রাজু আহমেদ

১৯ জুন, ২০১৬ ১০:১৫

বাবা তুমিই হৃদয়ের স্পন্দন

ছবি: সংগ্রহ

কতটা ত্যাগ করতে পারলে একজন পুরুষ বাবা হতে পারে তার অনুপম দৃষ্টান্ত তুমিই বাবা। আমার জন্মদাতা, মহান পিতা, প্রথম শিক্ষক, সর্ব সময়েরে দীক্ষক। সেই বুঝতে শুরু করার বয়সে যেদিন মা তোমাকে বাবা বলে পরিচয় করিয়েছিল, সেদিন থেকে তুমিই আমার একমাত্র ভরসা ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যেখানেই থাকি, যত খারাপ সময় পাড় করি, তারপরেও নিশ্চিন্ত থাকি কেননা আমার মাথার ওপর আমার বাবার মত একটি বৃহৎ বটবৃক্ষের ছায়া সর্বদা বিরাজ করছে। সর্বদা আমার প্রতি তার মঙ্গলকামনা অব্যাহত থাকে। আমার কষ্টগুলো যে নিজের কষ্টভেবে দূর করতে সদা সচেষ্ট তিনি আমার বাবা। আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অঙ্কন করে দিতে যিনি নিঃস্বার্থভাবে তার যৌবনকে বৃদ্ধের মোড়কে জড়ালেন, সেই মহামানবটি আমাদের পিতা। সন্তানের কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় ত্যাগ করাকে যিনি জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার কথা নতুনভাবে চয়ন করে সার্বিকভাবে প্রকাশ করার শক্তি ভাষার ব্যঞ্জনায় সৃষ্টি করার সাধ্য নাই। বাবা, শুধু বাবাই। সব পরিবেশেই তিনি বাবা, উত্তম বন্ধু, সঠিক পথের নির্দেশক। পরিবারের সবচেয়ে উপেক্ষিত ব্যক্তি হয়েও যিনি সংসারের হাল অবিচলভাবে আঁকড়ে সকল সদস্যকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি পিতা, জীবনদাতা, জন্মদাতা।

পৃথিবীতে অজস্র জাতির সহস্র ভাষা বিদ্যমান থাকায় ভাষা ভেদে অনুভব-উপলব্ধির প্রকাশ বদলে যেতে পারে তবে কখনো বদলায় না বাবার সাথে সৃষ্ট সন্তানের রক্তের টান। চিরায়ত ভালোবাসার সবটুকুন যেন একত্রিত হয়ে তৈরি করে অদ্বিতীয় ব্যঞ্জনা ও ভালোবাসার প্রকাশ  বাংলাভাষীরা বাবা, আব্বু, আব্বা, আব্বো উচ্চারণ করে যতখানি আপ্লুত হয় তার চেয়ে কম আপ্লুত হয়না জার্মানরা ‘ফ্যাটা’ উচ্চারণ করে । ইংরেজি ভাষাভাষীদের ফাদার কিংবা ড্যাডের সাথে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না হাজার মাইল দুরে অবস্থিত আরব বিশ্বের আবি কিংবা ভারতবর্ষের পিতাজীর মধ্যে । ড্যানিশদের ফার কিংবা আফ্রিকানদের ভাদের মধ্যেও কোন পার্থক্য নাই। সন্তান তার বাবাকে ভিন্ন ভাষার যে শব্দেই সম্বোধন করুক তাতে বাবা যেমন তৃপ্তি অনুভব করেন তেমনি তৃপ্ত হয় সন্তানের আত্মাও।

সামাজিক কারণে কিংবা অন্যকোন পরিস্থিতি বাবাদের কঠোর হতে বাধ্য করায় কিন্তু সন্তানের প্রতি অগাধ স্নেহ-ভালোবাসায় ছিঁটেফোঁটরও পার্থক্য হয়না কভু। হয়ত পরিস্থিতিভেদে বাবা সব সময় তার মনের সবটুকু ভালোবাসে-স্নেহ প্রকাশ করে সন্তানকে তার ভালোবাসা-বন্ধুত্বের গভীরতা বোঝাতে পারেন না কিন্তু সেই মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট বাবর তার পুত্র হুমায়ুনের প্রতি যেমন টানের ইতিহাস আমরা লক্ষ্য করি, তেমন টানের ইতিহাস আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রত্যেক বাবা ও সন্তানের মধ্যে বিদ্যমান। সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা সর্বদা, সব পরিবেশেই স্বার্থহীন। সুতরাং যে মানুষটি সন্তানকে স্বার্থহীনভাবে সারাজীবন ভালোবাসলো সে মানুষটির প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য অশেষ। সন্তান হিসেবে প্রতিটি সন্তানের বাবার প্রতি আনুগত্য এবং বাবার বৃদ্ধ কিংবা অসহায় অবস্থায় তার দেখাশুনা করার আবশ্যিকতা রয়েছে। যে মানুষটি তার সকল স্বাদ-আহ্লাদকে জলাঞ্জলি দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে সর্বোচ্চ সুখের নাগাল দিতে আজীবন চেষ্টা করেছে সেই মানুষটি যদি সন্তানের সুসময়ে অনাদরে-অবহেলায় জীবন কাটায় তবে এটা সন্তান ও সভ্যতার কপালে কলঙ্কের তিলক অঙ্কনের মত ঘৃণ্য অপরাধ। আমাদের পিতা যেন আমাদের কাছে দুধেভাতে থাকে যেমনটা আমরা ছিলাম আমাদের পিতার কোলে-কাঁখে সেই শৈশব থেকে যৌবনে।

যদিও সন্তান হিসেবে মনে করিনা আমার বাবার জন্য আলাদা কোন দিবসের প্রয়োজন রয়েছে, যেদিন আলাদা করে বাবাকে সম্মান দেখাবো, শ্রদ্ধা করবো, যত্ন নিবো। সন্তানের কাছে বছরের সবগুলো দিন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই বাবা দিবস হওয়া উচিত। অধুনা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি আমেরিকাবাসী পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার স্মরণ হিসেবে ১৯২৪ সাল থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ‘পিতৃত্ব দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত মা দিবসের ভাবনা থেকেই বাবা দিবস পালনের সূচনা। আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে বাবা দিবসের প্রচলন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের সীমানায়ও প্রবেশ করেছে। যদিও বৃহৎ সরোবরে এখনো বাবা দিবস উদযাপনের প্রচলন এখনো আমাদের দেশে হয়নি।

শিল্পীর সুরে ঝঙ্কারিত, ‘কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে……………মনে হয় বাবার মত কেউ বলেনা/আয় খুকু আয়’ গানের কলিগুলোতে কেবল বাবার ভালোবাসাই চিত্রিত হয়েছে। মানুষ বয়সে কিংবা আকৃতিতে যত বড় হোক বাবার কাছে সে সেই ছোট্ট শিশুটিই থেকে যায় আজীবন। বাবাকে ভালোবাসি সবপুরুষের চেয়ে বেশি। কোন সন্তান তার জীবনের সব কিছুর বিনিময়েও বাবার প্রতি ঋণের কিয়দংশ পরিশোধের ক্ষমতা রাখে না। অথচ আজ আমাদের বাবারা খুব অসহায় সময় পাড় করছে। বদ্ধবেলায় ঠাই পাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের ক্ষুদ্র কুঠুরিতে। যারা সন্তানের জন্য বিশাল পৃথিবী গড়ে দিল তার তাদের গড়া পৃথিবীতে সন্তানের পাশে ঠাঁই পাচ্ছে না-এটা খুব দুঃখজনক। সন্তান স্বাবলম্বী হলেই ভুলে যেতে শুরু করে বাবাকে। ভুলে যায় এই সন্তানটিই  একদিন ছোট্ট মুরগির ছানার চেয়েও দুর্বল ছিল। সন্তান বড় হলে বাবার প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে। বাবা ছোটবেলায় পরম যত্নে আমাদেরকে যেভাবে লালন করেছেন আমরাও যেন বাবাদের জন্য তাদের অসহায় বয়সের যোগ্য সম্বল হয়ে উঠি এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে দোয়া প্রার্থনা করি । সর্বাবস্থায় ভালো থাকুক আমাদের বাবারা।

লেখক: কলামিস্ট

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত