লিটন দেব জয়

০৭ মে, ২০১৯ ০০:১০

এভেঞ্জারস এন্ডগেম: ভ্রমণ উত্তেজনা আর তৃপ্তির ঘণ্টা তিন


সিলেটে থাকার কারণে 'স্টার সিনেপ্লেক্স'-এ এন্ডগেম দেখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মানে সিনেমাটা দেখার উদ্দেশে প্রায় ৫০০কি.মি. ভ্রমণ করতে হয়েছে। আগেই ভেবে রেখেছিলাম এন্ডগেম সিনেপ্লেক্সে থ্রিডিতেই দেখবো। ১২বছরের জার্নির একটা মনোমুগ্ধকর সমাপ্তি তো চাই। অবশ্য এর আগে 'অ্যান্টম্যান', 'সিভিল ওয়ার', 'ডক্টর স্ট্রেঞ্জ' সিনেপ্লেক্সে থ্রিডিতেই দেখেছিলাম।

ধুলো-বালি আর ঘামে মাখামাখি হয়ে ঢাকার বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামের কণ্টকাকীর্ণ পথে যেতে যেতে ২ মে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সিনেপ্লেক্সে পৌঁছলাম। দেখলাম দীর্ঘ লাইন। রিলিজের এক সপ্তাহ পরেও এমন ভিড় পাবো আশা করিনি। আরও মন খারাপ হলো যখন দেখলাম সবাই ৪-৫তারিখের টিকেট কিনছে। ৩ তারিখ মানে শুক্রবারের সব টিকিট বিক্রি শেষ। হায়, এতো কষ্ট তাহলে বৃথা যাবে! লাইনে যখন দাঁড়ালাম তখন কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়া যাক এই ভাবনায় অপেক্ষা করতে লাগলাম।

চারটা পনেরোতে কাউন্টারে পৌঁছালাম। ভদ্রলোক হাসি মুখে বললেন, 'আজকের কোনো টিকিট নেই স্যার'! হাসিমুখে বলা কথাটা বজ্রপাতের মতো বুকে বিঁধল! হাসিমুখে এমন দুঃসংবাদও দেয়া যায়? এ কেমন রসিকতা! রাগ লাগলো। বললাম, 'সাড়ে চারটার যেকোনো একটা টিকিট দেন প্লিজ'! কথাটা শুনে লোকটা এমনভাবে তাকালো যেনো আমি তাঁর হৃদপিণ্ড আমাকে দিয়ে দিতে বলেছি! মুখ গম্ভীর করে মাউস-কিবোর্ডে টিপাটিপি করে ভদ্রলোক জানালেন, 'আপনি সত্যিই ভাগ্যবান স্যার। ভিআইপিতে একটা টিকিট আছে'! কথাটা শুনে আবেগে-আনন্দে লোকটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। পরে নিজেকে সামলে নিয়েছি! আমার পেছনে দাঁড়ানো এক ভদ্রমহিলা সব দেখে অবাক বিস্ময়ে বললেন, 'আপনি ১৫মিনিট পরের শোয়ের টিকিট পেয়ে গেলেন? আর আমি শনি-রবিবারের টিকিট পাবো কি না সন্দেহ আছে। আপনি ভাগ্যবান ভাই!' টিকিট পাবার খুশিতে টিকিট কেটে সাথে 'এন্ডগেমের' লোগো সম্বলিত একটা টি-শার্টও কিনে ফেললাম। 'একটা স্মৃতি থাক' এই ভাবনায়! মুখে একটা বিজয়ী বিজয়ী ভাব ধারণ করে হলে প্রবেশ করলাম।

মুভি শুরু হলো। প্রতিটি সিনের সাথে উপস্থিত দর্শকরাও যেন মিলেমিশে গেছে। কখনো আহা, কখনো ইশ, কখনো হাহা হাসি, কখনো পিনপতন নীরবতা, কখনো হাততালি, কখনো দীর্ঘশ্বাস! এভেঞ্জারদের সাথে যেনো আমরাও থ্যানোসকে থামানোর মহামিশনে নেমেছি। গায়েব হওয়া ৫০% ক্রিচার আমরা ফেরত আনবোই! ভাব এমন যে, আজ থ্যানোসের একদিন আর আমাদের যতদিন লাগে! থ্যানোসের ডায়লগ ডেলিভারিও ছিলো তাক লাগানো। এরকম ভিলেন আর পাবো কি না জানি না।

সব উত্তেজনা, হিউমার, অ্যাকশন, ইমোশন, চোখ ধাঁধানো ভিজ্যুয়েল এফেক্ট এমসিইউর ক্রিয়েটররা এই মুভির জন্যই রেখে দিয়েছিলো মনে হয়। শেষের এক ঘণ্টা শ্বাস ফেলবার সময় পাচ্ছিলাম না। এই মুভি সর্বকালের সব রেকর্ড ভাঙবে না তো কে ভাঙবে? বরং এরকম না হলে বড় বেশি অন্যায় হয়ে যেতো। বার বার মনে পড়ছিলো ২০০৮ এর প্রথম আয়রনম্যান দেখার কথা। এক গুহা থেকে সৃষ্টি হওয়া অপরিচিত এক সুপারহিরো ১২বছরে এরকম একটি পর্যায়ে দাঁড়াবে সেটা ছিলো কল্পনাতীত। মার্ভেলের সেরা মুভির তকমা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে এন্ডগেম। সেটা কেন পেয়েছে দেখলেই বুঝতে পারবেন। আপনার জন্য এক দারুণ গল্প অপেক্ষা করছে। ডিটেইলে বলে স্পয়েল করলাম না।

মুভিটি যারা এখনও দেখেননি তাদের জন্য হালকা উপদেশ থাকবে কষ্ট করে হলেও থ্রিডিতে দেখুন মুভিটা। থ্রিডি ছাড়া এই মহাসৃষ্টির পুরো স্বাদ পাওয়া সম্ভব না।

গল্পের ধারাবাহিকতায় প্রিয়তর টনি স্টার্ক আর কোনো মুভিতে হয়তো ফিরবেন না। যদিও খুব করে চাই তিনি যেনো ফিরেন! ক্যামিওতে হলেও সমস্যা নেই। তাঁকে এক ঝলক দেখাও আনন্দের। ক্যাপ্টেন, থরের যাত্রাটাও রহস্যে ঘেরা। 'ফেইজ ফোর' এর যে মুভি তালিকা দিয়েছে দেখলাম এমসিইউ সেখানে তাঁদের ফেরার সম্ভাবনা কম।

বিলিয়নিয়ার টনি স্টার্কের চরিত্রে অভিনয় করে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র সত্যিকারের বিলিয়নিয়ারে পরিণত হয়েছেন। পেয়েছেন অসামান্য খ্যাতি, ভালোবাসা। এই গল্পও যেনো আরেক সিনেমা। আর এসব তিনি পাবেন না বা কেন? তিনিই তো এমসিইউর প্রাণভোমরা। তূণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। তাঁকে তো খালি হাতে ফিরতে দেবার কথা না।

নিউজে দেখলাম, ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ ছবি থেকে আরডিজে'র পকেটে ঢুকেছে সাড়ে ৭ কোটি ডলার বা ৬৩৩ কোটি টাকা। এ তো গেল কেবল সম্মানী। সিরিজের লভ্যাংশ থেকেও নাকি অর্থ পাচ্ছেন আমাদের প্রিয় টনি স্টার্করূপী আরডিজে।

আজ পর্যন্ত ৩৫৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এন্ডগেম ওয়াল্ডওয়াইড ১.৭৮৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যে স্পীডে দৌড়াচ্ছে তাতে আগামী দুই সপ্তাহে আয়ের দিকে সর্বকালের সেরা মুভি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছে।

এমসিইউতে আরও অনেক গল্পে অসংখ্য সুপারহিরো, সুপারভিলেনদের মহারণ আমরা ভবিষ্যতে দেখবো। কিন্তু এই ২২টা মুভির গল্প যা এন্ডগেমে সমাপ্ত হয়েছে সেরকম আর দেখা যাবে বলে মনে হয় না। হাসি-কান্নার মিশ্রণে এক মহা অধ্যায় সমাপ্ত হলো। একটি যুগের সমাপ্তি যাকে বলে। শৈল্পিক নির্মাণশৈলীতে স্বাপ্নিক যাত্রার সমাপ্তি তৃপ্তিদায়ক ছিলো। আমৃত্যু এই অভিজ্ঞতা ব্রেনের নিউরনগুলোতে জমাটবদ্ধ হয়ে থাকবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত