সিলেটটুডে অনলাইন ডেস্ক

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৪:১৬

ইয়াহুর দাম কমে দাড়ালো ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার!

ইয়াহুকে কিনে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম প্রতিষ্ঠান ভেরিজন। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা চলছিল। প্রাথমিকভাবে ইয়াহুকে কিনতে ৪৮৩ কোটি মার্কিন ডলার দিতে চেয়েছিল টেলিকম কোম্পানিটি। তবে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ইয়াহু ও ভেরিজনের মধ্যে চুক্তির সময় ইয়াহুর দাম কমিয়ে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে।

ইয়াহুর দাম পড়ার কারণ কী? পরপর দুবার ইয়াহু হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে—এমন খবর। এ ঘটনায় ব্র্যান্ড হিসেবে ইয়াহুর সুনাম যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ সুযোগে ইয়াহুর দাম কমিয়ে দিয়েছে ভেরিজন। পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইয়াহু কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে সব শর্ত।

ওই চুক্তির সাত মাস আগে ভেরিজন কর্তৃপক্ষ ইয়াহুর পরিচালনা ব্যবসাকে কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার তথ্য স্বীকার করে নেয় ইয়াহু। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৫০ কোটি ইয়াহু অ্যাকাউন্টের তথ্য হ্যাক হয়েছে বলে প্রকাশ পায়। এরপর আবার ডিসেম্বরে পৃথক আরেকটি হ্যাকের ঘটনায় ইয়াহুর ১০০ কোটি অ্যাকাউন্টের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের ই-মেইলে নজরদারি করতে সরকারের গোয়েন্দাদের সাহায্যের জন্য সফটওয়্যার তৈরির অভিযোগে ইয়াহুকে সমালোচনাও সইতে হচ্ছে। এসব ঘটনার জের ধরে ইয়াহু ও ভেরিজনের মধ্যকার ৪৮৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিটি ঝুলে ছিল। তবে ভেরিজন ইয়াহুর ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর ওপর আস্থা হারায়নি।

ইয়াহুকে কেনা প্রসঙ্গে ভেরিজনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মারনি ওয়াডেন বলেন, ‘আমরা সব সময় ভেবেছি, এই অধিগ্রহণের পরিকল্পনাগত অর্থ রয়েছে। আমরা সানন্দে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, যাতে ইয়াহুর চমৎকার প্রতিভা ও সম্পদ দিয়ে আমাদের পোর্টফলিও সমৃদ্ধ করতে এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্র বাড়াতে পারি।’

অবশ্য, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় চুক্তির অর্থ কমাতে হয়েছে ইয়াহুকে। এ ছাড়া আইনি ও নিয়ন্ত্রক ঝামেলা ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইয়াহু হ্যাকের ঘটনা দেরিতে জানানোর বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ভেরিজনের অধিগ্রহণ করার পর কোনো আইনি ঝামেলা হলে তার দায় ইয়াহুর।

কেন ইয়াহুকে কিনল ভেরিজন? বর্তমান বিশ্ব ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের। এ ক্ষেত্রে গুগল ও ফেসবুক তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ইয়াহুর মতো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল ভেরিজনের। ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে গুগল ও ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ইয়াহুর দিকে হাত বাড়িয়েছে মার্কিন টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি। ইয়াহুর জনপ্রিয় সম্পদ বলতে এই ফ্যান্টাসি স্পোর্টস ও ইয়াহু মেইল। এ দুটি সেবা থেকে এখনো অর্থ আসছে। ইয়াহুকে ডিজিটাল সেবা এওএলের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় ভেরিজন। ২০১৫ সালে এওএলকে ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলারে অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। হ্যাকিংয়ের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর ইয়াহুর পরিচালন ব্যবসাকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটিতে কিছুটা দেরি করে ভেরিজন।

ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী মারিসা মেয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইয়াহুর বিনিয়োগকারীদের মূল্য বের করতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন আত্মবিশ্বাস ও নিশ্চয়তার সঙ্গে আমরা সামনের দিকে যেতে পারব।’

চুক্তির সময় আর্থিক মূল্য কমিয়ে আনা ইয়াহুর জন্য আরেক পরাজয়ের সাম্প্রতিক উদাহরণ। ২০১২ সালে গুগল ছেড়ে মারিসা মেয়ার যখন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আসেন, তখন তাঁকে ইয়াহুর জন্য ডুবন্ত নৌকার কান্ডারি বলে ধরা হচ্ছিল। গুগলের সাবেক নির্বাহী হিসেবে তিনি ইয়াহুতে রদবদল করেন এবং বেশ কিছু সেবা ঢেলে সাজান। এর মধ্যে ইয়াহুর সব সেবাকে ফোন ও ট্যাবলেটে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করার বিষয়টি ছিল অন্যতম। তবে বিশেষজ্ঞদের চোখে ইয়াহুকে লাভের ধারায় ফেরাতে মেয়ার ব্যর্থ। ইয়াহুর সম্পদ কাজে লাগিয়ে কীভাবে প্রচুর আয় করা যায়, তা তিনি বের করতে পারেননি।

ইয়াহুর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তিটি এখনো সমন্বয় করার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চুক্তিসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ হতে পারে।

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইয়াহুর কী হবে? ইয়াহুর সব সেবা ও পরিচালনা কার্যক্রম ভেরিজনের অধীনে চলে যাবে। সেগুলো নিয়ে ভেরিজন নিজস্ব পরিকল্পনা সাজাবে। ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ইয়াহুর সেবাগুলোকে কাজে লাগাবে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে বাকি থাকা ইয়াহুর অন্য অংশটি তখন শুধু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকবে। অবশ্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইয়াহু ইতিমধ্যে ভালো অবস্থায় রয়েছে। চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলীবাবাতে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ থাকছে ইয়াহুর। গত মাসে অবশ্য ইয়াহু কর্তৃপক্ষ বলেছিল, চুক্তির পর তাদের কোম্পানির নাম বদলে যেতে পারে। ইয়াহুর নতুন নাম হতে পারে ‘আলতাবা’। তখন ওই নতুন প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের সদস্য কমে যাবে। সরে দাঁড়াবেন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী মারিসা মেয়ার ও ইয়াহুর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ফিলো।
তথ্যসূত্র: সিনেট, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত