২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ ১২:২৮
ইস্ট লন্ডনের আলতাফ আলী পার্ক। যার পাশ থেকে হেঁটে যাওয়ার সময়ে বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন আপনি। মনের অজান্তেই গর্ববোধ হবে, কারণ আপনি একজন বাঙালি। আপনি গর্বিত মনে ভাববেন, আপনার আছে বাংলা ভাষা, বর্ণমালা আর সংস্কৃতি। আর এই বিস্ময় ও গর্ববোধের পেছনে মূল কারণ আলতাব আলী পার্কের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা বাঙালীর গর্বের শহিদ মিনার।
বাঙালির বাংলা ভাষার গর্বের শহিদ মিনার আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাণকেন্দ্রে। যার ব্যতিক্রম নয় ব্রিটেন। দেশের বাইরে এই বিলেতে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওল্ডহ্যাম, লন্ডন, লুটন, বার্মিংহাম, কার্ডিফে নির্মাণ করা হয়েছে ৫টি স্থায়ী শহিদ মিনার। এছাড়াও বিভিন্ন শহরে ভাষা দিবস উপলক্ষে নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী শহিদ মিনার।
জীবিকার সন্ধানে ৭০ থেকে ৮০ বছর আগে এই ব্রিটেনে বাঙালিদের আগমন। আর তাই এতো বছরে বাংলাদেশিরা এখানে তৈরি করেছে বৃহৎ সুসংহত কমিউনিটি। বাঙালিদের অর্জন এখন মূলধারায় স্বীকৃত। ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা যেভাবে মূলধারার সাথে মিশে যাচ্ছে, তেমনি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতিসত্তা। এখানে জন্ম নেয়া, বেড়ে উঠা সফল বাংলাদেশিরা বাঙালি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে এখন আর মূলধারায় কুণ্ঠাবোধ করে না। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা চতুর্থ প্রজন্ম বুঝতে শিখেছে তাদের সর্বশেষ পরিচয় তারা বাঙালি।
তাইতো ব্রিটেনে এখন বাংলা পঞ্চম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করতে হয় আগে যেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আলতাব আলী পার্ক বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুক্তরাজ্য শাখার দখলে থাকতো এখন সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে বড় হয়ে আসা প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের হাত ধরে চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের উপস্থিতি দেখা যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। ম্যানচেস্টারের ওল্ডহ্যামে স্থাপিত হওয়া প্রথম শহিদ মিনার থেকে শুরু করে ব্রিটেনের ৫টি স্থায়ী শহিদ মিনার গৌরবান্বিত হয় মানুষের ভালোবাসায়... ফুলে ফুলে ভরে উঠে শহিদবেদী। ব্রিটেনের ৫টি স্থায়ী শহিদ মিনার ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দেশের বাইরে প্রথম স্থায়ী শহিদ মিনার ম্যানচেস্টারের ওল্ডহ্যামে
এক সময় লন্ডনের ইষ্ট-এন্ড, ওল্ডহ্যাম, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ব্রিস্টল, প্রভৃতি এলাকার মানুষ অগ্নিমশালে আলোকিত আর প্রজ্বলিত হয়ে জমায়েত হতো বিভিন্ন বাংলাদেশি সেন্টার কিংবা কমিউনিটি সেন্টারে। তৈরি করতো কাপড়ে ঢাকা কাঠের শহিদ মিনার। অস্থায়ী সেইসব শহিদ মিনারে ব্রিটেনের বাঙালিরা অর্পণ করতো তাদের হৃদয় নিংড়ানো অর্ঘ্য। উৎসর্গ করতো একুশের কবিতা।