সিলেটটুডে অনলাইন ডেস্ক

২৬ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:৩২

সাইবার নিরাপত্তায় দুর্বল এশিয়ার দেশগুলো!

সাইবার জগতে হ্যাকিং একটি পরিচিত শব্দ। হ্যাকার বা সাইবার অপরাধীরা এ জগতের পরাশক্তি। বর্তমানে সাইবার অপরাধ আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল এ ধরনের অপরাধ দমনে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকলেও এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাইবার অপরাধ দমনে এখনো সতর্ক নয়। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই চলছে এশিয়ার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি মার্কিন সিকিউরিটি কোম্পানি ম্যান্ডিয়ান্টের এক বছর ধরে পরিচালিত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এমনটিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। খবর বিবিসি।

বলা হচ্ছে, এশিয়ায় সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়া এবং তা শনাক্ত হওয়ার মধ্যবর্তী সময় ৫২০ দিন। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সাইবার আক্রমণের শিকার ও শনাক্ত করতে যে সময় নেয়া হয়, এটি গড় হিসাবে তার প্রায় তিন গুণ। দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সতর্কতা না থাকায় অন্য অঞ্চলের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি হামলার শিকার হয় এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো।

ম্যান্ডিয়ান্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবার অপরাধীরা প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রে গড়ে ৩ দশমিক ৭ গিগাবাইট ডাটা চুরি করতে সমর্থ হয়। অর্থাৎ এক হামলা থেকে এত বেশি ডাটা হাতিয়ে নেয়া মানে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, যেখানে থাকতে পারে হাজার হাজার ডকুমেন্ট। অর্থ বা তথ্যের দিক বিবেচনায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এশিয়ায় এ ধরনের অপরাধগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় না। কারণ এ অঞ্চলে সাইবার হামলার বিষয়গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ম্যান্ডিয়ান্টের প্যারেন্ট কোম্পানি ফায়ারআইয়ের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) গ্রাডি সামার্স বলেন, সাইবার অপরাধ বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই সাইবার হামলা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ সমস্যা রোধে প্রযুক্তিগত কার্যকর কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি সাইবার অপরাধীরাও নিরন্তর তাদের হ্যাকিং টুল উন্নত করছে। শুধু আগাম সতর্কতাই পারে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে। উদ্বেগের বিষয় হলো— সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, আমরা জানি এশিয়া বিশ্বের অন্য অঞ্চলের চেয়ে সাইবার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পিছিয়ে। কিন্তু আমরা জানি না, এ পিছিয়ে থাকার পরিমাণ কতটা বেশি এবং এর ফলাফল কী পরিমাণ ভয়াবহ।
বলা হচ্ছে, জরিপের অংশ হিসেবে ম্যান্ডিয়ান্ট অনুমোদনসাপেক্ষে একটি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করে। উদ্দেশ্য হলো কতটা সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান তা নিরূপণ করা।

সামার্স জানান, মাত্র তিনদিনেই ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ভেঙে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। বিষয়টি কী দাঁড়াল? এক দল চৌকস হ্যাকার যদি তিনদিনে কোনো কোম্পানির সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙতে পারে, তাহলে ৫২০ দিনে তারা কী কী করতে পারবে!

ম্যান্ডিয়ান্ট ছয় বছর ধরে বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু এবারই প্রথম এশিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে গত বছরের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাইবার হামলার ঘটনা দীর্ঘসময় অনাবিষ্কৃত ও অপ্রকাশিত রাখা মানে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বা জাতীয় নিরাপত্তা চূড়ান্তভাবে বেহাত হয়ে যাওয়া।

সাইবার হামলার ঘটনা এতটাই ক্রমবর্ধমান যে— শুধু কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাই নয়, এ ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পাওয়ার স্টেশন। ইউক্রেনে সর্বপ্রথম পাওয়ার স্টেশনে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। এর মাধ্যমে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে সমর্থ হয়েছিল হ্যাকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবার হামলার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। ২০১৫ সালে ৫০ কোটি ডিজিটাল পরিচয় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক পরিচালিত সাইবার হামলার পরিমাণও দিনকে দিন বাড়ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই এ ধরনের হামলা বাড়ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত