মাঈনুল ইসলাম নাসিম

১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:৫৬

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে একথা কেন বললেন প্রধানমন্ত্রী?

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মাস কয়েক আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ‘ক্লিন ইমেজের’ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি অতি সম্প্রতি যমুনা টিভিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু খোলামেলা কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “শপথগ্রহণ করার পরে যখন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করি, তিনি আমাকে বললেন আপনিই পারবেন, আপনাকে দিয়েই হবে, মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে চট্টগ্রামের লোক বেশি। আপনি করেন, আপনাকে আমি সাহায্য করবো”।
তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হবার পর বিদেশের মাটিতে আঞ্চলিকতা তথা ইজমকে উৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, চট্টগ্রামের লোক বলেই কী নুরুল ইসলাম বিএসসি পারবেন মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের তালাবন্ধ দুয়ার খুলে দিতে? বিলেতের ‘সিলেটী-ননসিলেটি’ স্ক্যান্ডালের পথ ধরে মধ্যপ্রাচ্যেও কি একই ক্যাটাগরির বিভাজন অত্যাবশ্যক?
 
বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতি নুরুল ইসলাম বিএসসি’র আজীবনের আনুগত্য নিঃসন্দেহে পরীক্ষিত। যদি তাই না হবে তবে তিনি তাঁর প্রিয় নেত্রীর চাহিদা মোতাবেক জিয়াউদ্দিন বাবলুর জন্য সেদিন নিজের আসনটি ছেড়ে দিতেন না। অনেক আগে থেকেই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র কোনদিন প্রয়োজন হয়নি রাজনীতি করে অন্যদের মতো রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করার। সঙ্গতকারণে ক্লিন ইমেজের জন্যই হোক আর দলীয় আনুগত্যের পুরষ্কার হিসেবেই হোক, চট্টগ্রামের অলিখিত কোটা থেকেও টেকনোক্রেট মন্ত্রী হতেই পারতেন বিএসসি সাহেব, হয়েছেনও। কিন্তু চট্টগ্রামের সেই ‘আঞ্চলিক কোটা’ যে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে প্রযোজ্য নয়, তা কি বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী অবগত নন ? দেশে দেশে বাংলাদেশের প্রবাসীরা তো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ফরিদপুরের কোটায় রাখেন না, বাংলাদেশের সন্তান হিসেবেই চেনেন জানেন।
 
১১ জানুয়ারি ২০১৬ যমুনা টিভিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাক্ষাৎকারটি যারা দেখেছেন, তারা মন্ত্রীর বক্তব্যে এমনটাও নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাঁর আগে টানা ৬ বছর এই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপালনকারী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘যারপরনাই’ ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেই মন্ত্রী পদে প্রয়োজন ছিল পরিবর্তনের। টিভি রিপোর্টারের প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মন্ত্রণালয়কে ঢেলে ভালো করে সাজানো এবং সমস্ত সিস্টেমগুলোকে আইটি’র মাধ্যমে নিয়ে আসাই হবে তাঁর এক নম্বর চ্যালেঞ্জ।

ভালো কথা, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ২০০৯ থেকে ২০১৫ এতো লম্বা সময় পেয়েও প্রভাবশালী মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ কেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে ঢেলে ভালো করে সাজাতে পারেননি? সিস্টেমগুলোকে কম্পিউটারাইজড করতে তার কী সমস্যা ছিল? বাড়ি ফরিদপুর বলেই কি তিনি শতভাগ ব্যর্থ হয়েছিলেন? মধ্যপ্রাচ্যে আজ চট্টগ্রামের যতো লোক, ৬ বছর আগে কি তা ছিল না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন কেন চট্টগ্রামের লোককে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব দেননি? বাস্তবতা হচ্ছে, উপরোক্ত কোন প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারবেন না স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা।
 
সাক্ষাৎকারে নুরুল ইসলাম বিএসসি দাবী করেন, তিনি দায়িত্ব নেবার পর সমুদ্রপথে অবৈধ মানবপাচার এখন হয় না বললেই চলে বা প্রায় বন্ধই হবার পথে। স্পষ্ট করে তিনি এটাও বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অবৈধ মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব”।

যমুনা টিভি’র রিপোর্টার মন্ত্রীকে যে প্রশ্নটি করার যৌক্তিকতা থাকলেও করেননি তা হচ্ছে, “অবৈধ মানবপাচার বন্ধে তবে কি বিগত কয়েক বছর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ছিল”?

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিকটাত্মীয় হওয়া স্বত্বেও খন্দকার মোশাররফকে সরিয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু একইসাথে তিনি চরম ভুল করবেন যদি বিএসসি সাহেবকে বিদেশের মাটিতেও চট্টগ্রামের গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখেন।

নোংরা ইজম আর আঞ্চলিকতার বিষবাষ্পকে প্রবাসে নিরুৎসাহিত করা যেখানে সবার পবিত্র দায়িত্ব, সেখানে নুরুল ইসলাম বিএসসি ‘চট্টগ্রামের’ না হয়ে ‘বাংলাদেশের’ হলেই সফল হলেও হতে পারেন।

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : প্রবাসী সাংবাদিক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত, মন্তব্য লেখকের নিজস্ব। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত, মন্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত