মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:১৭

বৃক্ষরোপণ: গুরুত্ব ও এহসান ইলাহি

বৃক্ষ ও প্রাণিকুল একে অপরের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাণিদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ হলো অক্সিজেন, যা বৃক্ষ থেকেই উৎপন্ন ও নির্গত হয়। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণিজগৎ কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন করে। এটি এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বৃক্ষ সেই দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে। আর তাই ইসলাম বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বর্ণনা করেছে।

রিজিকের উৎসমূল হলো গাছ
গাছ থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল খেয়ে প্রাণিকুল জীবন ধারণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমাণগত। অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। আর আমরা ওটাকে সরিয়ে নিতেও সক্ষম। অতঃপর আমরা তা দিয়ে তোমাদের খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য সেখানে থাকে প্রচুর ফল-ফলাদি এবং তোমরা তা থেকে ভক্ষণ করে থাক। আর আমরা সৃষ্টি করেছি (জয়তুন) বৃক্ষ। যা সিনাই পর্বতে জন্মায়। যা থেকে উৎপন্ন হয় তৈল এবং ভক্ষণকারীদের জন্য রুচিকর খাদ্য’ ।

গবাদিপশুর জীবিকাও বৃক্ষ, লতা-পাতা থেকে উৎপন্ন হয়
আল্লাহ বলেন, তারা কি দেখে না যে, আমরা ঊষর ভূমিতে (বৃষ্টির) পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করি। যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা। এর পরেও কি তারা উপলব্ধি করবে না?’

বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য শস্য ও ফলমূল উৎপন্ন করেন
তিনি বলেন, আমরা পানিপূর্ণ মেঘমালা হতে প্রচুর বারিপাত করি। যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং ঘনপল্লবিত উদ্যানসমূহ।

ফসল ও ফলমূল আল্লাহর অপার দান
তিনি বলেন, তোমরা যে শস্য বীজ বপন কর, সে বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি ওটা উৎপন্ন কর, না আমরা উৎপন্ন করি? আমরা যদি ইচ্ছা করি তবে অবশ্যই ওটাকে খড়-কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। (তখন তোমরা বলবে) আমরা তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হয়ে গেলাম। বরং আমরা তো বঞ্চিত হয়ে গেলাম।

বৃক্ষে রয়েছে বান্দাদের জন্য বিভিন্ন উপদেশ ও অফুরন্ত রিজিক
আল্লাহ বলেন আর পৃথিবীকে আমরা প্রসারিত করেছি এবং তাতে পাহাড় সমূহ স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সকল প্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদরাজি। প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য, যা চাক্ষুষ জ্ঞান ও উপদেশ স্বরূপ। আর আমরা আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বাগান ও শস্য বীজ উদ্গত করি এবং দীর্ঘ খর্জূর বৃক্ষসমূহ, যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুরের মোচা। বান্দাদের জীবিকা হিসাবে। আর আমরা এর দ্বারা জীবিত করি মৃত জনপদকে। বস্তুত এভাবেই হবে পুনরুত্থান’

বৃক্ষরাজি আল্লাহর সৃষ্টির শৈল্পিক নৈপুণ্য প্রকাশ করে থাকে। আল্লাহই সুনিপুণ স্রষ্টা। তিনি সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজি। এসবই আমাদের উপকারার্থে আল্লাহ সৃজন করেছেন। একই মাটি ও একই পানিতে আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখি, যাতে বিভিন্ন ফুল ও ফল হয়। যেগুলি প্রাণিকুলের জীবনোপকরণের জন্য আল্লাহর বিশাল অনুগ্রহ। আল্লাহ বলেন, অতএব মানুষ একবার লক্ষ্য করুক তার খাদ্যের দিকে। আমরা (কীভাবে তাদের জন্য) বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি। অতঃপর ভূমিকে ভালভাবে বিদীর্ণ করি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্য-শস্য, আঙ্গুর ও শাক-সবজি, জয়তুন ও খর্জূর, ঘন পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং ফল-মূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগ্যবস্তু হিসাবে’!

বৃক্ষরাজি আল্লাহর গুণগান করে
বৃক্ষরাজি থাকে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত। এগুলি আল্লাহর গুণগান করে। আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীব-জন্তু ও বহু মানুষ? আর বহু মানুষ আছে তাদের উপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। বস্তুত আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তাই-ই করেন’ ‘আর লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি সিজদাবনত’!

জান্নাতের আপ্যায়ন হবে ফলমূল দিয়ে
নানা রকম ফল-ফলাদি দিয়ে আল্লাহ জান্নাতবাসীকে আপ্যায়ন করবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আর ডান পাশের দল। কতই না ভাগ্যবান ডান পাশের দল! (তারা থাকবে) কাঁটাবিহীন কুল গাছের বাগানে। (সেখানে আরও থাকবে) কাঁদি ভরা কলা গাছ। তারা থাকবে প্রলম্বিত ছায়াতলে। সদা প্রবহমান পানির মধ্যে। থাকবে প্রচুর ফলমূলের মধ্যে। যা শেষ হবে না, নিষেধও করা হবে না’

বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃক্ষরোপণ করতে হবে। কেননা তাতে মানবজাতি ও প্রাণিকুলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। তাই রাসূল (সা.) বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ পরিচর্যার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করেছেন। একে ইবাদত হিসাবে গণ্য করেছেন। তিনি তার উম্মতকে বৃক্ষরোপণ করতে বারবার তাকীদ দিয়েছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ থাকে।

একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করতে হবে
কারো কাছে একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার সময়ও এসে যায়, আর তোমাদের হাতে একটি চারা গাছ থাকে, তাহলো বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর পূর্বেই যেন সে তা রোপণ করে দেয়’।

ছাদাকার অনন্য মাধ্যম বৃক্ষরোপণ
বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ছাদাক্বার নেকী অর্জিত হয়। আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি দামেশকে বৃক্ষরোপণ করছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলল, আপনি এ কাজ করছেন, অথচ আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ছাহাবী? তখন তিনি বললেন, আপনি ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন বৃক্ষরোপণ করল, যা থেকে কোন মানুষ বা আল্লাহর কোন সৃষ্টিজীব ভক্ষণ করল, তাতে তার জন্য ছাদাক্বা রয়েছে’।

অন্যত্র তিনি বলেন, কোন মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ফসল চাষাবাদ করে, অতঃপর তা থেকে পাখি, মানুষ অথবা চতুষ্পদ প্রাণি কিছু খেয়ে নেয়, তবে তার জন্য সেটি ছাদাক্বাহ হিসাবে গণ্য হবে’।

রোপিত বৃক্ষের ফল চুরি হয়ে গেলেও তা ছাদাকা
কারো গাছের ফল অন্য কেউ না বলে খেলেও ছাদাকা হবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে, অতঃপর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য ছাদাকা স্বরূপ। যা কিছু চুরি হয়ে যায়, তা ছাদাকা। হিংস্র পশু যা খেয়ে নেয়, তা ছাদাকা। সেখান থেকে পাখি যা খায়, তা ছাদাকা। আর কেউ ক্ষতি সাধন করলে সেটাও তার জন্য ছাদাকা হিসাবে গণ্য হয়’।

বৃক্ষরোপণ ‘ছাদাকায়ে জারিয়ার মাধ্যম
বৃক্ষরোপণকে ‘ছাদাকায়ে জারিয়া’ বা প্রবহমান দান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে নেক আমলের ছওয়াব জারি থাকে। যে ব্যক্তি (উপকারী) ইল্ম শিক্ষা দিল বা খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা কূপ খনন করল বা ফলবান বৃক্ষরোপণ করল অথবা মসজিদ নির্মাণ করল বা কুরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা এমন সুসন্তান রেখে গেল, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’।

অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা উম্মে মা‘বাদের বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে উম্মে মা‘বাদ! এ গাছ কে রোপণ করেছে? কোন মুসলমান, না কাফের? সে বলল, মুসলমান রোপণ করেছে। তখন তিনি বললেন, ‘কোন মুসলমান যদি বৃক্ষরোপণ করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতুষ্পদ প্রাণি অথবা পাখি কিছু ভক্ষণ করে, তবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য তা ছাদাকা স্বরূপ থাকবে’।

মুমিনের উপমা সবুজ বৃক্ষের ন্যায়
সবুজ বৃক্ষের সাথে মুমিনের সাদৃশ্য বিষয়ে প্রসিদ্ধ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের উপমা হলো এমন একটি সবুজ বৃক্ষের ন্যায়, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং মলিন হয় না। তখন কেউ বলল, এটি অমুক অমুক গাছ। তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে আমি অল্প বয়সী হওয়ায় বড়দের সামনে বলতে সংকোচ বোধ করলাম। তখন রাসূল (সা.) বলে দিলেন যে, সেটি হলো খেজুর গাছ। অতঃপর ওমর (রা.) বললেন, তুমি যদি এটা সবার সামনে বলতে, তবে তা এত এত ধন-সম্পদ থেকেও আমার জন্য বেশি খুশির কারণ হতো’।, প্রতিটি বৃক্ষের পাতা, কাণ্ড, ছাল-বাকল, ফলমূল সবই যেমন আমাদের জন্য উপকারী, তেমনি প্রতিটি মুমিনের কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, লেনদেন সবকিছুই অপর মুমিনের জন্য কল্যাণকর হওয়া উচিৎ। উল্লেখিত হাদিসে উক্ত শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে।

বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন নিষিদ্ধ
মহান আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত হলো বৃক্ষ। বৃক্ষ প্রাণিকুলকে রোদের প্রচণ্ড উত্তাপ থেকে ছায়া প্রদান করে। আমরা যত সুস্বাদু ফল-মূল ভক্ষণ করি, সবই বৃক্ষ থেকে আহরিত। মানবদেহের মরণব্যাধি অনেক রোগের ঔষধ এই বৃক্ষের নির্যাস থেকেই তৈরি হয়। তাই প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে কুল বৃক্ষ কর্তন করবে, আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’। হযরত আবুবকর (রা.) বৃক্ষ কর্তনের ব্যাপারে সাবধান করেছেন। যেমন তিনি ইয়াজিদ বিন আবি সুফিয়ানকে শামে প্রেরণের সময় বিনা প্রয়োজনে কোন ফলবান বৃক্ষ কর্তন করতে নিষেধ করেছিলেন

বৃক্ষ নিধন আল্লাহর ক্রোধের কারণ
যারা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করবে, তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে ফিরে যায় (অথবা নেতৃত্বে আসীন হয়), তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ও প্রাণি বিনাশের চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না’ । সুতরাং আমরা যেন পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণি ধ্বংসের পাঁয়তারা করে আল্লাহর ক্রোধের শিকার না হই।

ইকো-সিস্টেমের পরিমিতিতে বৃক্ষ
আল্লাহর বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে পরিমিতভাবে সৃষ্টি হয়েছে বৃক্ষ। প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তু বা বিষয়ের মধ্যেও আল্লাহ আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর সেখানে আমরা প্রত্যেক বস্তু উৎপন্ন করেছি পরিমিতভাবে’ । আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে বৃক্ষ এক অনন্য সৃষ্টি। এর রয়েছে বহুমুখী গুরুত্ব ও তাৎপর্য। বৃক্ষরাজিসহ সম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেমকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা তাতেই নিহিত রয়েছে গোটা প্রাণিজগৎ, ভৌতজগৎ এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া। এখানে মানুষ একটি উপাদান মাত্র এবং তার কল্যাণের জন্যই প্রাকৃতিক ইকো-সিস্টেম অবশ্য প্রয়োজন। অন্যথা মনুষ্যজাতি নিজেও একদিন বিপন্ন ও বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।

বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগৎ পরস্পর নির্ভরশীল
বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগতের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক। তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। বিশেষ করে মানুষ ও উদ্ভিদের পরস্পরের জীবনোপকরণের জন্য একে অন্যের ওপর পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন করেছেন। আর জগতের সবকিছুই তিনি কোন না কোনভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। বৃক্ষ বা তৃণলতাও মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃজিত হয়েছে। আল্লাহ নিজেই এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বিন্যস্ত করেছেন। যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন। অতঃপর তাকে শুষ্ক-কালো বর্জ্যে পরিণত করেন’,! আল্লাহ এখানে বৃক্ষরাজি ও প্রাণিজগতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং পরিবেশের ভারসাম্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যা পৃথিবীর জন্য অত্যাবশ্যক।

পরস্পরের মাঝে সমন্বয় বিধানের তাৎপর্য
আল্লাহর কোন সৃষ্টিকেই অমর্যাদা করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলো তাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানো। বৃক্ষরাজির পরিকল্পিত উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপরই মানুষের বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পৃথিবীতে বৃক্ষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকলে অক্সিজেনের অভাবে একসময় মানুষের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। এমনকি মানবজীবনের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও মারাত্মক বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে। উদ্ভিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এ আশঙ্কায়ই বৃক্ষ নিধনকে নিতান্ত ক্ষতির কারণ বলে উল্লেখ করেন এবং বৃক্ষরোপণের প্রতি যথার্থ গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে আমরা এ ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় বিধানের দিকনির্দেশনা লাভ করি। আল্লাহ বলেন,সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাব মতে সন্তরণশীল। বস্তুত তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টিকুলের জন্য। যাতে রয়েছে ফলমূল ও আবরণযুক্ত খর্জূর বৃক্ষ। আর রয়েছে খোসাযুক্ত শস্যদানা ও সুগন্ধি গুল্ম। সুতরা তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?’

এতে বুঝা যায় যে, মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্ররাজির নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তনের মাধ্যমে প্রাণিকুলের জন্য সৃজিত পৃথিবীর মাটিকে তৃণলতা ও বৃক্ষরাজির ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ অথবা পানির এ ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় বিধানের মাধ্যমে আল্লাহ জীবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আর তাই ইসলাম বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করে। সেকারণ ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য আমাদের ইসলামের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বৃক্ষরোপণ ও তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত