আরিফ জেবতিক

১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:০৭

রাজাকারের তালিকার গুরুত্বই এরা বুঝেনি

রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ হবে শুনে প্রথমে আশাবাদী হয়েছিলাম। তবে আমাদের দেশের গড় বুদ্ধিমত্তার যে অবস্থা, মানে জনগোষ্ঠীর যে পরিমাণ মানুষের আইকিউ সাধারণ মানের অনেক নিচে, এতে করে এরকম তালিকা করার হিম্মত যে এদের নেই, এটা আমার আসলে আগেই বুঝা উচিত ছিল।

দুঃখের বিষয় হলো, এরা এই তালিকাটার গুরুত্বটাই বুঝে নি। যার কারণে পাকিস্তানি তালিকা নাম দিয়ে পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া কাগজপত্র টুকিয়ে যা পেয়েছে সবগুলো জড় করে নাম প্রকাশ করে ফেলেছে। কোনটা রাজাকারের তালিকা, কোনটা খুন হওয়াদের তালিকা আর কোনটা রেশন কার্ডের তালিকা-এসব পড়ে দেখার মতো সময় এদের নেই।

এখন দেখা যাচ্ছে যে গোলাম আরিফ টিপু কিংবা মনীষার শহীদ পিতামহের বিধবা স্ত্রী এরাও এই তালিকায় ঠাই পেয়েছেন। আরও দুয়েকদিন গেলে এরকম আরও কয়েক শত নাম বেরিয়ে এলে আশ্চর্য হব না।

রাজাকারের তালিকা এমনিতে বেশ কঠিন কাজ। কারণ রাজাকার নামের যে মিলিশিয়া বাহিনী ছিল, এদের তালিকা পাকিস্তানি আর্মির কাছে থাকার কথা। কারণ এরা বাহিনীভুক্ত হিসেবে বেতন ভাতা পেত। আল বদর ছিল জামাতিদের মিলিশিয়া বাহিনী, এদের তালিকাও পাকিস্তানিদের কাছে থাকার কথা।

কিন্তু রাজাকারদের অধিকাংশই ছিল ফুট সোলজার। সাধারণত বর্তমান আনসার বাহিনীর মতোই একটা বাহিনী, যেখানে গরীব শ্রেণির লোকজন দুটো টাকা আর দুটো লুটপাটের সুযোগ পেতে যোগ দিয়েছে। এর বাইরে এলাকার প্রভাবশালী গোষ্ঠী থেকে যে দালাল শ্রেণি ছিল যারা মিলিশিয়া বাহিনীর সৈনিক হিসেবে কাজ করে নি। তারা বরং ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে ব্যবসা করেছে, এর বাড়ির মেয়ের খবর, ওবাড়ির সহায় সম্পত্তির খবর সরবরাহ করেছে। এই দালাল গোষ্ঠীই ছিল সবচাইতে ভয়ংকর। সৈনিক হিসেবে চাকুরি নেয়ার তুলনায় ভালো অবস্থায় ছিল, তাই ক্যাম্প কমান্ডারদের চামচা হিসেবে বেসরকারি ভাবে কাজ করেছে। এদের কোনো তালিকা কোথাও আছে বলে মনে হয় না। যুদ্ধক্ষেত্রে সোর্সদের কোনো তালিকা ওভাবে আদৌ সংরক্ষণ করা হয়েছে কী না আমার জানা নেই, কোথাও শুনিও নি।

আমাদের দরকার ছিল এই লোকগুলোকে চিহ্নিত করা এবং তালিকাভুক্ত করা। যুদ্ধ শেষে এদের অনেককেই স্থানীয় জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু জনমনে এখনও এদের নাম রয়ে গেছে। বাকিদেরকে দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু এই গ্রেপ্তার করা দালালদের মধ্য থেকে বেছে বেছে যারা ভয়ংকর অপরাধ করেছিল তাদের বাদ দিয়ে সাধারণ ছোটখাটো অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করে দেন। এই সাধারণ ক্ষমার তালিকাটা থাকার কথা। আর যাদেরকে ক্ষমা করা হয়নি, তাদের নামে বিচার চলছিল। জিয়াউর রহমান এদেরকে ছেড়ে দেন সম্ভবত ৭৮ সালের দিকে। সুতরাং এই ছাড়া-ধরাদের তালিকাগুলো আমাদের দেশের কারাগারে-কারাগারে নিশ্চয়ই আছে।

আমাদের দরকার ছিল এই তালিকাগুলো সন্নিবেশ করা। এতে করে মোটামুটি সব দেশবিরোধীদের তালিকাটাই ইতিহাসের পাতায় তোলা হয়ে যেত।

কিন্তু এখন যেটা হয়েছে সেটা সুবিধার কিছু হয় নি। একটা ফালতু ক্রেডিট নিতে গিয়ে যাচাই বাছাই ছাড়া একটা তালিকা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এক বালতি গোচনায় দুফোটা সাদা দুধ ভেসে আছে। কিন্তু এই দুফোটা দুধের দোহাই দিয়ে এই বালতি ভরা গোচনার দিকেও সন্দেহের চোখে তাকানোর সুযোগ করে দেয়া হলো।

এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মূর্খতার কোনো ক্ষমা হয় না।

  • আরিফ জেবতিক: ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত