সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ নভেম্বর, ২০২১ ২০:২৩

সাঈদীর পর আজহারীও যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ

সর্বশেষ আইনি লড়াইয়েও হেরে গেলেন বাংলাদেশের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) লন্ডনের হাই কোর্টে কুইন বেঞ্চ ডিভিশনে মিজানুর রহমান আজহারীর ব্রিটেনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা মামলার জুডিশিয়াল রিভিউর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারক জাস্টিন থ্রোনটন শুনানি শেষে, আজহারীর ভিসা বাতিলের পক্ষে রায় দেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, Authority to carry Scheme 2021 এর 14,e অনুযায়ী আজহারীর করা আবেদনটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

আজহারীর যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ভিসা বাতিল নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অক্টোবর থেকেই আলোচিত বিষয় ছিল। সর্বশেষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এম পি বব ব্ল্যাকম্যান, আজহারীর যুক্তরাজ্য  সফরের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বক্তব্য রাখায় বিষয়টি আরও বেশী গুরুত্ব পায়।

বব ব্ল্যাকম্যান সংসদে দেয়া তার বক্তব্যে বলেন, আজহারীর বক্তব্যে ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটি বৃহৎ অংশ বিভ্রান্ত হতে পারে, সমাজে ঘৃণা ছড়াতে পারে, তাই তাকে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে না দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।

পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে বব বলেন, বাংলাদেশের ঘৃণা ছড়ানো ইসলামিক বক্তা মাওলানা আজহারীকে লন্ডনে রয়েল রিজেন্সী হলে ইসলামী কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো, সে যুক্তরাজ্যে আসার জন্য কাতারে এসে আটকে আছে। এরকম ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তি, যে হিন্দু ও ইহুদী ধর্মের প্রতি ঘৃণা ছড়ায় তাকে ব্রিটেনে ঢুকতে দেয়া ঠিক হবেনা। মিজানুর রহমান আজহারী ব্রিটেনে ঢুকলে তার বক্তব্যের মাধ্যমে এখানকার শান্তি প্রিয় বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী ভুল তথ্য পেয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। এমনকি সে অনলাইনেও এধরণের ঘৃণা ছড়াতে পারে।

ব্ল্যাকম্যান সংসদে মিজানুর রহমানের ভিসা বাতিল বহালের আলোচনার জন্য হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেলের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।

ব্ল্যাকম্যানের এই বক্তব্যের পর সংসদ নেতা স্যার জ্যাকব রিস বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, এই দেশে ঘৃণা ছড়ানো একটি  মারাত্মক অপরাধ। ঘৃণা ছড়ায় এমন কাউকে আমরা এই দেশে প্রবেশ করতে দিতে পারিনা। ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে আমাদের একটি অবস্থান রয়েছে সেটার ভিত্তিতে হোম সেক্রেটারির কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

অন্যদিকে আজহারীকে ব্রিটেনে নিয়ে আসতে আয়োজক, আতাউল্লাহ ফারুক একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন। মিজানুর রহমান আজহারী নিজে ও তার ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটি বক্তব্য প্রচার করে পিটিশনে তার পক্ষে স্বাক্ষর  দেয়ার অনুরোধ জানান,  সর্বশেষ সেখানে প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ স্বাক্ষর প্রদান করেন। তবে এতো কিছু করে ও শেষ রক্ষা হয়নি আজহারীর। গত  ৩১ অক্টোবর একটি ইসলামী কনফারেন্সে  যোগ দিতে মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন মিজানুর রহমান আজহারী। কিন্তু লন্ডনে  আসার পথে  কাতারে ট্রানজিটে  আটকা পড়েন, মিজানুর রহমান আজহারী। কাতারের ইমিগ্রেশন থেকে আজহারীকে লন্ডনের বিমানে উঠতে দেয়া হয়নি। দুইদিন দেন দরবারের পরে, ব্রিটিশ সরকার তার ভিসা বাতিল করে দেয়। বাতিল করা ভিসা  বহালের জন্য লন্ডনে  আজহারীর পক্ষে  আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন আয়োজকগণ। যদিও ব্রিটেনে যে অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান আজহারী উপস্থিত থাকার কথা সেই অনুষ্ঠান আয়োজক আইওন টিভি, অনুষ্ঠানটি স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এই ব্যাপারে  হোম অফিসের মিডিয়া এন্ড প্রেস অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়ে কোন তথ্য  দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। মিজানুর রহমান আজহারীর বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছে আরও অনেকেই জানতে  চেয়েছে। কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকায় তার কোন তথ্য দেয়নি। আমন্ত্রণকারীদের পক্ষ থেকেও কোন ধরণের স্বচ্ছ ধারণা না দেয়াতে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা চলছিল।

লন্ডনের  আয়োজকগণ আইনি ভাবে আজহারীর যুক্তরাজ্য সফর নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন এবং জরুরী জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করেছিলেন। ভার্চুয়াল আদালতে এই রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়। বিচারক ব্রিটেন প্রবেশে আজহারির উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন।

১৮ নভেম্বর হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে, আই ওন টিভির সিইও  আতাউল্লাহ  ফারুক কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি বলেন, যেহেতু আইনি বিষয়, আমার আইনজীবীর নিষেধ আছে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে।

 গত ৩১ অক্টোবর রোববার থেকে লন্ডনসহ ব্রিটেনের ৬টি শহরে ইসলামী বক্তব্যের আয়োজন করা হয় ব্রিটেনের আইওন টিভির পক্ষ থেকে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সারা ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে ১৫ পাউন্ড থেকে ১০০ পাউন্ডের মূল্যের ১২ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছিলো।

মিজানুর রহমান আজহারীর যুক্তরাজ্যে সফরের সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকেই আয়োজক আইওন টিভির ব্যানারে আজহারীর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে অনেকেই আজহারীর সফরের বিরোধিতা করে আসছিলেন।

উল্লেখ্য এর আগে ২০০৬ সালে,  যুক্তরাজ্যে তৎকালীন ৪ দলীয় জোটের সরকারের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায়, বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ও যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির প্রশাসন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত