আরিফ জেবতিক

১৪ জুন, ২০২১ ১৮:২৭

মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারকে বিতর্কিত করবেন না

আমি অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় অংশ নিয়েছি। জানাজার সাথে রাষ্ট্রীয় স্যালুটের কোনো সংশ্রবও দেখিনি, সংঘাতও দেখিনি।

জানাজা একটি ধর্মীয় কর্তব্য। ইউএনও কিংবা থানার ওসি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার জানাজা পড়ান না, বরং স্থানীয় আলেম অথবা মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ কোনো যোগ্য আত্মীয় জানাজা পড়ান। জানাজা শেষ হওয়ার পর প্রশাসনের লোকজন গিয়ে জাতীয় পতাকা কফিনের ওপর রাখেন, তারপর থানার পুলিশরা সশ্রদ্ধ স্যালুট দেন। স্যালুটের পর তাঁরা আবার জাতীয় পতাকাটি কফিন থেকে তুলে সুন্দর করে ভাঁজ করে সরে যান। এখানে ধর্মীয় বা সামাজিক কোনো রীতিনীতিতে কোনো সমস্যা হয় না।

আমি একবার দেখেছি যেখানে প্রশাসনের নারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আমার বন্ধু টিপুর শ্বশুর, যিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসার ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর মিরপুরে জানাজায় রীতি অনুযায়ী সরকার থেকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। সেখানে একজন সিভিল প্রশাসনের নারী কর্মকর্তা (ইউএনও কি না আমি জানি না) উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানাজায় অংশও নেননি, প্রশাসনের চেয়ারের গরম দেখিয়ে কোথাও হম্বিতম্বিও করেননি। জানাজা চলাকালীন তিনি একটু দূরত্বে পরিবারের নারী সদস্যদের পাশে সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং পুলিশ বাহিনীর গার্ড অব অনার দেয়ার পরে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন। সেই জানাজায় উপস্থিত প্রায় অর্ধ হাজার মানুষের কেউ তাঁকে ভিন্নভাবে দেখেছে বা অস্বস্তিতে পড়েছে-এরকম আমার মোটেও মনে হয়নি।

সংসদীয় কমিটি নারী ইউএনও'র স্থলে একজন পুরুষ দিয়ে গার্ড অব অনার দেয়ার যে কথা তুলেছেন, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার নিতে না চান, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ইসলাম ধর্মে গার্ড অব অনার দেয়ার কোনো রীতি নেই, যে কারো অধিকার আছে তাঁর নিজ ধর্মের রীতিতে নেই এমন কিছুর সাথে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার। কিন্তু গার্ড অব অনার একটি সুন্দর জিনিস। রাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শেষ যাত্রায় ভালোবেসে, সম্মান জানিয়ে বিদায় জানায়।

এই সুন্দর জিনিসটিকে যাতে কেউ বিতর্কিত না করে, সেটা দেখার দায়িত্ব সবার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত