জুয়েল রাজ, লন্ডন

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ২৩:২৯

ব্রিটেনে প্রথম বাংলায় লেখা রেল স্টেশন

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনটি নতুন করে নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে। এখান থেকেই সংযুক্ত হবে ক্রস রেল। হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে প্রতিদিন হাজার হাজার ভিন্ন ভাষাভাষীর ও জাতিসত্তার মানুষ চলাচল করে থাকেন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত সেই স্টেশনটি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা হরফে স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে রেল কতৃপক্ষ।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নবাব উদ্দিন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান। নবাব উদ্দিন বলেন, এটি কমিউনিটির জন্য বড় অর্জন। এই বাংলা লেখা পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দেয়।

স্টেশনে বাংলায় নাম লেখার আবেরদন জানিয়েছিলেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি আব্তুল কাইয়ুম চৌধুরী।

তার আবেদন গৃহিত হওয়ার সিদ্ধান্তের চিঠি পেয়ে আবেগাপ্লুত আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ভাষার মাসে অসাধারণ এক ঘোষণা এসেছে। এটিই হবে ব্রিটেনের প্রথম কোন স্টেশন যেখানে বাংলায় স্টেশনের নাম থাকবে। অনেক আগে থেকে ভারতীয় অধ্যুষিত সাউথহল স্টেশনে হিন্দিতে স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে। যা দেখে আমার মনে হতে থাকে কেনো আমার বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় স্টেশনের নাম বাংলায় থাকবে না।

আমি চিঠি লিখেছিলাম, তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাকে জানিয়েছে।

স্টেশনটি  বাংলায় নামকরণের জন্য ব্রিটেনে প্রাচীন সাপ্তাহিক পত্রিকা জনমতও একটি ক্যাম্পেইন করেছিলো। সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসনের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। এই প্রথম একটি স্টেশনের নাম লেখা থাকবে বাংলা। এই বর্ণ যারা পড়তে পারেন না, তাদের কাছেও এই ভাষার শক্তি ও সামর্থের কথা পৌঁছে যাবে। নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হবে বাংলা ভাষার প্রতি।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অর্থায়নে এই নাম লেখা হবে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েই ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন এই অনুমোদন দিয়েছে। মেয়র জন বিগস এই শর্ত মেনে নিয়েছেন বলেই সিদ্ধান্তটি আলোর মুখ দেখলো।

উল্লেখ্য, হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নাম বাংলায় লেখার জন্য নানা পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় দাবি উঠে আসছিল । গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শ্যাডওয়েলের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী একটি চিঠি লিখেন লন্ডন মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র, স্থানীয় এমপিসহ ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডনকে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডনের একজন মুখপাত্র জেরী হোয়াইট একটি চিঠি লিখে জানান, আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর লেখা চিঠিসহ আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে একই দাবি উত্থাপিত হওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। তারা সকল পর্যায়ের কাজ শেষ করে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই হোয়াইট  চ্যাপেলেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গৌরবের শহীদ মিনার। পাশেই বাংলাদেশিদের আদি ঠিকানা ব্রিকলেনসহ ইস্ট লন্ডন মসজিদ, ব্রিকলেন মসজিদ, আশেপাশের বেশীরভাগ দোকানের নামও বাংলা হরফে লেখা। সেই গৌরবগাঁথার সাথে আরেকটি ইতিহাসের জন্ম হলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত