মো. আব্দুর মান্নান

০২ এপ্রিল, ২০১৬ ১১:৫৮

সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা উন্মুক্ত করে দিন

আমাদের দেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২/৩ টি সীমিত ক্ষেত্রবাদে সর্বোচ্চ ৩০ বছর ।একজন নাগরিকের বয়স যখন ৩০ পার হয়ে যায় সরকারিভাবে দেশের সেবা করার মত যোগ্যতা হারায়- এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

এদেশে লেখাপড়া শেষ (মাস্টার্স পর্যন্ত) করতে সেশনজট সহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ২৫/২৬ বছর পার হয়ে যায়। আগে আরও বেশি ছিল।অনেকে আবার বিভিন্ন কারণে ২/১ বছর নষ্ট হলে সে সরকারের হয়ে দেশে সেবার অযোগ্য হয়ে যায়। সে তখন অন্য রকম এক হীনমন্যতায় ভোগে। সরকারি চাকুরিরত ও তার জুনিয়রদের চেয়ে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করে এবং তার চারপাশে একটা প্রকাণ্ড দেওয়াল তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, মানসিকভাবে আলাদা করে ফেলে।

সর্বোচ্চ ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও সে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়। আমরা কী সেটা চাই?

সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী নাগরিক ব্যক্তিটি যখন নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করে তখন তার মানসিক কষ্টের দায় সরকার বা দেশ নিবে কেন? সে কী অযোগ্য?

অনেকে পাশের পরপরই বিভিন্ন এনজিও বা প্রাইভেট কোম্পানি বা ব্যক্তিগত ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করে। সেখানে তার অভিজ্ঞতার বৃদ্ধির পাশাপাশি তার মেধা ও দক্ষতা শাণিত হয়।সেই ব্যক্তি যদি সরকারি প্রশাসনে বা অন্য ক্ষেত্রে চাকরি পায় তাহলে সেটা দেশের জন্য অধিক মূল্যবান নয় কী?

সদ্য পাশ করা একজন ফ্রেশ গ্রাজুয়েটের সদ্য মুখস্তবিদ্যা যদি অধিক যোগ্য হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়?

প্রশ্ন আসতে পারে সবাই সরকারি চাকরির সুযোগ চায় কেন এবং সবাইকে দেওয়া সম্ভবও কী না?

প্রথমত: আমরা সবাই জানি সরকারি চাকুরিতে দেশসেবার চেয়ে চাকরির নিশ্চয়তার পাশাপাশি জীবনের নিশ্চয়তা, অন্যান্য সুযোগ বেশি এবং সমাজে ও রাষ্ট্রের চোখে অধিক সম্মানের।

দ্বিতীয়ত: সবাইকে দেওয়া সম্ভব নয় তাও জানি কিন্তু একটি নিদিষ্ট বয়সের পরে বাতিলের দলে অন্তর্ভুক্ত করাটা কতটা যৌক্তিক?

আমরা আরও জানি, অনেকটা এভাবে প্রচলিত সরকারি চাকরি মানে অবসরের আগ পর্যন্ত চাকরি। দু‘চারটি ক্ষেত্র বাদে শতভাবেও বা শত অন্যায় অবহেলা বা অন্য কোনভাবে সে চাকরি যায় না। ফলে অবসরের আগ পর্যন্ত একটা নিশ্চিত জীবন পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় চাকরি শেষ হলে পেনশন সহ পোষ্যকোটায় নিজের সন্তানের চাকরিরও ভাল সুযোগ থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই অধিকাংশ সরকারি চাকুরিজীবী অলস, খামখেয়ালিপূর্ণ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, দুর্নীতিবাজও অদক্ষ। অন্য দিকে এনজিও বা প্রাইভেট কোম্পানি বা ব্যক্তিগত ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কর্মঠ,দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন, মানবিক, সৎ ও দক্ষ।

যখন এই লোকগুলো সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করবে তখন সরকারি সেবা কী কয়েকগুণ বৃদ্ধিসহ তার মান আরও ভাল হবে না? তাছাড়া আমরা জানি, যখন বিভিন্ন জ্ঞানও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক যখন বিভিন্ন পর্যায়ে মেশে তখন সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রীবৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সরকারি প্রশাসন একই ধারায় প্রবহমান। সেখানে বাইরের অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের অন্তর্ভুক্ততে প্রশাসন তথা সেবা আরও বেগবান ও গুণগতমান সম্পন্ন হবে।

প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে প্রতিবছর এত পাশ করা ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ কীভাবে আসবে? সরকারি চাকরি মানে শুধু কর্মসংস্থান নয়? আর সমসংখ্যক কর্মসংস্থান তো হচ্ছে। সে না পাক আরেকজন তো পাচ্ছে এবং তারও সুযোগ থাকছে ভবিষ্যতে যে কোন সময় সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের।

তাই আমার কথা হল ৩০ বছর নয়, ৩৫ বছরও নয়, সরকারি চাকরির সুযোগ একজন যোগ্য নাগরিকের যে কোন পর্যায়ে যে কোন বয়সের হতে দিন। সেটা দেশ ও জাতির জন্য অধিক মঙ্গলের। ৩০/৩৫ পূর্ণ ব্যক্তিদের দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানাবেন না।

পৃথিবীর অনেক দেশে এই পদ্ধতি বিদ্যমান। সরকার তার নাগরিকের সেবার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করবে-কার বসে বসে ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির নিশ্চয়তা নয়। তাই সরকারি চাকরির বয়সসীমা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত