সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ মার্চ, ২০১৬ ১৭:১৯

পরকীয়া না ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই সন্তানকে হত্যা?

দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন উচ্চশিক্ষিত মা। এটা নিয়ে তিনি হতাশায় ভুগতেন। সেই হতাশা থেকেই রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে দুই সন্তানকে তাদের মা হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

তবে প্রথমে র‌্যাবের খুদে বার্তায় এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে মায়ের পরকীয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব এ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায়।

দুই সন্তানের হত্যাকাণ্ড মা-ই ঘটিয়েছেন এটা আগেই জানিয়েছিল র‌্যাব। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে র‌্যাব হেড কোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘মা মাহফুজা মালেক ম্যানজেমেন্টে মাস্টার্স করেছেন। এ ছাড়া তিনি দুই বছর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষাকতাও করেন। তিনি উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় ছেলে মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন। এরই প্রেক্ষাপটে গত ২৯ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচায় তাদের গৃহশিক্ষক চলে যাওয়ার পর নিজের বেডরুমে দু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মাহফুজা।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সাড়ে পাঁচটার সময় বনশ্রী এলাকায় নুসরাত আমান অরনী এবং আলভী আমান নামে দুই ভাই-বোনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাদের বাবা আমানউল্লাহ একজন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী এবং মা বেগম মাহফুজা মালেক গৃহিনী। তারা গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বনশ্রী, রামপুরা, ব্লক-বি, রোড নম্বর-৪, বাসা নম্বর- ৯ এ অবস্থান করে আসছেন। নুসরাত আমান অরনী ভিকারুন্নেছা নুন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই আলভি আমান হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারিতে অধ্যয়নরত ছিল।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিকভাবে মা বেগম মাহফুজা মালেকের ভাষ্যমতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। পিতা-মাতার ১৪তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন ছিল। এই উপলক্ষে পরিবারের সবাই ২৮ ফেব্রুয়ারি বনশ্রীর ক্যান্ট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যায় এবং অবশিষ্ট খাবার সঙ্গে করে নিয়ে বাসায় আসেন। এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি  অরনী এবং আলভী দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর রাতে রেস্টুরেন্ট হতে আনা অবশিষ্ট খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। ওই দিন বিকালে তাদের মা ডাকাডাকির পর শিশু দুটি ঘুম থেকে না উঠায় পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দাবি করেন, রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়াজনিত কারণে তার সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুইটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বনশ্রীর আল রাজী হাসপাতালে নিয়ে যান নিহতদের বাবার বন্ধুরা। আল রাজী হাসপাতাল হতে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু দুইটিকে মৃত ঘোষণা করেন। অপমৃত্যুর কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত দেহ দুইটি ময়না তদন্ত করার জন্য পাঠান।

র‌্যাবের এ পরিচালক আরও বলেন, গত মঙ্গলবার শিশু দুটির লাশসহ পিতা-মাতা তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের উদ্দেশে রওনা হন। পরে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শিশু দুটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে র‌্যাব ৩  রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটনের জন্য শিশু দুইটির গৃহশিক্ষিকা শিউলি আক্তার, খালু নজরুল ইসলামের ভাগনে শাহিন, মেয়ের মায়ের মামাতো ভাই মো. ওবায়দুর ইসলাম, বাসার দারোয়ান পিন্টু মন্ডল ও অপর দারোয়ান ফেরদৌসকে (২৮) জিজ্ঞাবাদের জন্য আনা হয়।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জামালপুর থেকে মৃত শিশুদের পিতা-মাতা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানা যায় যে, মৃত শিশু দুইটির মা বেগম মাহফুজা মালেক সর্বদা তার সন্তানদের স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাযুক্ত থাকতেন। বেগম মাহফুজার ধারণা ছিল, তার সন্তানেরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গৃহশিক্ষিকা চলে যাবার পর অরনী তার বাবা-মায়ের বেড রুমে বিকাল পাঁচটার দিকে ঘুমাতে যায়। তখন বাসায় বৃদ্ধা দাদী, দুই ভাই-বোন ও মা মাহফুজা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে আলভি আমান বেডরুমের বিছানাতেই ঘুমাচ্ছিল। মা মাহফুজাও ছেলের সঙ্গে একই বিছানায় শুয়েছিলেন। অরনী মায়ের সঙ্গে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোয়ার কিছু সময় পর মা মাহফুজা তার মেয়ে অরনীকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে উভয়েই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়। কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভিকে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় একইভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি লাশ দুইটির সামনে কিছু সময় ধরে কান্নাকাটি করেন।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রথমে ফোন করে তার স্বামীকে ছেলে-মেয়ে কেমন যেন করছে বলে অবহিত করেন। পরে স্বামীর বাসায় ফিরতে দেরি হবে জেনে তার মা ও নিজ বোন মিলাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তিনি তাদের বলেন যে, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর তার সন্তানরা আর ঘুম থেকে উঠেনি এবং তিনি পূর্বের দিন রাতে আনা খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে সবাইকে অবহিত করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত