ফরিদ আহমেদ

১৫ আগস্ট, ২০২৩ ১১:১০

রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তির কারণেই কুখ্যাত রাজাকারদের জন্যেও শোক

১৬ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়া রাজাকার। ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একদিন পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে হামলা চালায় দশ-বারো জনের একটা সশস্ত্র রাজাকার দল। তারা গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে তুলে দেয় পাকিস্তান আর্মির হাতে। এই দলের নেতা ছিলো দেইল্লা রাজাকার।

এই দেইল্লা রাজাকার দেশ স্বাধীন হবার পরে সুফি রূপ ধারণ করে। নিজের নাম কিছুটা পরিবর্তন করে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বনে যায়।

শুধু গৌরাঙ্গ সাহাই এমন ভয়াবহ বিপদে পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকারদের এক বিশাল বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দু পাড়া আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণের সংবাদে হিন্দুরা যে যেদিকে পারে পালিয়ে গিয়েছিলো। মধুসূদন ঘরামি আর শেফালি ঘরামির দুর্ভাগ্য। তারা পালাতে পারেনি। রাজাকার বাহিনীর কিছু সদস্য শেফালি ঘরামিকে ধর্ষণ করে।

উপরে যে দু'টো ঘটনা বললাম, এই রকম অসংখ্য ঘটনা রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ঘটিয়েছে। হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়া, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট লুট করা, হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করা, তাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া, খুন করা, হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা, হেন কোনো অপরাধ নেই যা এই রাজাকাররা এবং তাদের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী করে নাই।

দেশ স্বাধীন হবার পরেই এই সব কুলাঙ্গার রাজাকার-আলবদরদের বিচার হওয়া উচিত ছিলো। দুর্ভাগ্য আমাদের যে এই কাজটা করা হয়নি। করা হয়নি বলেই এইসব রাজাকাররা দ্রুত তাদের বেশ পরিবর্তন করে ফেলেছিল। কেউ আল্লামা হয়েছে, কেউ মওলানা সেজেছে, কেউ অন্য রূপ ধরেছে, কেউ বা মুক্তিযোদ্ধার সনদই নিয়ে ফেলেছে।

অন্য দেশে হলে হয়তো সম্ভব হতো না। রঙ্গ ভরা বঙ্গ দেশে বলেই সম্ভব হয়েছে। এর প্রধান কারণ দু'টো। এক: আমাদের স্মৃতিশক্তি গোল্ডফিশের মতো। দুই: আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রচণ্ড রকমের দ্বিধাবিভক্ত।

এই দ্বিধা-বিভক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও প্রভাব ফেলেছে প্রবলভাবে। যে কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো একজন কুখ্যাত রাজাকারের জন্যেও শোক স্ট্যাটাস দিচ্ছে মানুষ।

  • ফরিদ আহমেদ: কানাডাপ্রবাসী লেখক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত