নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ মার্চ, ২০১৬ ০১:৪৫

স্বপ্নবাজ তরুণদের প্রচেষ্টার ফসল ‘জীবন রক্ষাকারী রোবট’

সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই স্বপ্নবাজ তরুণের আবিষ্কার রোবট, যাকে তারা বলছেন ‘জীবন রক্ষাকারী রোবট’।  রোবটটি প্রধানত তৈরি করা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এর রানা প্লাজা এবং গতবছর ২৭ ডিসেম্বর শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনার উপর ভিত্তি করে।

‘জীবন রক্ষাকারী রোবট’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- মো. রাহাত খান হৃদয়

আমাদের রোবটটির নাম হল “জীবন রক্ষাকারী রোবট”। এর কাজ শুরু করি প্রায় ৬ মাস আগে। এ কাজে ছিলাম আমরা দু’জন। মো. রাহাত খান হৃদয় এবং মো. মারুফ আবেদিন। আমরা লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আমাদের সুপারভাইজিং এ ছিলেন ইফতেখার আহমেদ স্যার এবং কো-সুপারভাইজিং এ ছিলেন মিনহাজ জামান লস্কর স্যার।

রোবটটি প্রধানত তৈরি করা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এর রানা প্লাজা এবং গতবছর ২৭ ডিসেম্বর শিশু জিহাদ মৃত্যুর ঘটনার উপর ভিত্তি করে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং জিহাদকেও উদ্ধার করা যায়নি, কারণ তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

এটি অত্যন্ত শক্তিশালী মিলিটারি কাঠামোযুক্ত রোবট। সম্পূর্ণ অ্যালুমিনিয়াম এবং শক্তিশালী প্লাস্টিক গ্লাস ব্যাবহার করা হয়েছে এতে। শক্তিশালী মোটর এবং মিলিটারি কাঠামো হওয়াতে এটি যেকোনো ধরনের জায়গায় যেতে সক্ষম। রয়েছে দু'পাশে দুটি সাহায্যকারী ট্যাঙ্ক কাঠামো যা সহজেই উপর-নিচ যেতে পারে যা রোবটটিকে যেকোনো স্থানে উঠতে সাহায্য করে।

এছাড়া এতে আছে চারটি সাহায্যকারী পা, যা পাইপে প্রবেশ করতে এবং পাইপে উপর নিচে নামতে সাহায্য করে। এতে আছে চারটি মোটর এবং অক্টোপাস গ্রিপযুক্ত চাকা এবং পাগুলো পাইপে এর আকৃতি অনুযায়ী আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। আছে মানুষ জীবিত কি মৃত তা দূর থেকে বের করার ব্যবস্থা এবং মানুষের শারীরিক অবস্থাও জানা সম্ভব। যার মাধমে আমরা সহজেই বুঝতে পারব আমাদের কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এর জন্য আমরা ব্যবহার করেছি ইনফ্রারেড।

এতে সাতটি সেন্সর রয়েছে। রোবটটি গর্তে কতটুকু গভীরে আছে তা দেখার জন্য দুরত্ব মাপার সেন্সর, ভুমিকম্প এবং আগুনের পরিমাণ দেখার জন্য সেন্সর, বাতাসের আর্দ্রতা দেখার জন্য সেন্সর, কার্বন-ডাই–অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাসের পরিমাণ দেখার জন্য সেন্সর এবং তাপমাত্রা দেখার সেন্সর।

এছাড়া এতে আছে একটি ক্যামেরা যা যেকোন দিকে ঘুরতে পারে এবং লাইট রয়েছে চারিদিকে,  ফলে আমরা অন্ধকারে ও দেখতে পারি ক্যামেরার ভিডিও গুলো। ক্যামেরার সাহায্যে আমরা দুর্ঘটনাগ্রস্থ জায়গার অবস্থা সহজেই দেখতে পারব।

এতে আছে একটি রোবট আর্ম বা হাত যার মাধ্যমে কোন কিছু পৌঁছানো বা সামনে থেকে কিছু সরানো এবং দুর্ঘটনা কবলিত মানুষকে উদ্ধারে ব্যাবহার করতে পারি। হাতটি যেকোনো দিকে ঘুরতে পারে। যা শক্তিশালী সার্ভ মোটর দিয়ে তৈরি।

রোবটটি ৩ টি প্রসেসর এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় যাতে এটি দ্রুত কাজ করতে পারে। পুরো রোবটটি বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং পুরো তারবিহীন একটি রোবট যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ১৩ হাজার ফুট দূর থেকে।

রোবটটির জন্য আছে একটি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড যা আমরা নিজেরাই বানিয়েছি। এটিও ৩টি প্রসেসর দ্বারা তৈরি। রোবট চালানোর জন্য জয়স্টিক এবং ক্যামেরা সরাসরি ভিডিও দেখার জন্য একটি মনিটর এতে আছে। এতে একটি এলইডি ডিসপ্লে আছে যাতে সেন্সর ডাটা এবং মানুষের শারীরিক অবস্থা দেখতে পারি। আছে ৫ টি পাওয়ার সরবরাহ ইউনিট যা এটিকে টানা ৫-৬ ঘণ্টা চলতে সাহায্য করে এবং পাওয়ার সরবরাহ ইউনিট প্রয়োজন মতো পাওয়ার দিতে পারে।

জীবন রক্ষাকারী এই ডিভাইসটি বানাতে আমাদের ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই রোবটটিকে আরো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন করতে প্রয়োজন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত