সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুন, ২০১৬ ১৭:৩১

পৃথিবীর ১১ ঘণ্টায় নক্ষত্রটির এক বছর!

আজ থেকে প্রায় ২০ লাখ বছর আগের কোনো একটি সময়ে অরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জে ঘূর্ণায়মান গ্যাস আর ধূলিকণা থেকে একটি গ্রহের জন্ম হয়েছিল। যার আকার বিশাল, সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতিরও দ্বিগুণ। ফুটন্ত পদার্থের গোলা একটা সেই গ্রহ। অন্তত এমনটাই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের ধারণা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে নতুন সৃষ্ট গ্যাসের মেঘে ঢাকা সেই গ্রহটি তার নক্ষত্র বা সূর্যকে খুব, খুব বেশি কাছ থেকে আবর্তন করে। পৃথিবীর সময়ের মাত্র ১১ ঘণ্টায় এর এক বছর!

এ ধরণের ঘটনা মহাবিশ্বে খুবই বিরল। ২০১২ সালে গ্রহটি আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কল্পনাতেই আসেনি কোনো গ্যাস দানব জাতীয় গ্রহ তার নক্ষত্রের প্রায় সমান বয়স নিয়ে টিকে থাকতে পারে, তাও আবার নক্ষত্রের এতটা কাছাকাছি।

কিন্তু পিটিএফও ৮-৮৬৯৫ বি নামের এই গ্রহটিও আসলে খুব একটা ভালো নেই বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় রাইস ইউনিভার্সিটির মহাকাশবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার জন-ক্রাল। তিনি রূপকথার ইকারাসের সঙ্গে গ্রহটির অবস্থার তুলনা করে বলেন, ইকারাস যেমন মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে চলে যাওয়ায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তেমনি এই গ্রহটিও তার সূর্যের খুব বেশি কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।

তাই নক্ষত্রের মহাকর্ষ বলের প্রবল টানে ধীরে ধীরে তার দেহ থেকে টুকরো টুকরো পদার্থ খসে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে দৈত্যাকৃতির গ্রহটি।

জন-ক্রালের গবেষণাপত্রটি এ বছরের শেষ দিকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল নামের সাময়িকীতে প্রকাশ হবে। এতদিন পর্যন্ত পিটিএফও ৮-৮৬৯৫ বি গ্রহটিকে বিজ্ঞানীদের কল্পনা মনে করা হলেও এর বাস্তব অস্তিত্ব নির্দেশ করে জন-ক্রালের গবেষণা। তার মতে, ‘এই জাতীয় গ্রহের অস্তিত্ব গ্রহ-নক্ষত্র এবং তাদের জন্ম সম্পর্কে আমাদের আগের জানা সব ধরণের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যার বাইরে চলে যায়।’

জন-ক্রাল আরও বলেন, ‘আমরা জানি না শেষ পর্যন্ত গ্রহটির ভাগ্যে কী আছে। আমরা এর নক্ষত্রটিকে আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখছি।

কয়েক বছর আগে পিটিএফও ৮-৮৬৯৫ বি প্রহটির উপস্থিতি সনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এর তারার উজ্জ্বলতায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর তারতম্য লক্ষ্য করে তারা বুঝতে পারেন, আসলে কিছু সময় পর পর তারাটির সামনে দিয়ে একটি গ্রহ অতিক্রম করছে।

কিন্তু নক্ষত্রটি খুবই তরুণ। এর বয়স ২০ থেকে ৩০ লাখ বছরের বেশি হবে না। এত কম বয়সের নক্ষত্রের পুরোপুরি গঠিত গ্রহ থাকার কথা নয়। তাই এই গ্রহের অস্তিত্ব নিয়ে ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অবশেষে জন-ক্রালের গবেষণা এর একটা বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দিতে পেরেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত