ফয়সাল খলিলুর রহমান

১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ২২:৪১

সিলেটে ‘আয়নাবাজি’ দেখতে দিন প্লিজ

সম্প্রতি তুমুল আলোচিত চলচ্চিত্র আয়নাবাজি জাজের মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলোকে ‘মাইর দিবে’ তাই জাজ ইচ্ছে করেই আয়নাবাজি যাতে বিভিন্ন হলে চলতে না পারে সে ব্যবস্থা করেছে। ইভেন অল্টারনেট স্ক্রিনিংও বন্ধ করেছে। কারণ জাজের টাকা ও বড়লিংক(!)আছে। তারা দেশের প্রায় সবগুলো হল কিনে নিয়েছে। হল মালিক সমিতি নামে একটি সংগঠন জাজের কথায় উঠে ও বসে। আয়নাবাজি যখন মুক্তি পায় সিলেটে তখন তার বিপরীতে জাজের ছবি রক্ত আনা হয়। যদিও সিলেটে আয়নাবাজি চলতে দেয়া হয়নি (জাজের গতকালের পোস্ট থেকে এটা স্পষ্ট) মানুষ কিন্তু রক্ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সত্যিকার অর্থে জাজের এসব মারপ্যাঁচের কথা তখনো জানতাম না।



শিল্পকলায় যখন আমরা হল বুকিং দিচ্ছিলাম , হুট করে একটা উড়ো টেলিফোন আসে। সেখানে বলা হয়, জাজ সিলেটে আয়নাবাজি চলতে দিবে না। তখনো ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেইনি, আজ তাদের পোস্টের মাধ্যমে নিজেরাই স্বীকার করেছে যে, অল্টারনেট স্ক্রিনিং তারাই বন্ধ করেছে। আমাদেরকে আইনের ধারা দেখানো হয়েছিলো। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা সেটা মেনেও নিয়েছি। অথচ এই সিলেটেই টাকার বিনিময়ে শিল্পকলায় আইসক্রিম দেখানো হয়েছে , শাবিপ্রবিতে ছুঁয়ে দিলে মন দেখানো হয়েছে , সিকৃবিতে গেরিলা দেখানো হয়েছে , কবি নজরুলে কমন জেন্ডার দেখানো হয়েছে। তখন কোথায় ছিল সিনেমাটোগ্রাফি আইন ১৯১৮ এর ৩ ধারা? আমাদের ইভেন্টের ১লাখ ২৭হাজার দর্শকদের বাংলা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা ও আয়নাবাজির প্রতি আবেগকে তখন সামাল দিতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়েছে।

অনেকেই আয়নাবাজির পোস্টার খুলে সিলেটের রাজপথে মানববন্ধন করতে চেয়েছে। চিন্তা করতে পারেন, একটি সিনেমার জন্য মানববন্ধন! স্ক্যান্ডাল হতে পারে, তবে আমরা শুনেছি সিলেটে আয়নাবাজি বন্ধের জন্য একটি মহল ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করেছে? এরাই বা কারা? আয়নাবাজি চালালে আমাদের গ্রেপ্তার ও জেলের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো…একটি সিনেমা চালানোর জন্য যখন গ্রেপ্তারের হুমকি পেয়েছি তখন মেনে নিয়েছিলাম এই সিনেমা বাংলাদেশে ইতিহাস হবে, হয়েছেও।


আজ আয়নাবাজি হিট হওয়ার জন্য জাজ সামান্য(!) ক্রেডিট চাইছে। এতদিন কিন্তু চুপ ছিলেন তারা। সকল চেষ্টা করেও তারা, মানুষকে আয়নাবাজির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ফেরাতে পারেনি। আমি বলব এখন পরাজয় মেনে নিয়েই তারা আয়নাবাজির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। জাজ তাদের পোস্টে কাল বলেছে তারা নাকি পাইরেসির হাত থেকে আয়নাবাজিকে বাঁচিয়েছে। এটা চরম একটা ভুয়া কথা। কারণ যেখানে জাজ নিজেদের সিনেমাগুলোই রক্ষা করতে পারে না সেখানে অন্যের কাজ কিভাবে রক্ষা করবে? জাজের ছবি অগ্নি, দেশা দ্যা লিডার, দবির সাহেবের সংসার, আশিকী ইত্যাদি মানুষের কম্পিউটারে মুক্তি পাবার পরদিনই চলে আসে। তাহলে ক্যামনে কি? আয়নাবাজিকে জাজ নয় বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমি দর্শকরা বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার মনে হয় পাইরেসির চিন্তা দর্শকদের মাথায়ই আসেনি। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে অনেকেই আছেন যারা আয়ানাবাজি ৩/৪বার করে দেখেছেন। শুধু সিনেমা দেখার জন্য সিলেটসহ সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকা গিয়েছে। এটাকে সিনেমার বিপ্লব বলা যেতে পারে। আরেকটা কথা আয়নাবাজির গল্প কিন্তু সারাদেশের প্রায় সব মানুষ এখন জানে, তবুও কিন্তু মানুষ হলে যাচ্ছে। ইভেন পাইরেসি হলেও মানুষ হলে যাবে। শুধু মেকিং দেখার জন্য হলেও, শুধু চঞ্চলের অভিনয় দেখার জন্য হলেও মানুষ সিনেমাহলে যাবে। শুধু যাবে না, হাউজফুল যাবে।

তারেক মাসুদ, তৌকির আহমেদ, মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি উনারা কেউই তাদের ছবি হলে মুক্তি দেয়নি। কারণ তারা জানেন তাদের সিনেমা চালানোর মতো কোয়ালিটি হলগুলোতে নেই। প্রস্রাবের গন্ধ, গরম, ইভটিজারদের দৌরাত্ম্যে  মানুষ পরিবার বা বন্ধু নিয়ে হলে যেতে পারে না। এ জন্যই অলটারনেটিভ স্ক্রিনিং। আগে জাজ বা পরচালা সমিতির চুলকানি ছিলো না। কিন্তু আয়নাবাজির হিসাব অন্য। কদিন আগে চোখে দেখা নামে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো। আয়নাবাজির তোপে পিএ কাজলের চোখে দেখা মুখ থুবড়ে পরেছে। আয়নাবাজিকে সম্মান দেখিয়ে এস এ হক তার "এক পৃথিবী প্রেম" এর মুক্তির ডেট পিছিয়ে দিয়েছেন। অলিক যেটা পারলেন জাজ সেটা পারেনি। জাজকে বলতে চাই ভারত-বাংলাদেশ জগাখিচুড়ি বানিয়ে আপনারা যে সিনেমাগুলো আনছেন সেগুলোও কিন্তু আমরা দেখি। এসি রুমে বসে আপনারা দর্শকদের কষ্টের কথা বুঝবেন না। সিলেটের নন্দিতায় অসম্ভব গরমে দাঁতে দাঁত চেপে আমরা বাংলা সিনেমা দেখি। মাথার ঘাম চুয়ে চুয়ে অন্ত:বার্স ভিজে যায়, তবু আপনাদের সিনেমা দেখি।

জাজকে আমি একেবারে মাটিতে মিশিয়ে সমালোচনা করতে চাইনা। অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও তার আয়নাবাজিকে ভালোবেসে রোদে পুড়ে, সারা রাত জেগে সিলেটের পথে প্রান্তরে আয়নাবাজির পোস্টার টানিয়েছিলো সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা ! কয়েকটি মেয়ে যখন রাস্তায় সিনেমার পোস্টার লাগাচ্ছিলো আশেপাশের অনেকেই মনে মনে ভাবছে-এ কি ভেল্কি! আয়নাবাজি চলতে দেয়া হবে না শুনে যে ছেলেটি পুলিশের পায়ে ধরতে চেয়েছিলো সিনেমা ব্যবসায়ীরা কিভাবে বুঝবে এর আবেগের মূল্য কতো? আয়নাবাজি তবু সিলেটে চলতে দেয়া হয়নি তাই জাজের প্রতি এ জায়গাটাতেই আমাদের রাগ বা কষ্ট। তবু জাজকে ধন্যবাদ, কারণ যতটুকু শুনেছি তাদের মহামূল্যবান পর্দাগুলো আয়নাবাজি প্রদর্শনে বিভিন্ন সিনেমা হলে ব্যবহৃত হয়েছে।

কথা প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা না বললেই নয়। আয়নাবাজি মুক্তির সময় মাত্র ১০/১৫টা হল পেয়েছে। এর পরে সেকেন্ড টাইম পেলো মাত্র ৪০টার মতো হল। এটা কেন? সারাদেশে শখানেক হলে এই মূহুর্তে আয়নাবাজি মুক্তি দেয়া হোক। সিনেমাটিকে মানুষকে দেখতে দিন প্লিজ। আমাদের সব দু:খ-রাগ-অভিমান ভুলে যেতাম যদি সিলেটে সিনেমাটা মুক্তি দেয়া হতো। লাগবে না অল্টারনেট স্ক্রিনিং, দমবন্ধ করা গরমে সিলেটের নন্দিতাতেই সিনেমাটা দেন প্লিজ। জয় হোক বাংলা সিনেমার।


[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত