রাজু আহমেদ

০৭ জুলাই, ২০২৩ ১৩:০৮

অবসরের পাঁচকাহন

ছবি: ফেসবুক থেকে

একজন দক্ষ আমলা। কামলা জীবনের সঞ্চিত যোগ্যতা ও শারীরিক সক্ষমতায় তিনি আরও কিছুদিন রাষ্ট্রের সেবা দিতে পারতেন। শুধু রাষ্ট্রের সেবাই নয় বরং তাঁর মেধা, অর্জিত দক্ষতা, সিদ্ধান্তের সক্ষমতা, চৌকশ সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে পারলে রাষ্ট্রই উপকৃত হতো৷ অথচ ৫৯ বছরের বয়সসীমায় সব আয়োজন গুটিয়ে রাষ্ট্র তাঁকে আসসালামু আলাইকুম জানায়৷ সহকর্মী-সহমর্মীদের কেউ কেউ মন খারাপ করে হয়তো কিন্তু বিধানের বিরুদ্ধাচারণের সুযোগ নাই; কারো জন্য সীমিত! তাঁর চেয়ার আরেকজনের দখলে যায়। সে আমলা পূর্বের আমলার চেয়ে কম যোগ্য হলেও সেই উত্তরাধিকার হয়!

একজন মহান শিক্ষক। ৩০-৩৫ বছর অধ্যাপনা করিয়ে যিনি পাণ্ডিত্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করছেন৷ তাঁর অজানা বিষয়ের সংখ্যা অতি সামান্য। ক্লাসে তাঁর কথা শুনতে শিক্ষার্থীরা রীতিমত ধ্যানমগ্ন হয়। শিখন-শেখানো কার্যক্রমে তিনি যথেষ্ট কার্যকরী। বয়সের ছাপও শরীরে স্পষ্ট হয়নি। অথচ তাকেও ঠেলা ফেলা হয়। জোর করে নয় বরং নিয়মের বেড়াজালে। সার্টিফিকেটের ৫৯ বছর হলেই তাকে বিদায় মঞ্চের প্রধান আকর্ষণ করা হয়। দু’ফোঁটা চোখেরজলে কিংবা নিছক মন খারাপে তিনি ঘোষণা করেন, আমার যাওয়ার সময় এসেছে। এবার দাও বিদায়!

অবসরের ক্ষেত্রে কোনো রীতিনীতি না থাকায় হাউমাউ বাঁধায় কয়েকশ্রেণির পেশাজীবী। রাজনীতিবিদগণ সাধারণত মৃত্যুবরণের আগে পদবি ও ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একজন রাজনীতিবিদও বোধহয় মিলবে না যিনি স্বেচ্ছায় রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। একমাত্র স্রষ্টা উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই তাদের ওঠানো যায়! এখানে প্রবেশেরও যেমন সময় নাই তেমনি বিদায়েরও নির্দিষ্ট বয়সসীমা নাই। যে যতদিন পারে ততদিন নড়ে! এমনও দেখা গেছে যে, বয়সের ভারে দেহ শুয়ে গেছে, মস্তিষ্ক আধা বিকৃত হয়েছে কিন্তু রাজনীতি মাঠ ছাড়েননি! দাঁড়িয়ে ছিলেন; চূড়ান্ত শোয়াতেই কেবল তাদেরকে শোয়ানো যায়!

অবসর নিয়ে আসল খেলাটা খেলেন খেলোয়াড়রা। তারা যোগ্যতা প্রমাণ করে ঠিকই দলে যায়গা পান কিন্তু অনেক অযোগ্যতার পরেও দল থেকে বের হতে চান না। দেশের জন্য খেলতে খেলতে একসময় নিজের জন্য খেলতে শুরু করেন! শরীর পারে না কিন্তু তারা অতীতের হামভরা দেখিয়ে থেকে যেতে চান। কেউ কেউ তো আবার অবসরের নাটক করেন! তাদের অবসরের ঘোষণাই হয় তাকে ফেরানোর জন্য কিংবা ফিরে আসার জন্য৷ তারা মাঠে খেলেন, তাদের বউয়েরা মিডিয়ায় খেলে, তাদের ভক্তরা কায়দায় কাঁদিতে কাঁদিতে খেলেন এবং তাদের সমালোচকরা গালাগালিতে খেলে! এই খেলা-খেলি শেষ হয় না। একজন বসে তো আরেকজন দাঁড়ায়! দর্শকদের মাঠ-মিডিয়ার বহুরকম খেলাই দেখতে হয়!

রাজনীতিবিদদের মত আরও কিছু মানুষ আজীবন খেলতে পারেন! এদেরকে সাধারণত কর্তাশ্রেণিতে ফেলা যায়! বড় কর্তা, মেঝো কর্তা, সেজো কর্তা টাইপ আরকি! এরা ফুটবল/ক্রিকেটের সর্বোচ্চ হর্তাকর্তা! পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও এদের খেলা কিন্তু রাত-দিন চলতেই থাকবে! যাদের সাথে খেলাধুলা করে তাদের সবাই ক্লান্ত হয়ে যায় কিন্তু এদের অবসর আসে না৷ এরা জগতের সবার অবসরের সাক্ষী হয়! জাতিতে এরা বিরল প্রজাতি!

অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকলে এতো হাউমাউ বাঁধতো না৷ সে সীমার পরেও যদি কারো অতিরিক্ত চার্জ থাকতো তবে তাদেরকে বিবেচনা সাপেক্ষে আরও কিছুদিন রাখা যেতো! বিশেষ আমলাদের ৬৫ পর্যন্ত, মহান শিক্ষকদের এমিরেটাস মর্যাদা দিয়ে রাখার মতোই যোগ্যদের আরও কিছুদিন প্রলম্বিত করা যেতো। এ রীতি বৈধ। তবে আমভাবে সকল শ্রেণি-পেশায় অবসরের রীতি ও বয়সের সীমানা থাকলে উত্তেজনা অনেকাংশেই প্রশমিত হতো। অযথা কান্নাকাটি, উচ্চকণ্ঠের গালাগালি লাঘব হতো৷ আমরা শান্তি চাই, অশান্তিও চাই!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত