চ্যানেল আই অনলাইন

০৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৫:৩৫

কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পাইওনিয়ার ডেন্টালের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ভাটারায় অবস্থিত বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৩ দফা দাবিতে বুধবার (০৩ জানুয়ারি) আবারও আন্দোলনে নেমেছিল।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ: পাইওনিয়ারের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের মতো করেই টাকা আদায় করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাবি আদায়ে কলেজ শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে রেখে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাত দশটার দিকে ওই কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম সজল জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে কলেজের ২২তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিনিশা শাহের আত্মহত্যাকে রহস্যজনক দাবি করে গত ২১ ডিসেম্বর আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সেসময় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ করে তারা। তবে গত ১৫ দিনেও দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ: কলেজটির ২২তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিনিশা শাহের আত্মহত্যা রহস্যজনক। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছে। পাশাপাশি অহেতুক জরিমানা ও অকৃতকার্যের ফাঁদে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

“এসব বন্ধের জন্যই আন্দোলন এবং এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে” বলে জানিয়েছিলো শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত না করায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে রাতে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি
১. শেষ পেশাগত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর ফরম পূরণের টাকায় কোন বেতন আদায় করা যাবে না

২. ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধি করে ১২ হাজার টাকা করতে হবে। যে সকল ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় উন্নয়ন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছে তাদেরকেও বেতনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতনের টাকা দিতে হবে।

৩. কলেজে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করার সময় চিকিৎসা বাবদ ফি সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিতে হবে এবং অভিভাবকদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. ইন্টার্ন ডাক্তারদের নিয়ে ‘ইন্টার্ন ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।

৫. ভর্তির সময় যে উন্নয়ন ফি নেয়া হয়, এরপর ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি ব্যতীত অন্য কোন টাকা আদায় করা যাবে না।

৬. প্রত্যেক পেশাগত পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ফি’র পরিমাণ কমাতে হবে।

৭. কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা কিংবা অন্য যেকোন লেনদেনে রশিদ দিতে হবে।

৮. বেতন বিলম্বে দেয়ার ক্ষেত্রে যে জরিমানা নেয়া হয় তা কমাতে হবে। ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা করতে হবে।

৯. নিয়ম অনুযায়ী হোস্টেলে এক বছর থাকার পর হোস্টেল ত্যাগ ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতি দিতে হবে। অতিরিক্ত কোন জরিমানা আর নেয়া যাবে না।

১০. কলেজে ইমার্জেন্সি ইউনিট ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

১১. হোস্টেল চার্জ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। খাবারের ক্ষেত্রে মিল সিস্টেম চালু ও খাবারের মান উন্নত করতে হবে।

১২. বহির্বিভাগে চিকিৎসা প্রদানের সময় যে সকল ইনস্ট্রুমেন্ট ও মেটারিয়েল ব্যবহার করা হয় তা পুরোটাই কলেজ থেকে সরবরাহ করতে হবে।

১৩. ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করার ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য কলেজের ন্যায় ইন্টার্নশীপ চালু ও ইন্টার্নশীপ শেষ হবার পর দ্রুত সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত