সৈয়দ জগলুল পাশা

১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৭:৪২

আবুল মাল আবদুল মুহিত: আলোকিত সিলেট এর স্বপ্নচারী

স্কেচ: কুমার অনিক কুন্ডু

আবুল মাল আবদুল মুহিত তৎকালীন ভারতে ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, রবিবার সিলেট শহরের এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু আহমদ আবদুল হাফিজ এডভোকেট এবং মাতার নাম সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী। পিতা-মাতার ১৩ মেধাবী সন্তানের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবস্থান তৃতীয়। পিতা-মাতা আদরে তার ডাক নাম রাখেন -শিশু। শিশুসুলভ সরলতায় ভরা আবুল মাল আবদুল মুহিতের বর্তমান বয়স ৮৬ বৎসর পূর্ণ হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা ও সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা: আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার মাতা সৈয়দা শাহার বানু ও গৃহশিক্ষক এর কাছে। ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিন্ক এর আমলে ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮৫ বছর বয়সের ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ১৯৪২ সালে ভর্তি হন। উক্ত স্কুল হতে ১৯৪৯ সালে প্রথম বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। স্কুল জীবনে তিনি স্কাউটিং ও কাব এর সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন স্কাউট সমাবেশে তিনি অংশ গ্রহণ করতেন। তখন মুকুল ফৌজের সংগঠক হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন।

কলেজ জীবন: এএমএ মুহিত ১৯৫১ সালে সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ ও প্রথম স্থান লাভ করেন। সরকারি মুরারিচাঁদ কলেজটিও (এমসি কলেজ) ছিল তৎকালীন একটি ঐতিহ্যবাহী সুপ্রতিষ্ঠিত কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং তৎকালীন বাংলাদেশের ৭ টি পুরনো কলেজের একটি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: এম এম এ মুহিত ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫১ সালে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে ইংরেজি বিভাগ হতে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। অত:পর এম. এ পরীক্ষায় ১৯৫৫ সালে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি এসএম হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বায়ান্ন এর মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং এর জন্য ২ বার কারাবরণ করেন। ১৯৫৪ সালে একবার সিলেটে এবং পরে ১৯৫৫ সালে ঢাকায়। ছাত্র-জীবনে মেধাবী ছাত্র হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তথা-বক্তৃতা, বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। এছাড়া খেলাধুলায়ও তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

কর্ম-জীবন: এএমএ মুহিত ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে লাহোরস্থ সিভিল সার্ভিস একাডেমি হতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। মহকুমা হাকিম (এসডিও) হিসেবে তার প্রথম কর্মস্থল ছিল বাগেরহাট। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। তাছাড়াও ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অব পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬-১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত: থাকাকালীন ১৯৬৬ সালে তিনি সরকার কর্তৃক তমগা-ই-খেদমত পাকিস্তান খেতাবে ভূষিত হন। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা কমিশন প্রধান ও ডেপুটি সেক্রেটারি থাকাকালীন সময়ে তিনি সাহসিকতার সাথে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার বৈষম্য সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রদান করেন। প্রতিবেদনটি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উপস্থাপিত পূর্ব ও পশ্চিম বৈষম্য প্রসঙ্গে প্রথম প্রতিবেদন এবং উহার সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পরিষদে গৃহীত হয় তবে ইতোমধ্যে আয়ুব খানের পতন হয়ে গেলে তা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ: বিগত ১৯৬৯ সালে এএমএ মুহিত যুক্তরাষ্ট্রস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের ইকনমিক কাউন্সিলর পদে যোগদান করেন। তখন গড়ে উঠে ১৯৬৯ সনের গণ অভ্যুত্থান। ১৯৭০ এর নির্বাচন ও পাকিস্তানীদের বৈরিতা এএমএ মুহিতকে ব্যথিত করে তোলে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন তিনি পাকিস্তান এর পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কলকাতা ও দিল্লিস্থ পাকিস্তানী সরকারি কয়েকজন চাকরিজীবীর পরে বহির্বিশ্বে^ তিনিই প্রথম পাকিস্তানী সিনিয়র কূটনৈতিক যিনি বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তান এর কূটনৈতিক দায়িত্ব ত্যাগ করেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

জীবনের নতুন অধ্যায়: অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভাবনা এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি নিয়ে শুরু হয় তার নূতন যাত্রা। তিনি ১৯৮১ সালে সরকারি চাকুরি হতে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহে কার্যক্রম শুরু করেন। তাছাড়া ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদ এ কাজ করে নন্দিত হন। তিনি ১৯৮২ সালে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ১৯৮৪ সালে তিনি তৎকালীন সরকার থেকে মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো হিসেবে প্রায় দু বছর পড়াশোনা ও শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে মুহিত নিজ এলাকা সিলেটকে ‘আলোকিত সিলেট’ এ রূপায়নের স্বপ্ন নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগদান: এএমএ মুহিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। প্রত্যক্ষভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে জয়ী না হলেও তিনি ’আলোকিত সিলেট’ গড়ার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেকে একজন নিরলস কর্মীতে রূপান্তরিত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ সংসদীয় আসনের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সর্বাধিক সংখ্যক অর্থাৎ মোট ১২টি বাজেট প্রণয়ন করেন।

জাতীয় উন্নয়নের ধারায় এএমএ মুহিত রূপকার হিসেবে বাংলাদেশকে এক নূতন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া বহমান করে গেছেন। ২০০৯ সাল হতে শুরু করে ধারাবাহিক বাজেট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি সর্বশেষ ৪,৬৫,০০০ হাজার কোটি টাকার বাজেট (২০১৮-২০১৯) জাতিকে উপহার দেন। বিগত প্রায় দেড় দশকের অব্যাহত উন্নয়ন ধারায় ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬.০০% হতে ২০১৮-২০১৯ সালে ৮.০১% এ এসে দাঁড়ানো , অন্যান্যের মধ্যে এএমএ মুহিতের এক বড় সফলতা। তার মেয়াদে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিগণিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় আয় এসে দাঁড়িয়েছে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে।

বিগত ১০ বছর অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন এএমএ মুহিত যে সব জাতীয় উদ্যোগের সূচনা করেন বা যেরকম উদ্যোগে বিশেষ অবদান রাখেন সেগুলো হলো: (১) পদ্মা সেতু (২) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট (৩) বড় বড় নগরীতে ফ্লাইওভার (৪) ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ ৪ লেন হাইওয়ের মাধ্যমে নূতন সূচনা (৫) কর্ণফুলি বঙ্গবন্ধু টানেল (৬) মেট্রোরেল প্রকল্প (৭) দেশব্যাপী বৃহদাকার সড়ক ও সেতু সংযোগ, (৮)রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ (৯) জাতীয় বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানকল্পে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন (১০) দেশব্যাপী বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য ’অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বাস্তবায়ন, (১১) পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ (১২) সরকারি-বেসরকারি খাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা অবকাঠামো সম্প্রসারণ (১৩) রেলওয়ে ও নৌ-পথ সম্প্রসারণে প্রকল্প গ্রহণ (১৪)কৃষি খাতের উন্নয়ন (১৫) জ্বালানি নিরাপত্তামূলক প্রকল্প গ্রহণ (১৬) প্রবাসী কল্যাণ ও রেমিটেন্স উন্নয়ন (১৭) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ (১৮) সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি বিস্তৃত করণ, এবং (১৯) মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানজনক ভাতা-বৃদ্ধি ইত্যাদি।

সিলেটের উন্নয়ন: এ এম এ মুহিত আলোকিত সিলেটকে রূপায়নের প্রক্রিয়ায় সিলেট শহরকে ডিজিটাল, আধুনিক, পর্যটন ও প্রবাসী বান্ধব নগরী গড়ার জন্যে অর্থায়নসহ পরিশ্রম করে গেছেন। ঢাকা-সিলেট সড়ক ৪ লেন প্রকল্প গ্রহণ, শেরপুরে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, শ্রীমঙ্গলে চা-নিলাম কেন্দ্র স্থাপন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উপযোগিকরণ, সিলেট কেন্দ্রীয় জেল নূতন জায়গায় স্থানান্তর, সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি প্রকল্প গ্রহণ তার বিশেষ অবদান। সিলেট শহরকে উন্নত নগরীতে রূপায়নের জন্য তিনি দল-মত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্টদের সাথে কাজ করে চলেছেন।

সংস্কৃতি ও সাহিত্য: আগাগোড়া সংস্কৃতিমনা এক মানুষ জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত । বাংলা একাডেমির ফেলো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সিলেটের মরমী কবি হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, সৈয়দ শাহনূর ও শাহ আব্দুল করিম এর তিনি ভক্ত। সম্প্রতি আয়োজক কমিটির প্রধানরূপে সিলেটে আয়োজন করেছিলেন ’কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিলেট আগমনের শতবার্ষিকী। তার সমূদয় রচনাবলী বেরিয়েছে দশটি বৃহৎখণ্ডে। যন্ত্রস্থ রয়েছে আরও লেখা-লেখি। তার স্বতন্ত্র প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৫ টি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : (১) Bangladesh, Emergence of a Nation (১৯৭৮) (২) Thoughts on Development Administration (১৯৮১) (৩) American Response to Bangladesh Liberation War (১৯৯৬) (৪) Bangladesh in the 2nd Century; Towards an Industrial Society (১৯৯৯) (৫) Issues of Governance in Bangladesh (২০০১) (৬) Language Movement in East Bengal 1947-1956 (২০০৬) (৭) History of Bangladesh: A sub Continental Civilization (২০১৬)। এএমএ মুহিতের লাইব্রেরি বর্তমানে অন্যতম বৃহৎ ব্যক্তিগত লাইব্রেরি।

সামাজিক কার্যক্রম: এ এম এ মুহিত সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন ও রয়েছেন। ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ার হিসেবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে কাজ করেছেন। চাকুরিকাল থেকে অবসর নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রীতির বন্ধন বৃদ্ধিকল্পে ভারতে অবস্থিত সর্বভারতীয় শ্রীহট্ট সম্মিলনী ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা, প্রধান অতিথি হিসেবে তাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বিভিন্ন সম্মেলনে। এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই সহ অনেক সংগঠনের সাথে আজও নিবিড় ভাবে কাজ করে চলেছেন।

পুরস্কার: এ এম এ মুহিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। জালালাবাদ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে তাঁকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেছেন।

পারিবারিক বলয়: এএমএ মুহিতের পিতা এডভোকেট আবদুল হাফিজ সিলেটে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কর্ণধার ছিলেন। দীর্ঘ কাল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন নির্মোহ জননেতা এবং নীরব কর্মবীর। সিলেটকে গণভোটে পাকিস্তানভুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার দাদা খান বাহাদুর আব্দুর রহিম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আসাম ও সিলেট অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন। তিনি মহকুমা প্রশাসক হিসাবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। এএমএ মুহিতের মাতা সৈয়দা শাহার বানু শিক্ষানুরাগী সমাজকর্মী ছিলেন। মুহিতের সবচেয়ে বড়ভাই প্রয়াত এএএ মুহসি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ডীন ছিলেন। তার ছোটভাই একে আবদুল মুবিন সাবেক সচিব ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি। অনুজ এএসএ মুইজ বীমাবিদ, ফুয়াদ প্রবাসী ব্যাংকার, ছোটবোন ডাঃ শাহলা খাতুন জাতীয় অধ্যাপিকা, ছোটবোন শিপা হাফিজা ও রিও আজিজা সমাজকর্মী। তার বড় বোন সকলের আদরের আধার হয়ে ৯০ বছর বয়সে বেঁচে আছেন। সর্বোপরি তার ছোটভাই ড. একে আবদুল মোমেন এমপি-আলোকিত সিলেট রূপায়নের বহমান ধারার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুহিতের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড়মেয়ে সামিনা মুহিত আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, বড় ছেলে শাহেদ মুহিত স্থপতি এবং ছোট ছেলে বিদেশে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। মুহিতের সহধর্মিণী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার।

কর্মিষ্ঠ ও স্বপ্নচারী পুরুষ: এএমএ মুহিত চাকুরি ও মন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নিলেও নিরলস কাজ করে চলেছেন। মূলত পড়াশুনা ও লেখালেখির কাজে। উত্তর প্রজন্মের মানুষের আবদারে ব্যস্ত রয়েছেন-সভা-সমিতি ও ইতিহাস চর্চায়। ক্লান্তিহীন জীবন আমাদের দিয়েছে অনেক। স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় সাথী হয়ে আমরা তার কাছে আরও ঋণী হয়ে থাকতে চাই।

ভাষাসৈনিক সম্মাননা ২০২০ স্মারকগ্রন্থ ‘শব্দগান রক্তমিতা’য় প্রকাশিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত