সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ১৭:৪৬

‘শপথের কথা ভুলে গেছেন সহযোদ্ধারা’

শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের  দেয়া স্ট্যাটাসের এবার সমালোচনা করেছেন শাহবাগ আন্দোলনে তারই সহযোদ্ধাদের একজন মাহমুদুল হক মুন্সি বাঁধন।

বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসকরা বাঁধন শফিক রেহমানের গণজাগরণ বিরোধীতা ও আন্দোলনকর্মীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকে মনে করিয়ে বলেন- এসব লোকদের বর্জনের শপথ ছিল তাদের। শফিক রেহমানের পক্ষে কথা বলায় একসময়ের নেয়া সেই শপথ সহযোদ্ধারা ভঙ্গ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে ইমরান এইচ সরকারের স্ট্যাটাসের পর প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাকে ফেসবুকে বর্জনের ডাক দেন। এই আলোচনার মধ্যেই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে বাঁধন লিখেছেন:  

১/ গণজাগরণ মঞ্চে আমরা শপথ নিয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধী দল ও ব্যক্তির পাশাপাশি যারা যুদ্ধাপরাধীদের দলকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে তাদের বিচার করতে হবে।

.
আমি পরিষ্কার দেখছি আমাদের সহযোদ্ধা হিসেবে যারা পরিচয় দিতেন, সেদিন শপথে মাথা ও হাত উঁচু রেখে সুউচ্চ কণ্ঠে গগন বিদারণ করেছিলেন, সেই শপথবাক্য পাঠকারীসহ সকলেই সে শপথ ভুলে গিয়েছেন।

.
নিঃসন্দেহে 'শফিক রেহমান' বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে জামায়াত এর সমর্থনকারী এবং যেহেতু তিনি খালেদা জিয়ার ভাষণ লিখে দেন, নিজ হাতে লিখেছিলেন, আমরা 'নষ্ট ছেলে'। তারপরই আমাদেরকে হত্যা করা শুরু করা হয়। তিনি প্রকাশ্যে ও আড়ালে সরাসরি জামায়াতের সমর্থন দিয়ে গিয়েছেন।

.
জামায়াতের দৈনিক পত্রিকা 'দৈনিক নয়াদিগন্তে' শফিক রেহমান সেই ২০১০ সালে একটা ব্যঙ্গাত্মক কলাম লিখেছিলেন "যুদ্ধাপরাধী শনাক্ত করার সহজ উপায়" নামে।

.
রেডিও তেহরানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, "আমি দেখছি যে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ সবসময় অতীতের কথা বলে, যেমন ধরুন-শেখ মুজিবসহ তার সপরিবারে হত্যার কথা, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা,যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা এসব বলে সবাইকে অতীতের দিকে টানতে চাচ্ছে..."

.
যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালীন সময়ে তিনি একটি বইও প্রকাশ করেছেন "মৃত্যুদন্ডঃ দেশে-বিদেশে যুগে যুগে"।।

.
জামায়াতের বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে লন্ডনে ২০১৫র ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বইটিতে ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে রাজাকারদের বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। মানবতার মুখোসের আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা এই প্রথম নয়।

.
আপনারা ভুলে গেলেও আমি ভুলিলি। আমি বলেছিলাম গণজাগরণ মঞ্চ আদর্শচ্যুত হয়েছে। তার প্রমাণ আপনারা দেখতে পেয়েছেন একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেয়া ব্যক্তির পক্ষে ইমরান এইচ সরকার কথা বলেছেন।

.
তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, তিনি রাজনীতিবিদের মতো, গিরগিটির মতো রঙ পালটাতেই পারেন, বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার মাধ্যমে একজন শফিক রেহমানকে তিনি এখন সমর্থন দিতেই পারেন। কিন্তু আপনি কি সেই শপথ ভুলে গিয়েছেন? আপনি কিভাবে রাজাকারের পক্ষে কথা বলা লোককে সমর্থন দেন?

.
২/ আজকে যারা বাকস্বাধীনতার কথা বলে চিৎকার করছেন, ২০১৩ তে মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার কেন আপনার একান্ত চাওয়া ছিলো?

.
মাহমুদুর রহমান অপরাধী ছিলো, সে কতিপয় ব্লগারকে পয়েন্ট আউট করে দিয়ে উসকে দিয়েছিলো হত্যা করবার জন্য। তাকে তার সাংবাদিকতার জন্য গ্রেফতার করা হয়নি, তার অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিলো।

.
ওয়েল, শফিক রেহমানকেও সাংবাদিকতার জন্য গ্রেফতার করা হয়নি। শফিক রেহমান একটি অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছেন। যেটা আদালতে প্রদানযোগ্য। সজীব ওয়াজেদ জয় স্পষ্ট করেছেন কোন সূত্র ধরে কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

.
এখন আপনি যদি আগে থেকেই রায় দিয়ে দেন শফিক রেহমান কোন অপরাধ করেনি, তাহলে তো আদালতের প্রয়োজন নাই, আপনার কথাই আইন। অলরেডি এই ঘটনায় দুজন বিদেশী বিদেশে সাজা খাটছে, দেশিদের তো বিচার কেবল শুরু।

.
আমি জানি, আমাদের বন্ধুরা মারা যাচ্ছে, সরকার তার কোন যথোপযুক্ত বিচার করছে না, খুনিদের ধরার চেষ্টাই করছে না, সে বিষয়ে আমার দীর্ঘ দীর্ঘ লেখা ও সাক্ষাতকার আছে, বহু চীৎকার চেঁচামেচি আছে। আমাদের সরকারকে আরো কঠোর ভাষায় সমালোচনা করবার ও চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন।

.
তারমানে তো এই নয় যে এক অপরাধের বিচার হয়না দেখে আরেক অপরাধের বিচার করতে পারবে না! এক অপরাধী সাজা পায়না দেখে কি আরেক অপরাধীকেও মুক্ত দেখতে চান? বুঝলাম আপনি আওয়ামী বিরোধী, তারমানে কি আপনি একজন অপরাধীকে সমর্থন করবেন?

.
আমি জানিনা, শফিক রেহমান অপরাধী কিনা, সেটা আদালত বিচার করবে। তবে যদি সত্যি-ই অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে আপনারা কার পক্ষ নিচ্ছেন বন্ধুগন?

.
একজন রাজাকারের পক্ষাবলম্বনকারী ও একজন সম্ভাব্য ফৌজদারি অপরাধীর?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত