আলিম আল রাজি

০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৬:২২

ফোনবুকের ‘ওরা কারা’ গ্রুপের সেই ১ ভাগ!

ফোনবুকে সেইভ করে রাখা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ নাম্বারই 'সুস্থ এবং স্বাভাবিক'। এদেরকে ফোন করলে পাওয়া যায়, এরাও মাঝে মাঝে ফোন দেয়। সুন্দর করে কথা বলে। এরা খায়, দায়, ঘুমায়, বিয়ে করে।

বাকি থাকে ২০/২৫ ভাগ। এরা হচ্ছে অদ্ভুত, অদ্ভুত এবং অদ্ভুত!

এই অদ্ভুতদেরকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়।

৫% পড়েন 'আমি তাঁরে খুঁজে মরি, পাই নে তবু নাগাল' ক্যাটাগরিতে।

এদের মোটামুটি ১৩/১৪ টা নাম্বার থাকে। আমাদের ফোনে এই প্রজাতির নাম্বার সেইভ করা থাকে এভাবে - সাইফুল ১, সাইফুল ২, সাইফুল ৩, সাইফুল নিউ, সাইফুল আম্মা, সাইফুল বাসা, সাইফুল টিএনটি ইত্যাদি নামে।

এরা আপনাকে একেকদিন একেক নাম্বার থেকে ফোন দিবে। সুখ-দুঃখের আলাপ করবে।

কিন্তু... কিন্তু... কিন্তু... আপনার যখন দরকার তখন বিশ্ব সংসার তন্ন-তন্ন করেও এদেরকে আর খুঁজে পাবেন না। 'সাইফুল ১, ২, ৩' থাকে বন্ধ।

'সাইফুল আম্মা' থাকে আনরিচেবল।

'সাইফুল টিএনটি'তে ফোন দিলে কর্কশ গলা কেউ একজন বলে উঠে - 'না ভাই, এখানে তো সাইফুল নামের কেউ নাই! আপনি কে বলছেন বলেন তো?'

৪% আছেন 'একটুকু ছোঁয়া লাগে একটুকু কথা শুনি' এই ক্যাটাগরিতে।

এদের ফোন খোলা থাকে, ফোন দিলে রিসিভও করে। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় ফোন ধরার পরে। প্রথম ২০ সেকেন্ড ভালো মতো কথা শোনা যায়। তারপরই শুরু হয় যন্ত্রণা। কারণ এদের নেটওয়ার্ক আস্তে আস্তে 'নাই' হয়ে যেতে থাকে এবং আপনি তাদের কথা শুনতে পান এইভাবে - 'জি ভাই, ঐ যে গররর... বিয়ে... গুররর... খাবো... আমেরিকা... বররর... আফ্রিকা... এন্টেনিয়ো গুতেরেস... গ্রুউউ'।

আপনার বিরক্তি চরম পর্যায়ে পৌছাতে থাকে, এপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো বলতে থাকেন।

শুনে ওপাশ থেকে আপনাকে আশ্বস্ত করা হয়, 'একটু ওয়েট করেন ভাই। বারান্দায় গিয়ে কথা বলছি।'

ওপাশের লোকটি বারান্দায় যান। কথা আরও অস্পষ্ট হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে ফোন কেটে যায়।

৩% পড়েন 'তুমি তো সেই যাবেই চলে' ক্যাটাগরিতে।

এরা আপনাকে ফোন দেয়। কথাও ক্লিয়ারলি শোনা যায়। তাদের গলায় আন্তরিকতারও কোনও কমতি থাকে না।

সমস্যা হয় ১৯ সেকেন্ড পরে। এদের ব্যালেন্স চলে যায় এবং লাইনটা কেটে যায়। তারপর কলটা আপনাকেই ব্যাক করতে হয়। কল ধরে এরা হাসি দিয়ে বলে, 'স্যরি ভাই, ব্যালেন্স শেষ'।

তারপর শুরু হয় তাদের প্যাঁচাল। প্যাঁচাল চলতেই থাকে... চলতেই থাকে... এবং চলতেই থাকে।

তিন মাস পরে এরা আবার কল দেয় আবার উনিশ সেকেন্ডস পরে কলটা কেটে যায়।

৬% পড়েন 'আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত' ক্যাটাগরিতে।

এরা জীবনেও আপনাকে ফোন দিবেনা। দিবে তখন, যখন আপনি পাবলিক বাসে এক হাত দিয়ে ঝুলছেন অথবা আপনি ব্যাংকের লাইনে ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত আছেন অথবা আপনি বসের সাথে জরুরী মিটিং করছেন অথবা আপনি আপনার নতুন উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্স অংশ লিখছেন অথবা গাইনি ওয়ার্ডে দু-হাত পেতে বাচ্চাকে ক্যাচ ধরার জন্য বসে আছেন।

ফোন দিয়েই এরা আয়েশি ভঙ্গিতে বলা শুরু করবে - কী ভাই? কী অবস্থা? আজকাল কেমন যাচ্ছে সবকিছু? শরীর টরীর ভালো? ভাবির কী অবস্থা? ও! আপনি তো বিয়েই করেন নাই! তা বিয়ে শাদী করেন মিয়া। দেখমু নাকি পাত্রী? কেমন পাত্রী আপনার পছন্দ বলেন দেখি... আরে বলেন বলেন... লজ্জার কী আছে?

আপনি যতোই জোরাজুরি করে ফোন রাখতে চাইবেন এরা আপনাকে ঠিক ততটাই শক্ত করে ধরে বসে থাকবে!

২% আছেন 'কেবলই ভুল হয়ে যায়' ক্যাটাগরিতে।

এরা আপনাকে ৬ মাসে একবার ফোন দিবে। ফোন দিয়ে খুব ব্যস্ত গলায় বলবে, 'কে? হাবিব না?'।

আপনি উত্তরে বলবেন, 'না আমি কামরুল।'

তারপর এরা উত্তর দিবে, 'আরে কামরুল ভাই, কী অবস্থা? আপনার আমি নাম্বার "হাবিব" লিখে সেইভ করলাম কেন বুঝলাম না। আচ্ছা যাই হোক, কী অবস্থা বলেন?'

কথা বার্তা শেষ করে এরা ফোন রেখে দেয়।

ঠিক ৬ মাস পর এরা আবার ফোন দেয় এবং ফোন দিয়েই বলে - 'কে? হাবিব না?'

১% আছেন 'ওরা কারা' গ্রুপে।

ফোনবুকে এদের নাম সেইভ করা থাকে এভাবে Ikr অথবা IUz অথবা Zax অথবা Utq.

অবসর সময়ে আপনি যখন নিজের ফোনবুক চেক করতে যান তখন চোখ বড় বড় করে ভাবেন - এরা আবার কারা!? এদের পরিচয় কী!? এদের নাম কীভাবে কবে সেইভ হলো!? এরা কোত্থেকে আসলো!?

এদের কন্টাক্ট কাটতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত কাটা হয় না। কেমন যেনো এক ধরণের মায়া কাজ করে। এদের পরিচয়ও আর জানা যায়না কোনোদিন।

  • আলিম আল রাজি: চিকিৎসক, রম্যলেখক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত