সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

২৮ জুলাই, ২০১৬ ১৮:৪৮

রামপাল সুন্দরবনকে আরও সুন্দর করবে!

রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে চলমান আলোচনা-সমালোচনা-আন্দোলনের সময়ে এ নিয়ে ফেসবুকে রস-অভিমত লিখেছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান।

মাসকাওয়াথ আহসানের সে অভিমত সিলেটটুডের পাঠকদের উদ্দেশে-
 
রামপাল সুন্দরবনকে আরও সুন্দর করবে
রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন ইস্যুতে দেশবিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছে। এরা সুযোগ পেলেই চে’গুয়েভারার ছবি-অলা টিশার্ট পরে গলায় গামছা ঝুলিয়ে লংমার্চ করে; সভা করে। এরা কেন বোঝে না রামপাল পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না। সেই মান্ধাতার আমলে ঠিক করা হয়েছিলো, যে কোন বনভূমি থেকে শিল্প-কারখানা কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরে হতে হবে। যুগ বদলেছে; সবকিছুতেই গতি বেড়ে গেছে। তাই সুন্দরবন থেকে রামপাল ১৪ কিলোমিটার দূরে হলেও ক্ষতি নেই।

কমপক্ষে ১০/১২ জন পিএইচডি নানাদেশ ঘুরে কলাম লিখেছে, অন্য অনেকদেশে বনভূমির মধ্যে বিদ্যুতকেন্দ্র করাতেও কোন ক্ষতি হয়নি। পিএইচডিদের চেয়ে একটিভিস্টরা কী বেশী জানে। এইটা সাহিত্য না যে স্কুল পালিয়ে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যাবে। এইটা পরিবেশ বিজ্ঞান, এইটা বুঝতে পরিবেশ বিজ্ঞানী হতে হবে।

একজন অর্থনীতিবিদ প্রায়ই রামপাল মানেই সর্বনাশ বলে বিবৃতি দেন। উনি কয়লার ইঞ্জিন ছাড়া কয়লা চালিত আর কিছু কী দেখেছেন! কিন্তু ১০-১২ জন পরিবেশ বিজ্ঞানের পিএইচডি অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, এমেরিকা, আফ্রিকা ঘুরে দেখেছেন কয়লা থেকে সুন্দর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ঐ বিদ্যুতকেন্দ্রের কার্বন-ডাই-অক্সাইড খেয়ে বনভূমি খুশী মনে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। অর্থনীতিবিদ হয়তো চীনের কয়লা-বিদ্যুতকেন্দ্র দেখেছেন। সেখান থেকেই এই বিভ্রান্তি। চীনারা আসলে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রের কালো ধোয়াকে কালোমেঘে রূপান্তর করে ভারতের কাছে বিক্রি করেছে। ভারতের বৃষ্টির খুব দরকার। সুতরাং চীনের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে রামপালকে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না।

মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি দেশের বৈদ্যুতিক মুক্তি চায়না। এইজন্য তারা কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। হ্যারিকেন জ্বেলে রেখেছে জঙ্গি বাংলা ভাইদের রাতের অন্ধকারের জঙ্গি বৈঠকে হাওয়া দিতে। তারা ঈর্ষান্বিত হয়েছে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাজার বছরের রেকর্ড স্পর্শ করায়। তাই সারাক্ষণ তাদের রামপাল বিরোধিতা। জায়গাটার নাম রহিমইকবাল হলেই কিন্তু বিএনপি চুপ করে যেতো। সাম্প্রদায়িক দলতো তাই তারা রামপাল নামটিকেই সহ্য করতে পারছে না।

রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে গোটা বাংলাদেশে দিন-রাত্রির পার্থক্য করা যাবে না। সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট ধরা পড়বে জঙ্গির ছবি। ফলে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় রামপালের ভূমিকা অপরিসীম।

সুশীল সমাজ এসি চালিয়ে বিবৃতি লেখার বিদ্যুৎ চায়; আবার রামপালের বিরোধিতা করে। সুশীলেরা আওয়ামী লীগের সাফল্য সহ্য করতে পারে না। তাই না বুঝেই রামপালের সমালোচনা করে। অথচ রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এমন চিমনি লাগানো হচ্ছে যে চিমনি সুশীলেরা আগে দেখেনি। ঐ চিমনি কয়লা পোড়ানো ধোয়া প্রায় নেপচুনে পৌঁছে দেবে। ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ টেরই পাবে না যে ঐখানে কয়লা-টয়লা পুড়েছিলো।

ওদিকে সত্যবাদী অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে কয়লা আনা নেয়ায় বনে কিছু রাবিশ পড়বে।

এই মন্তব্যটা করা উনার ঠিক হয়নি। উনি সাহিত্যের ছাত্র। বড়জোর বনভূমি নিয়ে দুটি কবিতা পড়েছেন। উনি কী করে বুঝবেন কয়লা ভর্তি ট্রলার ডুবে সুন্দরবনের খালের পানি আরো বিশুদ্ধ হয়েছে। কয়লা মানেই ময়লা এটা ভাবা ঠিক নয়। এই কয়লা ঠিকমতো পরিচর্যা করলে তা হিরকখন্ড হয়ে ওঠে। কে জানে এভাবে হয়তো সুন্দরবন একদিন হীরার খনিতে পরিণত হবে। আসলে যথাযথ বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবে মানুষ রামপালের এই সম্ভাবনার দিকগুলো বুঝতে পারে না। মাঝখান থেকে সুযোগ নেয় দেশবিরোধী শক্তি।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলেই সেখান থেকে সুন্দরবন নিয়মিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাবে। বিনিময়ে অক্সিজেন দেবে। এতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে অক্সিজেন কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে; যেখানে গিয়ে গণপ্রতিনিধিরা জনসেবা শেষে সেবকদের নিয়ে সন্ধ্যা কাটাতে পারবেন। এতে তাদের জীবন প্রত্যাশা বা গড় আয়ু বাড়বে। এতে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন সহজতর হবে।

রামপাল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে সুন্দরবন আরো ঘন এবং উচ্চ অরণ্যে পরিণত হবে। উঁচু বৃক্ষে কটেজ বানিয়ে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। চাকভাঙ্গা সতেজ মধু খেয়ে তারা মুগ্ধ হবে। পর্যটন শিল্পের এই বিকাশের কথা সুশীলেরা কী ভাবতে পারবে! তারা তো ছুটি পেলেই চলে যায় বিদেশের বনে-বাদাড়ে। দেশ-প্রেম না থাকলে যা হয় আর কী!

বাংলাদেশ পৃথিবীর ১০ টি সম্ভাবনাময় দেশের একটি। এই সম্ভাবনার আলো সুতীব্র করে তুলবে রামপালের বিপুল বিদ্যুৎ।

সুন্দরবন নিয়ে মায়াকান্না দেখলে মনে হয় সুশীলেরা এক একজন টারজান। থাকে তো শহরে; এতোই যদি বনভূমির প্রতি প্রেম থাকে; তারা গিয়ে থাকুক না বনভূমিতে। টেলিভিশনের টকশোতে গিয়ে বনের জন্য কান্নাকাটি করা সহজ; কিন্তু উন্নয়ন করা বড্ড কঠিন।

সুন্দরবনের মধ্যে ট্রলার ডুবে যে পেট্রোল ছড়িয়ে পড়েছে; তাতে সুন্দরবনের কী হয়েছে! কচু হয়েছে! ঐ পেট্রোল গাছের গোড়ায় সুরক্ষা বেস্টনী তৈরি করেছে। এক একটা গাছ এখন গোড়ায় শানবাঁধানো বটবৃক্ষের পর শত শত বছর বাঁচবে। সে সাফল্য কী সুশীলেরা দেখতে পাবে! সুশীলেরা শুধু মন্দ খুঁজে বেড়ায়।

অথচ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এতো সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে যে এক একটা ছোট যন্ত্র কিনতে দুই-তিনজন করে সরকারী কর্মকর্তা বিদেশে যাবে। অবশ্য যন্ত্রের আয়োজক সংস্থার খরচে। ফলে এটাই হতে যাচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কয়লা পোড়ানো শক্তিকেন্দ্র।

জার্মানি-নেদারল্যান্ডসের মত দেশগুলো কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দিকে যাচ্ছে; কারণ ওসব দেশে বাংলাদেশের মতো ১০/১২ জন পরিবেশ বিজ্ঞানের পিএইচডি নাই। এভাবে তো ওরা উন্নয়নে পিছিয়ে পড়বে। অবশ্য ভবিষ্যতে প্রয়োজন বোধে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে কিছু ন্যানো-বিদ্যুৎ সরবরাহের আশা রাখে। এসব সবই সম্ভব; যদি সুশীলদের মুখটা একটু বন্ধ রাখা যায়। কিন্তু সে তো হবার নয়। স্থানে স্থানে রামপাল বিরোধী গুজব ছড়িয়ে ওরা পৌঁছে গিয়েছিলো নাট্যশালায় বাহাস করতে। কী আশ্চর্য ব্যাপার! নাটকের আগে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা কেন! নাট্যশালায় শুধু শিল্পের প্রক্ষালন আর নান্দনিক উল্লম্ফন হবে। ওটা কী পরিবেশ নিয়ে কথা বলার জায়গা। এটা নাট্যশিল্পের আঙ্গিক ও প্রকরণের সঙ্গে খুবই সাংঘর্ষিক।

ওদিকে অরণ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুন্দরবনের যেসব বাঘেরা ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলো; তারা আবার ফিরে এসেছে। সুন্দরবনের পশু-পাখীর জন্য কিছু আলোকোজ্জ্বল বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ হবে পশু-পাখীর জন্য পরিকল্পিত নগরায়ন। কারণ তারা বনে থাকে বলে শহরের অভাব থেকে বঞ্চিত হবে; এটা কী করে হয়!

সুতরাং সবমিলিয়ে রামপাল এক যুগান্তকারী আলোকায়ন প্রকল্প। এতে জাপানের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। কিছুদিন আগে জাপানে মাত্র বিশ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকায় বিদ্যুৎ মন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় বিশ মিনিট ঝুঁকে থেকে ক্ষমা চেয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রীর পক্ষে বর্তমানে এই ঝুঁকি নেয়া সম্ভব নয়। এতে ১২, ২৪ ঘণ্টা থেকে টানা তিনদিন বিদ্যুৎ না থাকায় কোন কোন অঞ্চলে গিয়ে দীর্ঘ সময় ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে। সেটা ঠিক হবে না। তবে রামপাল বিদ্যুৎ দিতে শুরু করলে জাপানের মতো জবাবদিহিতার পথে এগিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত