সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

৩১ মে, ২০১৬ ১৮:২৯

শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসকে ‘অপমান’, সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার উপর ‘ক্ষোভ’

সিলেটের প্রবীণ শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসকে অপমান করার অভিযোগ ওঠেছে সিলেট জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সোমবার সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠান চলাকালে হিমাংশু বিশ্বাসকে অপমান করে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিতবরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মী।

কেউ কেউ শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠান বর্জনেরও ডাক দিয়েছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিতবরণ দাশগুপ্ত।

শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসের মেয়ে সংস্কৃতি কর্মী অন্তরা বিশ্বাস পিংকি সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে ফেসবুকে লিখেন-


আজ সিলেট কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উৎসবে স্যার হিমাংশু বিশ্বাস কে অপমান করে অনুষ্টিতব্য অনুষ্ঠান থেকে না নামালেও পারতেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মহোদয় সিলেট ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাস গুপ্তা। অবশ্য আপনার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ধন্যবাদ আপনাকে।'

পিংকির এমন স্ট্যাটাসের পর নাট্যকর্মী সুপ্রিয় দেব শান্ত লিখেছেন, আজকে যারা প্রতিবাদ করছেন কালকেই হয়তো তারা শিল্পকলা আয়োজিত অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে যাবেন।

শান্ত লিখেন-


যদিও আমি গতকালকে শিল্পকলা আয়োজিত রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম না তবুও অনুষ্ঠান শেষে লোকমুখে এবং আজ সকালে অনুপ দার শেয়ার করা অন্তরা বিশ্বাসের স্ট্যাটস পড়ে খুবই বিব্রত হয়েছি, দুঃখ পেয়েছি, লজ্জা পেয়েছি। হিমাংশু দা'র মতো একজন প্রবীন শিল্পীকে জোর করে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা কোনভাবেই কোন ধরনের সংষ্কৃতিতে পড়ে না। এটা শুধু হিমাংশু দা'র অপমান নয় পুরো সিলেট এর সব সংষ্কৃতিকর্মীদের অপমান বলে আমি মনে করি।

স্ট্যাটাসে অনেকেই প্রতিবাদ করার কথা, ঘৃনা জানানোর কথা বলেছেন। আমিও তাদের সাথে একমত। কিন্তু শুধু ঘৃনা জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থেকে প্রতিবাদ করলে বা কথা বললে আদৌ কি কোন লাভ হবে?

হয়তো দেখা যাবে গুটিকয়েকজন জেলা কালচারাল অফিসার এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন বা আন্দোলন করছেন কিন্তু যার স্ট্যাটাসের কারণে সবাই এই ঘটনা জানতে পেরেছে, তিনি হয়তোবা শিল্পকলা আয়োজিত পরবর্তী কোন অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠে গান গাইবেন। বা যাকে অপমান করা হয়েছে উনিই শিল্পকলার কোন অনুষ্ঠানে গান গাইছেন বা অফিসারের সাথে বসে চা পান করছেন এবং হয়তো শিল্পকলার প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতেও উপস্থিত থাকছেন। তাতে প্রতিবাদ করা বা ঘৃনা প্রকাশ করে আদৌ কি কোন লাভ হবে? (অতীতে এইরকম ঘটনা অনেক দেখেছি বলেই বলছি)

যদি হিমাংশু দা শিল্পকলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরাতে পারেন, যদি অন্তরা বিশ্বাস নিজেকে শিল্পকলার পরবর্তী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে পারেন, যদি বিপুল শর্মা, অনিমেষ রায় চৌধুরীসহ শিল্পকলার অন্যান্য প্রশিক্ষকরা নিজেকে শিল্পী ভেবে শিল্পী তথা শিল্পের অপমান নিজের অপমান মনে করে শিল্পকলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন তাহলেই এই ধরনের প্রতিবাদ বা ঘৃণা প্রকাশে লাভ হবে। নতুবা অতীতের মতো চা পান করতে করতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


আর সংস্কৃতিকর্মী দ্বোহা চৌধুরী শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন ফেসবুকে।

দ্বোহা লিখেন-

সিলেট জেলা শিল্পকলার জেলার কালচারাল অফিসারের কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতি অঙ্গণের অনেকেই বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন।

আমি কিছু বলবো না, বলার আগ্রহ নেই।

আপনাদের ক্ষমতা বা সক্ষমতা থাকলে আজ থেকে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত কার্যক্রম বয়কট করার ঘোষণা দিন।

আমি প্রতিজ্ঞা করছি, অসিত বরণ দাসগুপ্ত যতদিন সিলেট শিল্পকলায় আছেন, ততদিন আমি শিল্পকলার আয়োজিত কোন কার্যক্রমে যাবো না...

তবে শিল্পকলায় যাবো, এই প্রতিষ্ঠানটি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি না...বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে যদি রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতে পারি...তবে সিলেট শিল্পকলাতেও পারতে হবে।

পারবেন, জেলা কালচারাল কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডতে উপস্থিত হওয়া বয়কট করতে, মন থেকে? যাদের পা চাটলে খুশি হন, তেমন কর্তা ব্যক্তিদের অনুরোধ, ধমক বা হুমকিতে নিজেকে না টলিয়ে যেটা করণীয় সেটা করতে???


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিতবরণ দাশগুপ্ত সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিমাংশু বিশ্বাসকে কোনো অপমান করা হয়নি। তিনি বলেন, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে সব সংগঠন দুটি করে গান গাইবে এমনটি আগে থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। হিমাংশু বিশ্বাসই আগেরদিন এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর কথা অনুসারেই নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা দুটি গান পরিবেশনার পর উপস্থাপক তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অন্যদলকে আমন্ত্রণ জানান। এতে হিমাংশু বিশ্বাস কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হন। আমি অনুষ্ঠানেই মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত