মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ ০৪:১৬

শাবান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

হিজরি বর্ষ পরিক্রমায় পবিত্র মাহে শাবান হচ্ছে ৮ম মাস শুরু হয়ে গেছে। শাবান মাস অত্যন্ত ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস যা পবিত্র মাহে রমজানের অগ্রবর্তী মাস হিসেবে বিবেচিত।

আরবিতে শাবান মাসের পূর্ণ নাম হচ্ছে আশ শাবানুল মুআজজম। বিপরীতমুখি দুটি বৈশিষ্ট্য এর মাঝে বিদ্যমান। এ যেন একই সাথে দুটি রূপ। মনে রাখতে হবে, শাখা দুটি হলেও একই কাণ্ড মূলে মিলিত। শাবানের অন্য অর্থ হলো মধ্যবর্তী সুস্পষ্ট। যেহেতু রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী। তাই এই মহান মাসকে শাবান মাস হিসাবে নাম দেওয়া হয়েছে।

আরবি বারটি মাসের মধ্যে শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। রজব মাসের তাৎপর্য ছিলো মিরাজ ও হিজরতের পরবর্তী নির্দেশনা। আর এই হিজরতের প্রায় ১৮ মাস পরই মহিমান্বিত শাবান মাসেই সৌদি আরবের ‘কিবলাতাইন মসজিদে’ নামাজরত অবস্থায় জেরুজালেমে অবস্থিত বাইতুল মোকাদ্দাস হতে কেবলা পরিবর্তন করে কাবা শরিফকে (বায়তুল্লাহ) কিবলা নির্ধারণের নির্দেশ জারি হয়।

মহান আল্লাহ বলেন ‘‘আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ্য করেছি। সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের (কাবাঘর) দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও” (সুরা বাকারা- ১৪৪)।

হজ্ব ও ওমরাকারিগণ জিয়ারার সময় এই মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ পরিদর্শন ও নফল নামাজ পড়ে থাকেন। শাবান মাস হচ্ছে ঐক্যের মাস। এই শাবান মাস হচ্ছে কাবাকেন্দ্রিক মাস। এই শাবান মাস হচ্ছে মহানবী (স.) এর, আর রজব মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস। অন্য দিকে রমজান হচ্ছে উম্মতের মাস।

রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে মহানবী (স.) প্রার্থনা করতেন, আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজব ওয়া শাবান বাল্লিগনা রমজান। রজব মাসে ইবাদত বন্দেগি মাধ্যমে মনে জমি চাষ করা আর শাবান মাসে ইবাদতের গতি বাড়িয়ে মনের জমিতে ইবাদতের বীজ বপন এবং পবিত্র মাহে রমজানে অত্যধিক ইবাদত হাসিল করে মনের জমিতে ইবাদতের ফল অর্জন করা বা রমজান মাসে যাবতীয় পাপ মোচনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তথা জান্নাতের পথ সুগম করা। রজব মাস হচ্ছে রাসুল (স.) এর মোহাব্বতের মাস। প্রিয় নবী (স.) এ প্রতিবেশী দরূদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত মহা মূল্যবান বাণী এই শাবান মাসেই নাযিল হয়।

আল্লাহ বলেন ”নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নবীজি (স.) এ প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজি (স.) জন্য রহমত কামনা করেন, হে মোমিনগণ তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠ (রহমত কামনা) করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো (সুরা আহজাব-৫৬)। এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় স্বয়ং আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ মহানবী (স.) ওপর দরূদ সালাম তথা রহমত প্রেরণ করেন। তাই এই শাবান মাসে মহানবী (স.) প্রতি অগাধ ভক্তি শ্রদ্ধা ও প্রেম ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। আর রাসুল (স.) এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে তার সুন্নাত সমূহ আঁকড়ে ধরা। মহানবীর সুন্নাত মানব জীবনে বাস্তবায়ন করা।

কনিষ্ঠ সাহাবি হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন- রাসুল (স.) আমাকে বলেন ‘‘হে বৎস যদি পারো এভাবে সকাল-সন্ধ্যা পার করো যেন তোমার অন্তরে কারো প্রতিহিংসা না থাকে তবে তাই করো, অতঃপর বলেন এটাই আমার সুন্নাত আদর্শ, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুসরণ করল সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালবাসলো, যে আমাকে ভালবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে”(তিরমিজি -১৭৫)। পবিত্র শাবান মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাত যা হাদিসে নিসফুসশাবান হিসাবে উল্লেখ রয়েছে। তা হচ্ছে এই শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত শবে বরাত অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (স.) পবিত্র শাবানের দিন তারিখ এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতেন। যা অন্য মাসে দেখা যায়নি (আবু দাউদ) হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও জানা যায়, তিনি বলেন আমি নবীকে (স.) শাবান ব্যতীত অন্য কোন মাসে এত অধিক নফল রোজা রাখতে দেখিনি (সহিহ বোখারী)।

শাবান মাসে নফল ইবাদতের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখা, প্রতি সপ্তাহে সোমবার, বৃহস্পতিবার রোজা রাখা সুন্নাত, তাই এই মাসে আমরা বেশি বেশি নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরূদ পাঠ, জিকির আজগার, তাওবাহ, ইসতেগফার, দোয়া কালামসহ অধিক পরিমাণ দান খয়রাত করা জরুরি।

আল্লাহ আমাদেরকে শাবান মাসের প্রকৃত ফজিলত ও কল্যাণ দান করুন। আমিন!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত