উত্তম কুমার দাশ

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২১:১৩

আগে বাংলা, পরে অন্য ভাষা

ফেব্রুয়ারি মাসের আগমন ঘটলেই আমাদের ভাষা নিয়ে রাজ্যের চিন্তাচেতনা জাগ্রত হয়। সারা বছরের ভাষাপ্রীতি যেনো এই মাসেই নাড়া দিয়ে ওঠে। ফেসবুকে প্রোপাইল পিকচার থেকে শুরু করে সবকিছুই যেনো ভাষাময় হয়ে যায়।

আবার এই ফেব্রুয়ারি মাস যেতে না যেতেই অন্য কোন বিষয় আমাদের চিন্তাধারাকে অন্য দিকে নিয়ে যায়। সুখের বিষয় এই একমাসের জন্য হলেও নিজের ভাষার প্রতি লোকদেখানো প্রীতিই হউক আর অন্তর্নিহিত ভালোবাসা হউক আমরা তা প্রকাশ করি।

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আমরা এই মাসের সক্রিয়তাকে প্রকাশ করি। ভাষা নিয়ে এই মাসে যত গবেষনাই হউক এর নেপথ্যেও  কিন্তু অনেক উদ্দেশ্য থাকে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন বাংলা ভাষাকে বেগবান করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন  আমাদেরই  একটা অংশের উদ্দেশ্য  ভাষাকে নিয়ে নিচক সস্তা বিনোদন তৈরি করা। টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেলে নাটকে গানে বাংলা ভাষার বিকৃতি হচ্ছে অবলীলায়। ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলিশ বা বাংরেজি ভাষা!

দুঃখের বিষয় আমাদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া  ছেলেমেয়েদেরও বাংলা ভাষার সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে! আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই ভুলে যাচ্ছি!

আমার মত অনেকেই কথাবার্তা অন্যকে বুঝিয়ে বলতে পারে না, তাও মাতৃভাষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র, রাজনৈতিক কোন নেতা বা সমাজের দৃষ্টিতে গুণিজন কেউ যদি মঞ্চে দাঁড়িয়ে  সঠিকভাবে একটা পূর্ণ বাক্য বলতে না পারেন, ইংরেজিতে নয়, নিজের মাতৃভাষাতেই গুছিয়ে সঠিকভাবে এক লাইন বলতে পারি না তাহলে আমি  কোন ভাষা শিখেছি?  

অত্যাধুনিকতার ছোয়ায় ভুলে গেলে চলবে না ভাষাপ্রেমে আমরা পরীক্ষিত জাতি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালি সমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রয়েছে।  সাহিত্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে। হাজারো কবিতা, গল্প, উপন্যাস এর পটভূমি হিসেবে রয়েছে ৫২র ভাষা আন্দোলন।
   
আমাদের অজানা নয় যে মাতৃভাষাকে বিশ্ববাসীর কাছে তোলে ধরেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিসংঘে বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রাণের ভাষা বাংলায়, নিজের জাতির আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। তবুও কেনো আমরা বিদেশি ভাষার আগ্রাসন থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না?
 
আমাদের মনে রাখা উচিত বিশ্বের কয়েক হাজার ভাষার মধ্যে আমরা পঞ্চম স্থানে আছি। আমাদের অস্তিত্ব আমাদের ভাষা সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালিত হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে অন্য ভাষা আয়ত্ত করতেই পারি তাই বলে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ আমাদের কাছে বেশি হয়ে যাবে! অন্যান্য ভাষাকে গুরুত্ব দেব তবে নিজের মাতৃভাষার চেয়ে বেশি নয়।

বাংলা ভাষা এগিয়ে যাক সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি প্রান্তরে প্রান্তরে ...।

উত্তম কুমার দাশ : শিক্ষার্থী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত