্ন তুলবো কেন মঙ্গল শোভাযাত্রায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হলো না? আসলে এই বাংলাদেশ আর সেই উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নেই!

একসময় আমরা কোনরকম প্রটেকশন ছাড়াই যে মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে পারতাম সেটা কি এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এখন আর সম্ভব? অন্তত নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ব্যক্তি ও পরিবার থেকে, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্মান্ধতাকে বিদায় করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তত সম্ভব নয়।

শুধু মিডিয়া সর্বস্ব আন্দোলন নয়, কোন কাগুজে আন্দোলন নয় বরং যথাযথ ও কার্যকর সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে যদি আমরা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে সমূলে উচ্ছেদ করতে পারি তাহলেই আমরা আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক ও উদার বাংলাদেশকে ফিরে পাবো। তখন আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় কোন পুলিশি কর্ডনের প্রয়োজন হবে না।

সেই হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে আগামীর দিনগুলো কাটাতে চাই। মরার আগে অন্তত সেই বাংলাদেশকে দেখে যেতে চাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত