সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:০৫

হুমকির মুখে হাওরের জলজ জীববৈচিত্র্য : এগিয়ে এসেছে সিকৃবি

বন্যার পরপর তীব্র রোদে হাওরের ধান পচে কালচে হয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওরের পানি। আর এতে ব্যাপক হারে মরছে হাওরের মাছ ও হাঁস। বাতাসে তীব্র পচা গন্ধ। চরম ভোগান্তির সময় পার করছেন হাওর এলাকার মানুষরা। গত দুইদিনের বৃষ্টিতেও কমছে না দূষণ।

বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, কাঁচা ধান পচে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে। তাই মারা যাচ্ছে হাওরের মাছ। শুধু মাছ নয়, একইসাথে হাঁসও মারা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ অবস্থায় তীব্র হুমকির মুখে পড়েছে হাওরের জলজ জীববৈচিত্র।

সবচেয়ে কাছে থেকে হাওর এলাকায় মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন ও গবেষণার লক্ষ্যে কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। জলজ জীববৈচিত্রের এমন নাজুক অবস্থার প্রাথমিক কারণ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন সিকৃবি'র শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা।

গত (২১ এপ্রিল) শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য, জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল জলজ জীববৈচিত্র পাঠের অংশ হিসেবে মাদার ফিশারিজ হিসেবে সংরক্ষিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর পরিদর্শন করেন। ঐ দলের সাথে থাকা মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শাহাব উদ্দিন বলেন, বিষক্রিয়ার ফলে মৃত মাছ এবং হাঁস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। পাশাপাশি এসব দুষিত পানি ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।

শনিবার (২২ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের দেখার হাওর সহ বেশক’টি হাওর ও সুরমা নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সৈয়দ মাশেকুল বারী। গুণগত মান পরীক্ষা চলছে সেই সব নমুনার।

হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র গবেষক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইমুল ইসলাম বলেন, অকাল বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন টানা তীব্র রোদ ওঠে। যার ফলে পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ধানে পচন শুরু হয়। পচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং প্রচুর বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করে। ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, যা হাইপোক্সিয়া নামে পরিচিত। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় পচনক্রিয়া, সাথে বেড়ে যায় বিষাক্ত অ্যামোনিয়ার মাত্রা, কমে যায় অক্সিজেন এবং পানি হয়ে যায় আরো অম্লীয়। এই সবকিছু মিলে পানির গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে মাছ মারা যায়।

আর পচা খাবার এবং দূষিত পানিতে বিচরণের ফলে হাঁস মারা যেতে পারে। তাছাড়া এসব এলাকায় ভাইরাস জনিত রোগের কারনেও হাঁস মারা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

হাওর এলাকায় হাঁসের মড়ক নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া বলেন, হাঁসের মড়ক সৃষ্টির মূল কারণ হলো তার খাদ্যশৃঙ্খলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষক্রিয়া সৃষ্টির কারণ প্রাকৃতিকও হতে পারে বা অন্য কোন কারণেও হতে পারে। তবে উচ্চতর পর্যায়ে পরীক্ষা না করে এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

শুধু সুনামগঞ্জ বা সিলেটের হাওর নয়, হবিগঞ্জের হাওরও তলিয়ে গেছে বন্যায়। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা রুহেন ঠাকুর জানান, হবিগঞ্জের বোল্লার হাওরের পানিতে মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখছেন তারা।

জলজ জীববৈচিত্র সম্পর্কে টাঙ্গুয়ার হাওর পরিদর্শনে যাওয়া সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাকিব তাহমিদ রিশান ও দীপ তালুকদার জানান, হাওরের খাদ্যশৃঙ্খলের প্রাথমিক খাদ্য উৎপাদনকারী অণুজীবের মৃত্যু ঘটলে তা একে একে খাদ্যস্তরের সব জীবকেই সংকটে ফেলবে। যার সুদূরপ্রসারী যন্ত্রণা সামাল দিতে হবে হাওরবাসী মানুষকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত