আফরোজ রায়হান

০৮ মে, ২০২০ ১৯:৩৮

কথা কন ঠিক না বেঠিক

রাতেরবেলা খোঁয়াড়ের পাশ দিয়া নিঃশব্দ পায়ে শিয়াল যখন হাটে- খোঁয়াড়ের ভেতরে মুরগিটা তখন তার বাচ্চাগুলারে নিয়া চুপ মাইরা থাকে, নড়াচড়া করে না। যতক্ষণ শেয়ালের আনাগোনা বুঝতে পারে ততক্ষণ মুরগির কোন সাড়াশব্দ নাই। মায়ের পাখনার তলায় বাচ্চাগুলাও আর নড়ে না। অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে শিয়ালটা একসময় চলে যায়। ভায়েরা আমার শেয়ালটা তখন নিরাশ হয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ঠিক কি না!

শিয়াল বুঝে যায়- উহুম! আজ আর হবেনা। বিপদ টের পেয়ে খোঁয়াড়ের ভেতর মুরগি তার বাচ্চাসহ সাবধান হয়ে গেছে। কথা কন ঠিক না বেঠিক!!

তারপর সকালবেলা মুরগিটি যখন তার কচি ছানাগুলা নিয়া বাইরে বাইর হয়। নানান রঙের কত ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চা। খাবারের জন্য এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে, ঘুরেফিরে বেড়ায়। তাদের পেছন পেছন মা মুরগিটা ঘুরে আর বার বার চারপাশে দেখে- কোন বিপদ আসলো কি না! আকাশের দিকে তাকায়- কোন চিল, বাজপাখি আক্রমণ করে বসলো কি না! বড় আদরের ধন, বড় মায়ার এ বাচ্চাগুলো, কোথাও বিপদ টের পেলেই মা তাদের শাসন করে চিৎকার দিয়া বুঝাইতে চায়- ওরে সোনারা আমার, কলিজার টুকরা আদরের বাচ্চারা- তোরা যাইসনা ঐদিকটায়। তোরা আর সামনের দিকে যাইসনারে, গেলে বিপদ আছে। তোরা ফিরে আয়। মা তাদের নিরাপদে আগলে রাখে যতক্ষণ বিপদ চলে না যায়। কথা কন ঠিক কি না!

বিজ্ঞাপন

এভাবে যত প্রাণি আছে- বাঘ আছে, ভাল্লুক আছে, শিয়াল আছে, বানর আছে। আছে না নাই ! সবারই নিজের জানের মায়া আছে, বিপদে ভয় আছে। আছে না নাই! ওরা সবাই বিপদ দেখলে সাবধান হইয়া যায়। কেউ মায়ের পাখনার তলে লুকায়, কেউ গর্তে ডুকে যায়, বাকিরা সব দৌড়ে কোন না কোন নিরাপদ স্থানে পৌছায়। চিল্লাইয়া কন ঠিক কি না!

ভাইয়েরা আমার- বনের পাখিও যখন বিপদের গন্ধ পেলে পাতার আড়ালে লুকিয়ে নিজেরে বাঁচাইতে চায়। জংলার পশু, জলের মাছ- বিপদ দেখলে সবাই সাবধান হয়ে যায়। নিরাপদ জায়গা খুঁজে সেখানে চুপ মাইরা বইসা থাকে। যতক্ষণ বিপদ না কাটে ততক্ষণ তারা সেখান থেকে বের হয় না। আর তুমি তো মানুষ- সৃষ্টির সেরা জীব। হাত দিয়া, পাও দিয়া, জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়া আমার আল্লায় তোমারে সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ বানাইছে। চোখের সামনে বিপদ দেইখাও তুমি কেমন করে ঘর থেকে বের হও। ওরে তোমার কি জানের মায়া নাইরে! তোমার কি সন্তানের মায়া নাই! তোমার কি পরিবারের মায়া নাই!

বনের পশু যা বুঝে তুমি কি সেটাও বুঝনা! তুমি তো মানুষ! আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব।

একবার কি ভেবে দেখেছো- তুমি যদি অকালে মারা যাও তাহলে তোমার সন্তানের কী হবে! তোমার পরিবারের কী হবে! তোমার মা বাবা ভাই বোনের কী হবে! ও আমার আল্লাহর বান্দারে- ওরা কার কাছে যাবে! কাকে বাবা বলে ডাকবে, কাকে মা বলে ডাকবে! কাকে ভাই বলে ডাকবে! কাকে বোন বলে ডাকবে! ওরা তো এতিম হয়ে যাবে। তুমি ছাড়া দুনিয়াতে ওদের ভালমন্দ দেখার হয়ত আর কেউ থাকবে না। জোরে চিল্লাইয়া কন ঠিক কি না!

বিজ্ঞাপন

ওরে আমার মায়ার নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) তো মহামারি এলাকায় যাইতে নিষেধ করে গেছেন। নিজ এলাকায় মহামারি দেখা দিলে ঘরে থাকতে বলেছেন। তাহলে করোনার এই মহামারিতে মনের আনন্দে তুমি ঘুরে বেড়াচ্ছো কার কথায়! আমার নবী নিষেধ করেছেন, আমার সরকার নিষেধ করেছে- আমার ডাক্তার নিষেধ করেছে- এবার আর তুমি ঘর থেকে বের হইও না। বের হইলেই তুমি বিপদে পড়বা। তোমার পরিবার বিপদে পড়বে। তোমার গ্রাম বিপদে পড়বে। একটা সময় তোমার জন্য সারাদেশ বিপদে পড়বে। মুরুব্বিরা কন ঠিক না বেঠিক! যুবক ভায়েরা আওয়াজ দেন, একসাথে সবাই জোরে চিল্লাইয়া কন- আজ হইতে আমরা কেউ জরুরি দরকার ছাড়া ঘর থেকে বের হবো না। বিনা দরকারে কারো বাড়িতে যাব না, কাউকে আসতে দেবনা। নিজে সাবধান হবো, অন্যকে সচেতন করবো। মরণব্যাধি করোনার ছোবল থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত