আবদুল্লাহ আল নোমান

২৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:৪৭

রিজার্ভ চুরি পূর্ববর্তী ব্যাংক কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতা!

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নিত্য ঘটছে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। কিছুই যেন করার নেই এতে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-১২ সময়ের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপই হাতিয়ে নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্র আনুমানিক ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। এর আগে ২০১৩ সালেও এমন ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনা বারবার কেন ঘটছে তার কারণ খুঁজতে গেলে আমাদের চোখে ধরা দেয় ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোন শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়া। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে গত বছরের ৮ জুলাই ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে মূল অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেবার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান করে বাচ্চুর কোনো ‘দায়’ খুঁজে পায়নি।

এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের যতগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বড় ঘটনা হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর ‘এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হইচই করারও কিছু নেই’- মন্তব্য অপরাধীদের আস্কারা বৈ আর কিছু দেয় না। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করা হলেও তারও কোনো বিচার হয়নি।

২০১০ সালের ধসের দেশের পর শেয়ারবাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ লুট; ডেসটিনি, ইউনি পে টু- এসব ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষের টাকা কেড়ে নিয়েছে, যা এখনো ফেরত পায় নি।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা এসব ঘটনারই ধারাবাহিক প্রতিফলন। রিজার্ভের অর্থ চুরির জন্য গত ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির গভর্নর ড. আতিউর রহমান তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কয়েকজন কর্মকর্তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। ইতিমধ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে।

আমাদের প্রত্যাশা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং ব্যাংকের রিজার্ভ ফিরিয়ে আনতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম থেকে মুক্তি পেতে প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক।

আবদুল্লাহ আল নোমান : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত