সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ আগস্ট, ২০২৩ ০২:৪৬

এমসিএ’র উদ্যোগে কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ডস সিরিমনি ও গালা ডিনার

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং সুসম্পর্ক স্থাপন করে মানবিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন গুণী ব্যক্তিদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করতে ব্রিটেনের বৃহৎ মুসলিম কমিউনিটি সংগঠন ‘মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ)’র উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য অ্যাওয়ার্ড’স সিরিমনি ও গালা ডিনার সম্পন্ন হয়েছে।

ভিন্ন ধর্মের মানুষ হয়েও যারা মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় নিজেদের অবস্থান থেকে ছিলেন সোচ্চার, তারা মূলত মানবিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকারকে উচ্চাসনে রেখে একে-অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও গতিশীল সমাজগঠনের জন্য এক অনুকরণীয় অবদান রেখেছেন।

এমসিএ এমন মহান ব্যক্তিত্বদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড’স প্রদান করতে সম্প্রতি লন্ডন মুসলিম সেন্টারে আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, কাউন্সিলর, সাংবাদিকসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, এমসিএ ভিন্নধর্মের গুণী ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিত্বদের পুরস্কৃত করে যে সম্মান প্রদর্শন করেছে সেটা ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি অনুপম ও সম্মানজনক দৃষ্টান্ত। ইসলাম যে তাঁর অনুসারীদের শুধু পরধর্মের প্রতি সম্মানের শিক্ষা প্রদান করে না, বরং সাথে সাথে ইসলাম তাঁর আলোতে আলোকিত অনুসারীদের সাম্য, সম্প্রীতি, সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ এবং মানবিক মর্যাদা সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার শিক্ষা প্রদানেও যে বড় উদাহরণ সেটাই এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানর মাধ্যমে প্রতিফলিত হল।

অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তাগণ অ্যাওয়ার্ডস প্রাপ্তদের সমাজের সত্যিকারের হিরো হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তারা ভিন্ন ধর্মকে শুধু সম্মানিতই করেননি বরং মৌলিক মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গঠনে অনন্য অবদান রেখেছেন। তারা তাদের প্রতিটি কাজে ইসলামের প্রতি ও এর অনুসারীদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় ছিলেন এক একজন দিকপাল। এমসিএ’র এই সম্মাননা মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার মানুষ গুলোকে আর বেশি মানবিক কাজে উৎসাহিত করবে।

অ্যাওয়ার্ডস ও গালা ডিনার অনুষ্ঠানে লন্ডন ছাড়াও যুক্তরাজ্যর বিভিন্ন সিটি থেকে আমন্ত্রিত প্রায় পাঁচশত বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০টি অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করা হয়। কমিউনিটি কোহেশন বা সামাজিক সম্প্রীতি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ইস্ট লন্ডন সেন্ট্রাল সিনাগগের প্রেসিডেন্ট লিওন সিলভার এবং রানার্স আপ হিসাবে নির্বাচিত হন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট এজেন্সির সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক ডেনিস হস, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন কমিউনিটির সেভ দ্য চিলড্রেন, চিলড্রেন সোসাইটি ও সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস-এবং ‘সিটিজেন ইউকে’ র প্রতিষ্ঠাতা নীল জেমসন এবং রানার্স আপ হন পপলার ও লাইমহাউস একশন ফর হাউজিং এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিস্টার ক্রিস্টিন ফ্রস্ট এমবিই, শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন জার্নালিস্ট পিটার ওবন্র্ ওবিই এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন কেটর্স একাডেমির প্রিন্সিপাল জন কেটি মার্শাল, কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার বিভাগে বিজয়ী হন নরউইস সিটি কাউন্সিলের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নিবেদিত সমাজকর্মী ভগান থমাস এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন সেন্ট জন্স বেথনালগ্রিনের রেভারেন্ড প্রিবেন্ডারি অ্যালান গ্রিন, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সাম্য ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ব্রিটিশ পলিটিশিয়ান, ব্যারিস্টার এন্ড হিউম্যান রাইটার্স অ্যাক্টিভিস্ট ব্যারনেস শামি চক্রবর্তী সিবিই এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন ব্রিটিশ পলিটিশিয়ান, ইন্টেলিজেন্স এন্ড সিকিউরিটি কমিটি অফ পার্লামেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্রিটেনের সাবেক এটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভ, কেসি, এমপি।

ইমাম আবদুর রহমান এবং ইমাম মুজ্জামিল আহমেদ-এর কণ্ঠে অর্থসহ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন টিভি উপস্থাপক সুলতান আহমেদ।

মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও শিক্ষাবিদ মাওলানা মুসলেহ ফারাদি’র স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য রোশনারা আলী এমপি, আফসানা বেগম এমপি, টাওয়ার হ্যামলেটেস এর নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের পক্ষে ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মায়ূম তালুকদার, মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল জারা মোহাম্মদ (এমসিবি), সাবেক সেক্রেটারি ডা. সুজা সাফি, ইসলাম চ্যানেলের সিইও মুহাম্মদ আলী, নরউইচ কাউন্সিলের লিডার মাইক স্টোনার্ড, ইউকে ইসলামিক মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ আরিফ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.হাসনাত হোসেন এমবিই প্রমুখ বক্তব্য দেন।

স্বাগত বক্তব্যের পর এমসিএ’র কর্মকাণ্ডের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত গুণী ব্যক্তিদের মাঝে মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড (এমসিএ) প্রদান করা হয়।

অ্যাওয়ার্ড প্রদানের পূর্বে চার সদস্য বিশিষ্ট বিচারক প্যানেলের চেয়ার, মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট অফ হাইয়ার এডুকেশনের রেক্টর ড. জাহিদ পারভেজ ও তার টিমের পরিচিতির পর বিচারক প্যানেলের চেয়ার ড. জাহিদ পারভেজ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

অতঃপর অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকারীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ এবং ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান, এমসিএ’র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি শিক্ষাবিদ হাবিবুর রহমান, দিলওয়ার হোসেন খান, আতিকুর রহমান জিলু, এমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক হামিদ হোসাইন আজাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল মতিন চৌধুরী প্রমুখ।

সমাপনী বক্তব্য দেন এমসিএ’র কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত