ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৩ আগস্ট, ২০১৫ ০৩:০৫

শেষ মুহুর্তে ভারত-পাকিস্তানের শান্তি আলোচনা বাতিল

ভারত-পাকিস্তানের শান্তি আলোচনা শুরুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিল পাকিস্তান ফলে দীর্হ প্রতীক্ষিত এ আলোচনা আলোর মুখ দেখল না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ গত মাসে রাশিয়ায় মিলিত হয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হলেও শেষ মুহূর্তে আটকে গেল পরমাণু অস্ত্রধর চির বৈরী দুই দেশ।

রোববার নয়া দিল্লিতে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের এই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। বৈঠকের আলোচ্য সূচি কী হবে তা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে কথা চালাচালির পর শনিবার আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা বাদ না দিলে আলোচনা হবে না বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঘোষণা দেওয়ার পর আলোচনা বাতিলের কথা বলে ইসলামাবাদ।

ভারত শুধু সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে বলেও জানান সুষমা স্বরাজ, যেখানে কাশ্মিরসহ অন্যান্য বিষয় আলোচনায় আনতে চেয়েছিল পাকিস্তান।

পাকিস্তান বলেছে, “ভারতের দেওয়া পূর্বশর্তের ভিত্তিতে আলোচনা হতে পারে না।”

সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এ সিদ্ধান্তে এসেছি যে, প্রস্তাবিত এনএসএ পর্যায়ের আলোচনা কোনো কাজে আসবে না।

“সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা এবং তা নির্মূলের পর অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে-এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে এটা মনে করা ভারতের জন্য যৌক্তিক নয়।”
পাকিস্তানের এ সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছে ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরাপ এক টুইটে লিখেছেন, “পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা শুধু বার বার বলছিলাম যে, পাকিস্তান যেন সিমলা চুক্তি ও উফা সমঝোতার প্রতি সম্মান দেখায়।”

৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। এরমধ্যে দুবারই যুদ্ধ হয় কাশ্মির নিয়ে, যার পুরোটা উভয়পক্ষ নিজেদের দাবি করলেও একাংশ শাসন করে।

পাকিস্তান ভারতশাসিত কাশ্মিরে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে কয়েক বছর ধরে নয়া দিল্লি অভিযোগ করে এলেও তা অস্বীকার করছে ইসলামাবাদ। এই ইস্যু নিয়েই গত বছর দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা বাতিল করে ভারত।

এরপর গত জুলাইয়ে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ার উফা শহরে গিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরীফ।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন দুই নেতা। দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়,নওয়াজ শরীফের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ২০১৬ সালে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে যেতে সম্মতি দিয়েছেন মোদী। ওই সমঝোতার পর দুই দেশের মধ্যে ফের আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের গোলাগুলিতেও দুই দেশের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত এই আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর সীমান্তে ৯১ বার অস্ত্রবিরতি চুক্তির লংঘন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুষমা স্বরাজ। তবে নতুন করে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে আলোচ্য সূচি নিয়ে মতবিরোধই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল।

ভারতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের পশ্চিম সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গিরা যে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে তার প্রমাণ তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তারা। অন্যদিকে পাকিস্তান চাইছিল বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা হোক, যার মধ্যে কাশ্মিরের বিষয়ও থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ বলেছেন,ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা কীভাবে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে তার প্রমাণ দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।

অবশ্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয় যে, এই আলোচনা বড় কোনো ফল বয়ে আনবে বলে তারা আশা করছেন না এবং আলোচনা উদ্দেশ্য শুধু প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত