তানভীর চৌধুরী পিয়েল

০৮ মার্চ, ২০১৬ ১৯:০৭

মানুষ নয়, মেয়েমানুষ!

মানব সম্প্রদায়ের স্ত্রীবাচক অংশটিকে আমরা নারী বলি। সংস্কৃত ‘নৃ’ থেকে নারী শব্দটি এসেছে। নৃ শব্দটির শাব্দিক অর্থ মানুষ হলেও নারী বলতে কি আসলেই আমরা মানুষ বুঝি?

রাস্তাঘাট, কর্মস্থল কিংবা একজন মানুষ যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা- নিজের ঘর; কোথাও তারা নিরাপদ নন। কেউ কেউ তাদের মানুষই মনে করেন না। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় নারী যেন দীর্ঘশ্বাসের আরেক নাম। বিশ্বে নারী নির্যাতনের চিত্র দেখতে আঁতকে উঠতে হয়। পরিসংখ্যানটি সত্যি খুবই ভয়াবহ।

বিশ্বে প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে ১ জনকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতি ৪ জন নারীর ১ জন শিশু অবস্থায়ই নিকট আত্মীয়দের দ্বারা যৌন নিপীড়িত হন। কিন্তু এভাবে জোর করে নির্যাতন করা একই সাথে সময় ও শক্তির অপচয়। তাই উদার পুরুষ সমাজ প্রতি বছর নতুন ১২ লক্ষ কিশোরীকে স্থায়ীভাবে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেন। সুন্দর সমাধান!

আবার যেসব পুরুষ আরও বেশি উদার, তারা একটু কষ্ট করে বিয়েই সেরে ফেলেন। কিন্তু তখন, যেই বয়সে ওই মেয়েগুলোর পুতুল নিয়ে খেলার কথা। বিশ্বে প্রতি দুই সেকেন্ডে সংঘটিত হয় একটি বাল্যবিবাহ।

বিশ্ব মোড়ল আমেরিকায় বছর শেষে নির্যাতিত নারীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ থেকে ৪০ লক্ষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষিতা হন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান বলছে সেখানে প্রতি ২২ মিনিটে একজন প্রাপ্তবয়স্ক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিদিন একশো জনের বেশি নারী ও শিশু নির্যাতিত হন। অথচ কে না জানে, এসব নির্যাতনের সিংহভাগই পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়না বা পত্রিকায় আসেনা। জানাজানি হওয়ার ভয়, হয়রানি এবং আইনের মারপ্যাঁচের কারণে বিচার, সালিশ ইত্যাদির নামে অথবা একদম কোন অভিযোগ না এনেই ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক নির্যাতনসহ নারী নির্যাতনের নানা ঘটনায় সমঝোতা করতে ফেলতে বাধ্য হন নির্যাতিত নারী বা তার পরিবার।

আর নারী পাচার? জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ১২৭টি দেশ থেকে নারীরা পাচার হন ১৩৭টি দেশে। বাংলাদেশে তো সম্প্রতি বৈধভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার শুরু হয়েছে।

সারা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে কোথাও না কোথাও নারীরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। এই লেখাটি যখন লিখছি, তখনও হয়ত কোথাও কোন নারী গোপনে অশ্রুপাত করেছেন, কেউ হয়ত দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখেছেন। আমার ভালোবাসা তাই সেইসব নির্যাতিত নারীদের জন্য।

হে নারী, আপনি কখনো মা, কখনো দেবী। কখনো স্ত্রী, কখনো কন্যা। কখনো প্রেমিকা আবার কখনো সেই পুরনো প্রেমিকের দৃষ্টিতেই আপনি ‘পতিত নারী’। কত বিচিত্র চরিত্রে রোল প্লে করে যাচ্ছেন। যে জঠরে আপনি পুরুষ উৎপাদন করছেন, সেই সব বীর পুরুষেরা আপনার সেই জঠর গুলিবিদ্ধ করে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

হে নারী, ভালোবাসা আপনাদেরই জন্য !

তানভীর চৌধুরী পিয়েল : ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত