বিনোদন ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৮:৫৯

বিয়ে আমার কাছে স্বপ্নের মতো : পাওলি দাম

কেয়া চক্রবর্তী থেকে সুচিত্রা সেন কিংবা কখনো ‘হেট স্টোরি‘তো কখনো ‘ছত্রাক‘‚ সাহসী‚ অবাধ চরিত্র চিত্রায়নেও তিনি সাবলীল। কিংবদন্তিদের চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে টলিউডে এখন এক নম্বর নামটাই হলো পাওলি দাম। আর শুধু অভিনয়ই নয়‚ নিজের বক্তব্যের বিষয়েও যথেষ্ট স্পষ্টবাদী এবং দৃঢ়। কলকাতার এক দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারটি পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো:

আপনার অভিনীত ‘মহানায়ক’-এর সুচরিতা সেন-তো লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। এই চরিত্রের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন?

পাওলি: প্রথমেই বলি এটা ওয়ার্ক অফ ফিকশান। আমাদের প্রত্যেকের একটাই উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হলো স্বর্ণযুগের সিনেমাকে রিক্রিয়েট করা। মুখ্য পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আমাকে তেমনই বলেছিলেন। আমি ছোট থেকেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়,সুচিত্রা সেন,সৌমিত্র জেঠু,মীনা কুমারী,ওয়াহিদা রহমান,মধুবালার কাজ দেখে বড় হয়েছি। তাই ওই সময়ের সিনেমা সম্পর্কে আমার একটা ধারণা ছিল। আর সত্যি কথা হলো,এই চরিত্রের  জন্য আমি খুব একটা প্রিপারেশনের সময় পাই নি। কারণ আমি তখন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-র ‘টোপ’-এর শুটিং করছিলাম। সেখান থেকে আমি ‘দেবী’-র শুটিংয়ের জন্য চলে গিয়েছিলাম পাটায়াতে। ওখান থেকে এসে আমি ‘জুলফিকার’এর শুটিং করলাম। তারপর ছুটি কাটাবার জন্য চলে গেলাম বেলজিয়ামে। বেলজিয়াম থেকে ফিরে এসেই আমি ‘মহানায়ক’-এর শুটিং শুরু করেছিলাম।

‘মহানায়কে’ অভিনয় করে আপনার কেমন লেগেছে?

পাওলি: ‘মহানায়ক’-এর স্ক্রিপ্ট খুব ভালো ছিল। ‘মহানায়কে’ প্রায় সকলেই সিনেমার অভিনেতা। তাই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এর প্রোডাক্ট ভ্যালু খুব ভালো হবে। এই সিরিয়ালে আমার কস্টিউমের জন্য অনেক রিসার্চ করা হয়েছে। আমি মনে করি মহানায়কের সাফল্যের পেছনে পুরো টিমের অবদান রয়েছে। ইটস আ টিম ওয়ার্ক। সুচরিতা সেনকে সবাই পছন্দ করেছেন। আমি যখন বিদেশে গিয়েছিলাম;তখনও ‘মহানায়ক’-এর জন্য অসংখ্য মেসেজ পেয়েছি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা।

আপনি বলছেন ‘মহানায়ক’ পুরোটাই  কাল্পনিক সিরিয়াল। কিন্তু সুচরিতা সেনকে দেখে সবাই তো বুঝতেই পেরেছেন যে এই চরিত্র সুচিত্রা সেনের হুবুহু কার্বন কপি?

পাওলি: দেখুন অফ দ্য রেকর্ড আমি একটা কথা বলছি। এই সিরিয়াল সম্পর্কে আমি এর থেকে বেশি কিছু আপনাকে বলতে পারব না। আপনি পরের প্রশ্ন করুন।

বিখ্যাত পরিচালক ওয়াইল্ডার বলেছিলেন —‘আ মাস্টার পিস কান্ট বি ড্রন টোয়াইস’। কিন্তু পুরানো সিনেমাকে রিক্রিয়েট করা তো একরকমের মাস্টারপিসকে রিক্রিয়েট করা। এরকম করা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

পাওলি: এটা করা অযৌক্তিকও বলব না। ক্লাসিক বিষয়কে আমরা অনেক সময় রিক্রিয়েট করি। সাদা কালো ‘মুঘল ই আজম’-এর মতো ছবিকে কালার ফরম্যাটে রিক্রিয়েট করা হয়েছে। সুচরিতাকে রিক্রিয়েট করার পরেও দর্শকের খুব পছন্দ হয়েছে। এটাই তো একটা বড় সাফল্য। আর ‘মহানায়ক’ সিরিয়াল কিন্তু আর পাঁচটা মেগা সিরিয়ালের থেকে আলাদা। এই সিরিয়াল খুব সিনেম্যাটিক। আমার মনে হয় ‘মহানায়ক’-এর একটা আর্কাইভ্যাল ভ্যালু আছে।

‘মহানায়ক’ দেখে রাইমা সেন এবং মুনমুন সেন আপনাকে কিছু বলেছেন?

পাওলি: না তেমন কিছু বলেনি। ‘ক্ষত’ সিনেমার প্রিমিয়ারে ওদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। ‘ক্ষত’ দেখে ওরা আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করেছে। আসলে কোঅ্যাক্টর ছাড়াও রাইমা আমার খুব ভালো বন্ধু। সিনেমা বাদেও আমরা নানা বিষয়ে আড্ডা দিই। গল্প করি।

নতুন কী কাজ করছেন?

পাওলি: বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘টোপ’ সিনেমায় আমি মাদারির চরিত্রে অভিনয় করেছি। টরেন্টো ফিলম ফেস্টিভ্যালে টুয়েল্ভ সেপটেম্বর ‘টোপ’এর  প্রিমিয়ার হবে। যদিও আমি টরেন্টো যেতে পারছি না। এ ছাড়া মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চত্রি সার্কাস’-এ আমি সহকারি পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। ওটাও খুব শিগ্গিরি রিলিজ করবে। এরপর সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘অসমাপ্ত’ ছবিটা রিলিজ করবে। ওটাতেও আমি অভিনয় করেছি।

কোনো চরিত্র মন থেকে মেনে নিতে পারেননি অথচ শুধুমাত্র পেশার তাগিদে করতে হয়েছে। এরকম কখনও হয়েছে?

পাওলি: সেরকম খুব একটা হয়নি। আমি অনেক ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছি। ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’-এ আমার অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে ‘জুলফিকারের’ চরিত্রের কোনো মিল নেই। আবার ‘দেবী’ ছবিতে আমার চরিত্র আর এক রকমের। ‘দেবী’ হলো শরৎচন্দ্রের দেবদাসের ফিমেল ভার্সান। আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করতে খুব পছন্দ করি।

আপনার কেরিয়ারের কোন কোন চরিত্রগুলো আপনার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ?

পাওলি: অনেকগুলো। ‘কালবেলা’-র মাধবীলতা,‘সব চরিত্র কাল্পনিক’-এর কাজরী,‘এলার চার অধ্যায়’-এর এলা,‘নাটকের মত’-তে খেয়া,‘ক্ষত’-র অন্তরা। ‘ক্ষত’-র অন্তরার মতো এমন জটিল  মনস্তাত্ত্বিক  চরিত্র আমি আগে পাইনি। এছাড়া ‘মনের মানুষ’,‘বেডরুম’,‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’-এর মতো আরো অনেক চরিত্র আমার প্রিয়।

এতো বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে কি মনে হয় ইন্ডাস্ট্রিটা একদম প্রফেশনাল জায়গা? না কি এর মধ্যেও আন্তরিকতা বন্ধুতা আছে?

পাওলি: প্রফেশনাল-তো বটেই। প্রফেশনালিজম ছাড়া কোনো ইন্ডাস্ট্রিই বড় হতে পারে না। কিন্তু এর  মধ্যেও আন্তরিকতা,ভালোবাসা আর আবেগ আছে। এটা ঠিক একটা ফ্যামিলির মতো।

আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখকর এবং সবচেয়ে পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা কোনটা?

পাওলি: এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। ‘মহানায়ক’-এর সুচরিতাকে এতো মানুষের ভালো লেগেছে যে এই বিষয়টা ভাবলে মনের মধ্যে সুখকর অনুভূতি হয়। আর ‘ক্ষত’-তে আমার অভিনীত অন্তরা চরিত্র দেখে সৌমিত্র জেঠু আর সাবু আন্টি (সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়) খুব প্রশংসা করেছেন। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।

আর পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা?

পাওলি: সুখ দুঃখ নিয়েই তো জীবন। জীবনে পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা এলে গায়ে মাখি না। মনেও রাখতে চাই না। সুখকর স্মৃতি নিয়েই জীবনে চলতে চাই।

আপনার মৈনাক নামে এক ভাই আছেন। তিনি আপনার সিনেমা দেখে ঠিক কী ধরনের মন্তব্য করেন?

পাওলি: আমার সব ছবি ওর খুব প্রিয়। বিশেষ করে আমার অভিনীত ‘নাটকের মতো’ সিনেমা ওর খুব পছন্দের। এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা তো আর কেয়া চক্রবর্তীর আমলের নাটক দেখেন নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার ভাই ‘নাটকের মতো’ দেখে রিলেট করতে পেরেছে। আমার মনে হয় বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলকেই ‘নাটকের মতো’ সিনেমা ছুঁয়ে গিয়েছে। আমার কোনো সিনেমা খারাপ লাগলে আমার ভাই সরাসরি আমাকে জানিয়ে দেয়।

সিনেমা ছাড়া আপনার আর কী কী করতে ভালো লাগে?

পাওলি: অবসরেও আমি সিনেমা দেখি। মিউজিক শুনতে খুব ভালোবাসি। আড্ডা দিতে ভালোবাসি। ঘুরতে ভালোবাসি।

রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের পাওলি দাম আর এখনকার পাওলি দামের মধ্যে ফারাক কতটা?

পাওলি: ফারাক কিন্তু খুব বেশি নেই। দুটো সময়ের অভিজ্ঞতা আলাদা। বারো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে আমি অনেক কিছু দেখেছি। অনেক কিছু শিখেছি। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তখন আমি হংকং যাইনি। কিন্তু এখন গিয়েছি। ওখানকার খাবার খেতে কেমন সেটা এখন জানি। তখন শুধু কলকাতার স্ট্রীট ফুড কেমন সেটাই জানতাম।

আপনি রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব পছন্দ করেন। কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত আপনার জীবনের কথা বলে?

পাওলি: খুব কঠিন প্রশ্ন। একটা গান আমার খুব কাছের। গানটা হলো—‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। দেখুন আমরা  চিরকাল থাকব না। কিন্তু আমাদের কাজগুলো থেকে যাবে।

সব ছবি হিট করে না। ফ্লপও করে। নিজের ছবি ফ্লপ করলে নিজের মনকে কীভাবে বোঝান?

পাওলি: হিট বা ফ্লপের জন্য আমি সিনেমা করিনা। অতীতে আমার অভিনেত্রী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমি কেমিস্ট্রির ছাত্রী ছিলাম। রিসার্চ করে বাইরে যেতে চেয়েছিলাম। ভাগ্য আমাকে অভিনেত্রী করেছে। সিনেমার মাধ্যমে আমি যে আশীর্বাদ পেয়েছি সেটা অন্য কোনো মাধ্যমে গেলে পেতাম না। জীবন সম্পর্কে যাবতীয় উপলব্ধি সিনেমা আমাকে শিখিয়েছে। আমি সব সময় ভালো কাজ করতে চাই। হিট এবং ফ্লপের বিষয়টা অপ্রত্যাশিত। এটা আমাকে খুব একটা ভাবায় না।

আপনি ঠিক এই মুহূ্র্তে জীবনের কাছে কী চান?

পাওলি: আমি সিনেমার মাধ্যমে অনেক কিছু পেয়েছি। আরো অনেক কিছু পেতে চাই। ইন্টারন্যাশনাল ছবি করতে চাই। আরো হিন্দি ছবি করতে চাই। অ্যাকশন ফিল্ম করতে চাই। জীবনকে উপভোগ করতে চাই।

এবার একটা র‍্যাপিড ফায়ার। সুচিত্রা সেনের চরিত্রে কাকে বেশি ভালো লাগবে —রাইমা সেন না পাওলি দাম?

পাওলি: আপনি যদি আমারই নাম অপশনে রাখেন তাহলে কি করে বলি বলুন। এই প্রশ্নের উত্তরটা দর্শকদের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।

ব্যোমকেশের চরিত্রে কাকে বেশি ভালো লাগে — যীশু না আবীর?

পাওলি: এই প্রশ্নটা খুব বিতর্কিত। দুজনেই আমার পছন্দের অভিনেতা। দুজনের সঙ্গে কাজ করেছি। ওরা দুজনেই ভালো।

অঞ্জন দত্ত-র ব্যোমকেশ না অরিন্দম শীলের ব্যোমকেশ —কোনটা বেশি পছন্দের?

পাওলি: অরিন্দম শীলের ‘হর হর ব্যোমকেশ’ আমার ভীষণ  ভালো লেগেছে। আর অঞ্জন দার ব্যোমকেশের থেকেও ‘ম্যাডলি বাঙালি’,‘চলো লেটস গো’,‘বং কানেকশান’,‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ আমার খুব পছন্দের ছবি ।

কার অভিনয় বেশি ভালো লাগে — সুচিত্রা সেন না সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়?

পাওলি: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। আর গ্ল্যামারের দিক থেকে হলে বলব সুচিত্রা সেনের কথা।

শোনা যাচ্ছে আপনার নাকি এনগেজমেন্ট নিয়ে কথা চলছে?

পাওলি: কোথা থেকে শুনলেন আপনি? আপাতত আমার কোনো এনগেজমেন্ট হচ্ছে না। হলে নিশ্চয়ই জানাবো।

সবাই জানতে চায় পাওলি দাম বিয়ে কবে করছেন?

পাওলি: এখনও কিছু ঠিক করিনি। করবো তো নিশ্চয়ই। বিয়ে আমার কাছে স্বপ্নের মতো। যখন করব তখন সবাই জানতে পারবে।

আপনার কেমন লাইফ পার্টনার পছন্দ?

পাওলি: বন্ধুর মতো লাইফ পার্টনার আমার পছন্দ। যাকে সব কথা বলতে পারব। সব কিছু শেয়ার করতে পারব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত