সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ‘বায়বীয়’ অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমন মন্তব্য করে ইমরান এইচ সরকার ঔদ্ধত্যের সীমা লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন।

সোমবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন-

শফিক রেহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে আমি সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণের বায়বীয় অভিযোগে’ শফিক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইমরান যে মন্তব্য করেছেন, তা কেবল একজন অপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়াই নয়, চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণও বটে। ইমরান কী করে জানলেন, শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগটি ‘বায়বীয়’?

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর একই ভাষায় দেওয়া ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। জামায়াত, সাকা ও খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভিন্নমত দমনের’ অভিযোগ বহুবার উচ্চারণ করেছে। ইমরান এখন যুদ্ধাপরাধী ও খালেদা জিয়ার ভাষায় বর্তমান সরকারকে আক্রমণ করে কেবল নিজের স্বরূপ উন্মোচন করেননি; কার সূতার টানে পুতুল নাচ হচ্ছে, তা-ও কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

রাজনৈতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় অপরিপক্ক তরুণ ইমরান, ইতিহাসের একটি বিশেষ মুহূর্তে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে দেশব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যে অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তা কোনও ব্যক্তি-বিশেষের একক কৃতিত্ব ছিল না। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ১৪ দলীয় জোট, সংস্কৃতিসেবী, পেশাজীবী, কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক ও নারী সমাজসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি একাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলেই, বাংলাদেশে এক অভিনব শান্তিপূর্ণ ‘গণউত্থান’ সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিপুল গণজাগরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আমরা চেষ্টা করেছিলাম, আন্দোলনটি যাতে কারো ভুল বা হঠকারিতার জন্য বিপথগামী না হয়। আমরা ভরসা করেছিলাম, এককালের ছাত্রলীগ কর্মী ডা. ইমরানের ওপর।

কিন্তু অচিরেই আমরা দেখতে পেলাম, ইমরান প্রথমে গণবিচ্ছিন্ন বামদের খপ্পড়ে পড়ে। পরে মানুষের ঢল দেখে নিজেকে অতিমূল্যায়ন করতে শুরু করে। তার ‘আমি কি হনুরে ভাব’ পরীক্ষিত সহকর্মীদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে। সবশেষে সর্বসম্মত আন্দোলনকে মহল বিশেষের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ফাঁদে টেনে নেয়। ইমরান ও বামদের হঠকারি কর্মকাণ্ডের ফলে মূলধারার ছাত্র সংগঠনসমূহ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দূরে সরে আসে। অনিবার্যভাবে জনগণ ও তরুণ সমাজও নিজেদের গুটিয়ে নেয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ ও মিছিল পরিণত হয় গুটি কয়েক মানুষের সমাবেশে। ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির সমাবেশে ইমরান সকল রাখঢাক খুলে ফেলে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে।

পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবেই গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে পড়ে। একটি বিশাল সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে। ইমরান এখন ‘জাতির বিবেকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশের সকল ইস্যুতেই ইমরানের এখন মতামত দেওয়া, সক্রিয় ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গণজাগরণ মঞ্চের পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার পুরনো রাজনৈতিক বিশ্বাস ও আনুগত্যের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং ‘বনসাই’য়ে পরিণত হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে সরকারবিরোধী মঞ্চে পরিণত করে ইমরান ও তার সহযোগীরা যে ইতোমধ্যে সার্কাসের ক্লাউনে পরিণত হয়েছে, সম্ভবত এই কাণ্ডজ্ঞানটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছে। ইমরানের এককালের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের কাছ থেকেই শুনেছি, ইমরান কেবল বামদের নয়, দেশি-বিদেশি নানা সন্দেহভাজন শক্তি, সংস্থা ও ব্যক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই তার লক্ষ্য। ‘ভিন্নমতের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তার ‘আত্মাহুতি’ দেওয়ার অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি প্রবচনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে।’

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের পর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

ওই স্ট্যাটাস পড়ে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি ইমরানকে মিথ্যাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে বলেন, ইমরান বিএনপির পয়সা খেয়েছেন।

এরপর ইমরান এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে সম্ভবত আমার নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাই আজ হুমকির মুখে।

দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শেষে তিনি লেখেন, ‘আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে পারবো না কিন্তু আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার যে অধিকার আপনার আছে, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজন হলে আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।’