রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ১৯:৫৫

শ্রেণিকক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্বে রাবিতে শিক্ষক অবরুদ্ধ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শ্রেণিকক্ষ নিয়ে দুই বিভাগের দ্বন্দ্বের জেরে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেনকে দিনভর তার নিজ কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে তাকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা সভাপতির পদত্যাগসহ চার দফা দাবি ঘোষণা করেন। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো, তাদের ১২১ নম্বর কক্ষ ফিরিয়ে দিতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও উত্যক্তের বিচার করতে হবে, অপহরণের হুমকিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘বিষয়গুলো আমরা আমাদের বিভাগকে মৌখিকভাবে জানালে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান দিতে পারেনি। বরং তিনি ইতিহাস বিভাগের সঙ্গে লিয়াজো করে চলেন। তাই গত বুধবার থেকে ক্লাস বর্জন করেছি। দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এদিকে অবরুদ্ধ অবস্থায় ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ‘১২১ নম্বর কক্ষ ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা মানছেন না। সমস্যাগুলো সমাধানে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আলোচনা মাধ্যমে সমাধান করবে বলে জানিয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে। কারণ ওই কক্ষটি একসময় ফোকলোর বিভাগের ছিল। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিহাস বিভাগকে ক্লাস করার জন্য কক্ষটি বরাদ্দ করে। আমিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে আছি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না। তারা আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি অবরুদ্ধ থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে কে?’

এর আগে বুধবার সকালে ফোকলোর বিভাগের ১২২ নম্বর কক্ষে চতুর্থ বর্ষের ক্লাস চলাকালে ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা করছিল। এতে পাঠদানে সমস্যা হওয়ায় চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী তাদেরকে গোলমাল করতে নিষেধ করেন। কিন্তু এরপরেও তারা গোলমাল বন্ধ করেনি। পরে নিষেধ অমান্য করাকে কেন্দ্র করে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান দিতে না পারায় এ অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটায় শিক্ষার্থীরা।

তবে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তাদের ১২১ নম্বর কক্ষটি হস্তগত করতেই ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে ক্লাস শুরুর পূর্বে তারা আমাদের ১২১ নম্বর কক্ষের নেমপ্লেট ভেঙে ফেলে। আমাদের এক শিক্ষক দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস নিতে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপরও ক্লাস শুরু করলে তারা ক্লাসের সামনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘দুপুরে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে তাকে তালা খুলে দিয়ে আসি। সাড়ে ১২টায় মীমাংসার জন্য কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তাসহ ইতিহাস ও ফোকলোর বিভাগের শিক্ষকদের বসার কথা ছিল। কিন্তু ফোকলোর বিভাগের সভাপতি আবারো অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আর বসা হয়নি। পরবর্তী সময়ে ইতিহাস ও ফোকলোর বিভাগের শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোহবানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত