শাহ শরীফ উদ্দিন

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২৩:২৪

সমাজ ইয়াং ডিভোর্সি মেয়েদের গুরুত্ব দেয়

কোর্টে যাওয়ার পর এই কিছু দিনে একটি বিষয় খুব করে উপলব্ধি করছি সেটি হচ্ছে 'গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৫ টি করে বিবাহবিচ্ছেদ আবেদন জমা পড়ছে। এর বেশির ভাগই মেয়েদের পক্ষ থেকে। এবং এসব মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষিতা এবং দেখতেও সুন্দরি।' শুধু তাই না এর আগে সহকর্মী আহমদ ইমরানের একটি প্রতিবেদন মারফতও জেনেছিলাম এর কিছু তথ্য এবং সংখ্যা।

কী কারণে বিবাহবিচ্ছেদ? এমন বিষয় নিয়ে কিছু ঘাটাঘাটি করে দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরকীয়া জনিত কারণে এসব বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে।

এছাড়াও সংসারে অশান্তি, স্বামীর চরিত্রহীনতাসহ নানা কারণ থাকলেও পরকীয়াই মূলত বিবাহবিচ্ছেদ এর কারণ হিসেবে বেশি উল্লেখযোগ্য।

তবে অন্য সকল কারণ আদালত কিংবা সালিশে আসার পর মীমাংসা হলেও পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার কারণে যারা বিচ্ছেদ আবেদন করেন তারা কেবলই বিচ্ছেদেই সীমাবদ্ধ থাকেন। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে প্রকাশ্য বিভিন্ন কারণ দেখানো হলেও এর আড়ালে থাকে পরকীয়া। যা মেয়ে বা ছেলে কেউ সামনে নিয়ে আসেন না। এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও ছেলেরাও কোন অংশে কম না।

তবে ছেলেরা পরকীয়ায় আসক্ত হলে সাধারণত বিচ্ছেদ কম হয়, সকলের হস্তক্ষেপে তা শুধরানো সম্ভব হলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ মেয়েরা এই বিষয়টি গোপন রেখে স্বামীর দুষ দেখিয়েই তালাক চেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ধারণা যার সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছে সে তাকে বিয়ে করে বর্তমান স্বামীর থেকে বেশি সুখে রাখবে। এমনকি প্রেমিকের কাছে নিজের গুরুত্ব এবং প্রশংসা শোনে অনেকেই আসক্ত হয়ে যান। অথচ একজন মেয়ে এটা বোঝা উচিত তাঁর স্বামীই তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাকে বেশি সময় দিচ্ছেন আর এজন্যই সারা দিন পরিশ্রম করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। কারণ সাধারণত সমাজে দেখা যায় একটা ছেলে বিয়ের আগে বেকার থাকলেও বিয়ের পর সে কর্ম খোঁজা শুরু করে। তাঁর কারণ কি? স্ত্রীর প্রতি সম্মান এবং গুরুত্ব। কারণ কোন ছেলে চায় না সে বিয়ের আগে যেমন বাবার কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিতো বিয়ের পরও তাঁর স্ত্রীর খরচ চালানোর জন্য বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়। এতে তাঁর স্ত্রীর অসম্মান হবে। এই ভাবনা থেকেই সে কাজে মনোযোগী হয়। অথচ মেয়েরা এই বিষয়কেই বরং অবহেলা মনে করেন। ফলে প্রেমিকের সুন্দর সুন্দর কথার ফাঁদে পড়েই হয় বিচ্ছেদ। কিন্তু বিচ্ছেদের পর ঘটে বিপত্তি। কারণ অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম করা আর বিয়ে করে স্বীকৃতি দেয়া দুটা আলাদা। এ যেন নদীর দুই পাড়ে দাঁড়ানো দুজন মানুষ। ফলে ঐ মেয়েটি একা হতে আর বেশি অপেক্ষা করতে হয় না।

অবশেষে মেয়েটি যখন একা তখনো তার সঙ্গী হওয়ার মানুষের অভাব হয় না। সাময়িক ফুর্তি, ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া এটার জন্য মানুষ পাওয়া কঠিন কিছু নয়।

সহকর্মী আহমদ ইমরান যখন এ ব্যাপারে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণ করতে চেয়েছিল তখন আমিও সাথে ছিলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন 'সমাজে ইয়াং ডিভোর্সি মেয়েদের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ বর্তমান সমাজে উড়ে উড়ে মধু খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এটা একটি নেশার মতো। যে এই নেশায় পড়ে সে ফিরে আসা কঠিন। সমাজে হাজারো চোখের ভিড়ে নোংরা চোখের সংখ্যাটাই বেশি। আর ডিভোর্সি মহিলারা এসব নোংরা চোখ এড়াতে পারে না। আর এসব নোংরা চোখের মানুষদের মনভুলানো কথার ফাঁদে পড়েই তাদের সর্বনাশ হয়। ফলে এসব মহিলারা একটা সময় খুব একা হয়ে যান। শুধু তাই না, এসব মহিলারা এতোটাই একা হন যে, তার দায়িত্ব নেয়ার জন্যও একজন মানুষ থাকে না। অথচ পিছনের দিনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় ওই মহিলার চার পাশে পুরুষের অভাব ছিলও না। অথচ আজ সে একা! তখন ওই মহিলা সময়ে সময়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। কারণ সে তার বাস্তব জীবনে এমন কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বা এমন কিছু অভিজ্ঞতা পেয়েছেন যা তাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। কিন্তু এসব অভিজ্ঞতা লজ্জায় কাউকে বলতে পারেন না। ফলে এক সময় এসব মেয়েরা নেশাগ্রস্থ হন নাহয় আত্মহত্যা করেন। আবার কেউ কেউ পুনরায় বিয়ে করে সংসারী হলেও অনেকটা মনোবল হারিয়ে ফেলেন যার কারণে সংসার জীবনেও অনেকটা অশান্তিতে থাকতে হয়।'

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'আপনারা যারা সাংবাদিক তারা যদি এরকম একজন সাহসী মেয়ে খোঁজে বের করতে পারেন যে তার এই কঠিন অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের জানাবে, আর আপনারা যদি এই অভিজ্ঞতা পত্রিকা মারফত তোলে ধরেন তাহলে আমি বিশ্বাস করি যে পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ যারা করে হোক সেটা মেয়ে বা ছেলে, বিশেষ করে মেয়েরা ভয়ঙ্কর কিছু কষ্টের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন। তাই অন্য যে মেয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করতে চায় সে অবশ্যই এসব কথা জানার পর একবার হলেও তার বিবেক নাড়া দিবে। এটা সে অবশ্যই বোঝে ফেলবে আজ তার যে গুরুত্ব আছে সেটা কিছু নোংরা মানুষের সময়ের প্রয়োজনে। প্রয়োজন শেষ হলেই সে নিশ্চিত একা হবে এবং সে গুরুত্ব হারাবে। তখন সে কথা বলার মতও একজন মানুষ পাবে না।

অতএব ভাবুন 'সাময়িক সুখ আর গুরুত্বের জন্য আপনি কি আপনার স্থায়ী সুখ আর গুরুত্ব হারাচ্ছেন না? এক কাপ কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আপনি কি আপনার ব্যক্তিত্ব হারাচ্ছেন না?'

  • শাহ শরীফ উদ্দিন: সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী

আপনার মন্তব্য

আলোচিত