মিখা পিরেগু

২১ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:৩৫

লেজুড়বৃত্তিক স্বায়ত্তশাসনের কবলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বজনীন জ্ঞান চর্চা ও নতুন জ্ঞানের সৃজন ক্ষেত্র বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। আর সৃজনের পূর্বশর্ত হলো স্বাধীনতা। মুক্ত পরিবেশ জ্ঞানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে। কাজেই জ্ঞানচর্চার জন্য স্বাধীনতা অপরিহার্য। জ্ঞানের চর্চা ও সৃজন কোন রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিধি বিধানের নিরিখে সংগঠিত হয় না। ফলে স্বাধীনতাহীন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত নিশ্চল-নিষ্প্রভ বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক, বিশ্ববিদ্যালয় ধারণারই অংশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনো রাষ্ট্রের কিংবা সরকারের কাছে আনুগত্য স্বীকার করেনি। এজন্য চার্চ আর রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে। যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বকীয়তা হারাবে। যেকোনো আদর্শ, বর্ণ, জাতীয়তা বা মতবাদের ঊর্ধ্বে থেকে সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে যেতে হবে। যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেই নিজেকে শাসন করার ক্ষমতা বা স্বায়ত্তশাসন সবচেয়ে বেশি জরুরি।

সরকারি দপ্তর ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পার্থক্য হলো প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে থাকে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ কতটা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে তা ওইসব সংস্থা গঠনকারী বিধানিক আইন দ্বারাই কার্যত নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং এসব আইনের অধীনে প্রণীত স্ট্যাটিউট বা বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। বলা যায় ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘স্বায়ত্তশাসন’ একে অন্যের পরিপূরক। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা চিন্তা করলে সেখান দেখা যাবে যে, স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষা এবং গবেষণাই নয়, বরং চিন্তার মুক্তি, যুক্তির মুক্তি, তর্কের পরিবেশ নিশ্চিতে স্বায়ত্তশাসনের সদ্ব্যবহার জরুরি।

১৯৬২ সালের মহান শিক্ষা আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং গণতন্ত্রের ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি সামনে আসে। ১৯৬৯ এর গণ-আন্দোলনের পর স্বায়ত্তশাসনের দাবি আরও জোরালো হয়। ১৯৭০ পর্যন্ত ৬-দফা ও ১১-দফার আন্দোলনে এবং তৎপরবর্তী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পাশাপাশি অবস্থানেই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন দাবি। স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ১৯৭৩ সালে অধ্যাদেশ জারি করে। যে বৈশিষ্ট্যের জন্য ৭৩ এর আইনটি সমাদৃত হয়েছিল তা হচ্ছে এ আইনটি ব্যাপকভাবে গণতান্ত্রিক ও অংশীদারিত্বমূলক। তাই শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র চর্চার পথ সুগমে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এমনই প্রত্যাশা ছিলো।

১৯৭৩ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র স্বায়ত্তশাসিত আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাটিউট বা নীতি নির্ধারণের সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেটের সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত তিন জনের প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত ৪৮ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন মোট ১৮ জন। এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন স্বল্পমেয়াদের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।

১৯৯৩ পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ১২ জন উপাচার্য। আর এসময়ে শুধু দুজন ছাড়া কেউ পূর্ণ মেয়াদে উপাচার্য থাকতে পারেন নি। এর ভেতর সিনেট সদস্যদের ভোটে প্যানেলে নির্বাচিতদের মধ্যে উপাচার্য হয়েছেন কেবল তিনজন। আবার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বেশিরভাগ মেয়াদ উত্তীর্ণ সিনেট সদস্যের ভোটে উপাচার্য প্যানেলের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সময় ২০১২ সালের ২০ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ‘স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ করতে' প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হাই কোর্ট নির্দেশনা দেন । সেই সিনেটের ৯২ জন সদস্যের মধ্যে ৫২ জনের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাবার পরেও ৬৩ জন সদস্য ভোট দেন। বিতর্কিত ও প্রতিনিধিত্বহীন নির্বাচনের এই দিনটিকে 'কালো দিন' হিসেবে আখ্যায়িত করে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচিও নিয়েছিলেন সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ।

১৯৮৮-২০১৪ সময়ের মধ্যে জাবির পাঁচজন উপাচার্য বিভিন্ন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা হলেন অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমদ (১৯৮৮-৯৩), অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ (১৯৯৮-৯৯), অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদ (২০০১-০৪), অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির (২০০৯-১২) এবং সর্বশেষ অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন (২০১২-১৪)। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রদলের ক্যাডাররা। এ ঘটনার জের ধরে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ। ১৯৯৮ সালে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনের কারণে অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদকে অপসারণ করে সরকার। তখনকার উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস পরে উপাচার্য হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় গিয়ে অধ্যাপক আবদুল বায়েসকে অপসারণ করে। পরবর্তী উপাচার্য অধ্যাপক জসীমউদ্দিন আহমেদও মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। শিক্ষক আন্দোলনের মুখে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ঘোষণা করেন এবং তাতে হেরে তিনি বিদায় নেন। ২০১২ সালে জুবায়ের হত্যার পর বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনার ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি মনোনীত উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির। আন্দোলনের মুখে ও অবরুদ্ধ থেকে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন। একই বছরে প্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেটে নির্বাচিত প্যানেল থেকে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে ৯৩ জন সিনেট সদস্যের মধ্যে ৭৮ জনই মেয়াদ উত্তীর্ণ সদস্য ছিলেন। ভোটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা-গণগ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর ১১(১) ধারা— (The Vice-Chancellor shall be appointed by the Chancellor for a period of four years from a panel of three persons to be nominated by the senate on such terms and conditions as may be determined by the Chancellor and shall be eligible for re-appointment for a further period of four years.) অনুযায়ী অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

বিতর্কিতভাবে নিয়োগের পর বিভিন্ন অংশের শিক্ষকদের সম্মিলিত ফোরাম থেকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। জনশ্রুতি আছে সরকারের 'উচ্চ মহলে'র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বর্তমান উপাচার্যের অনুকূলে আসে। বর্তমান উপাচার্যসহ বিভিন্ন সময়ের উপাচার্যদের ক্ষমতাসীন সরকারের লেজুড়বৃত্তিক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবেশ বিনষ্ট করতে দেখা গেছে। নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পছন্দসই শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা নিয়োগ কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব দিয়ে লেজুড়বৃত্তির চর্চা করেছেন। ফলে আনুগত্যশীলদের নিয়ে যে নিজস্ব বলয় গড়ে ওঠে তা ক্রমেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। যার সুযোগে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন, সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি ও বিভিন্ন স্ট্যাটিউট অমান্য কিংবা আইনবিরোধী স্ট্যাটিউট প্রণয়ন করলেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না। এতে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারমূলক ও একনায়ক মনোভাব প্রতীয়মান হলেও একক নির্বাহী ক্ষমতাবলে তিনি অনেক কিছুই পাল্টে ফেলতে পারেন। কাজেই রাষ্ট্রীয়ভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার প্রয়াসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনে গণতন্ত্রের যে অগ্রণী চর্চা হওয়ার কথা ছিল তার প্রতিফলন অদ্যাবধি হয়নি। এক ধরনের স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় উপাচার্যদের অধিকাংশই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরতে দেখা গেছে। ফলে বারবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে সর্বান্তকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ১২ ধারাতে উপাচার্যের ক্ষমতা বিবৃত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। উপাচার্য একইসঙ্গে সিনেট-সিন্ডিকেট-একাডেমিক কাউন্সিল-পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কর্তৃপক্ষের সভায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন, মতামত দিতে পারবেন। কোন কারণে সভা-সদস্যদের সিদ্ধান্তর সঙ্গে তার দ্বিমত হলে, তিনি তা ঐ কর্তৃপক্ষকে পুনর্বিবেচনা করতে বলতে পারবেন। তবে ঐ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে উপাচার্য তা সরাসরি সিন্ডিকেটের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করবেন। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

সুতরাং ১৯৭৩ এর আইনে উপাচার্যকে যে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কেবল নীতি নির্ধারণী ফোরামগুলো সিনেট ও সিন্ডিকেট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু আদতে অকার্যকর, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ নীতি নির্ধারণী ফোরামগুলো উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় রেখে লেজুড়বৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পূর্ণ প্রয়োগ কখনোও করা সম্ভব হয়নি যা দীর্ঘমেয়াদে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ একটি আদর্শ অংশীদারিত্বমূলক গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসনের পথ দেখালেও উপাচার্যদের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বারংবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশীজনদের পারস্পারিক আস্থার সংকট প্রতীয়মান হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি তারই প্রতিফলন মাত্র। গণতান্ত্রিক ধারা এগিয়ে নেয়ার দর্শন থেকে প্রতিষ্ঠিত স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে উপাচার্য নিয়োগ যেমন স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের উপর বড় আঘাত। সরকারি ও প্রশাসনিক মদদে লেজুড়বৃত্তিক সংস্কৃতি অনির্বাচিত উপাচার্যদের একচ্ছত্র আধিপত্য দিয়েছে। যার ফলে সহজেই ক্ষমতাসীন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন ও আজ্ঞাবহ শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের ভিন্ন মত দমনে দুর্বৃত্তায়নের কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ফারজানা ইসলাম পূর্ববর্তী উপাচার্যদের ন্যায় প্রায় সমান্তরালেই লেজুড়বৃত্তিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে ছাড়াতে গত ৫ নভেম্বর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। পরে এই হামলার ঘটনাকে ফারজানা ইসলাম গণঅভ্যুত্থান উল্লেখ করে ছাত্রলীগকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট আহবান করে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ভ্যাকেন্টের ঘোষণা দেয়া হয়। কোটি টাকার কথিত 'গণঅভ্যুত্থান' এর পর পাল্টা ছাত্র অভ্যুত্থান ঠেকাতে হল ভ্যাকান্ট করে আপাতদৃষ্টিতে ফারজানা ইসলাম নিজের স্বার্থ রক্ষা করার অপচেষ্টা করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মতামতের বিপক্ষে গিয়ে হল ভ্যাকান্ট করে নিজের স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ দিয়েছেন। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে স্বৈরাচারী মনোভাব পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। এভাবে বার বার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছেন। লেজুড়বৃত্তিক সংস্কৃতির অবসান করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের সুফল ভোগ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় জাতির প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে। কাজেই চলমান সংকট সমাধানকল্পে অবিলম্বে হল ভ্যাকান্টের হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

  • মিখা পিরেগু : কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন; সংগঠক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর।
  • প্রকাশিত লেখায় মত, মন্তব্য, বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব, এখানে সিলেটটুডের সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নাও প্রকাশ পেতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত