সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:৪০

সচিবালয়ে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ভাংচুর

জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে নিজের নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় রবিবার মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিবের কক্ষে ভাংচুর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সবিচালয়ে সাত নম্বর ভবনের যুগ্ম-সচিব মো. মাশুক মিয়ার কক্ষে (৫০১ নম্বর কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে। অবশ্য ঘটনার সময় যুগ্ম-সচিব কক্ষে ছিলেন না।

উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ২০১২ সালে টিম কর্মকর্তা হিসেবে মাঠে একবার লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে ঢুকে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।  

তবে মন্ত্রী জয় বলছেন, ভাংচুর নয়, নিজের রুমে ডেকে যুগ্ম-সচিবকে ‘শাসিয়েছেন’ তিনি। মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ বলেছেন, “এই ঘটনা খুবই লজ্জার।”

মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মচারী সংবাদমাধ্যমকে জানান, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষে যুগ্ম-সচিব মো. মাশুক মিয়ার কক্ষে জয় ভাংচুর চালান। যুগ্মসচিব তখন কক্ষে ছিলেন না।

কর্মকর্তারা জানান, রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে অতিথি হিসেবে শুধু ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের নাম লেখা ছিল।

অনুষ্ঠানে গিয়ে ব্যানারে নিজের নাম না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জয়। অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে চাইলে কর্মকর্তারা তাকে শান্ত করেন। পরে অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েই সচিবালয়ে চলে আসেন মন্ত্রী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ে লিফট থেকেই নেমেই চিৎকার করে ওঠেন জয়। কয়েকজন কর্মকর্তার নাম ধরে গালাগালিও করেন তিনি।

“যুগ্মসচিব মাশুক মিয়ার কক্ষে গিয়ে জয় তার কম্পিউটার ভাংচুর করে কাগজপত্র তছনছ করেন, টেবিলে লাথি মারেন।”

কক্ষ ভাংচরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে রোববার বিকালে নিজের দপ্তরে জয় বলেন, “ওনাকে (মাশুক মিয়া) রুমে এনে শাসিয়েছি। কারণ তিনি রুলস অফ বিজনেস অমান্য করেছেন।”

কবে শাসিয়েছেন- এমন প্রশ্নে জয় বলেন, “গত বৃহস্পতিবার। কারণ মাশুক মিয়াসহ কয়েকজন যুগ্ম-সচিব আমার কাজে হেল্প করছেন না। মন্ত্রণালয়ের কেউই আমার কাজে হেল্প করেন না। সবাই দুর্নীতিবাজ।”

কে বা কারা মাশুক মিয়ার কম্পিউটার ভেঙে তার নামে কুৎসা রটাচ্ছেন বলেও দাবি করেন জয়।

তিনি বলেন, মাশুক মিয়া ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মীর খুরসিদ আনোয়ার এবং মনজুরুল কাদের তার কোনো কাজেই সহযোগিতা করেন না।

মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সংস্থা ও দপ্তরের নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বদলিতে আর্থিক লেনদেন হয় অভিযোগ করে জয় বলেন, নিয়মানুযায়ী সব ফাইল তার কাছে আসার কথা থাকলেও অনেক ফাইলই আসে না।

এ বিষয়ে মীর খুরসিদ আনোয়ার বলেন, “উপমন্ত্রীকে অসযোগিতার কোনো সুযোগ কি আছে?”

ক্রীড়া সচিব নূর মোহাম্মদ রোববার রাতে বলেন, “সচিবালয়ে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এটা খুবই লজ্জার।”

যুগ্ম-সচিব মাশুক মিয়া কক্ষে ভাংচুরের বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, “২৫-৩০ বছর ধরে চাকরি করার পরেও যদি এভাবে অপমান হতে হয়…। তাদের প্রটেকশন দেওয়ার দায়িত্ব আমার। আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি।”

উপমন্ত্রীর কাজে সচিবসহ কেউই অসহযোগিতা করেন না দাবি করে নূর মোহাম্মদ বলেন, “কোন ফাইল উপমন্ত্রীর কাছে যায় না এমন একটা উদাহরণ দেখাক তিনি।”

গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি সাংসদ হন এবং উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।


তারকা ফুটবলার জয় এর আগে ২০১২ সালে ম্যাচ চলাকালে পকেটে অস্ত্র নিয়ে মাঠে প্রবেশ করে সমালোচিত হন। অবশ্য ম্যাচ চলাকালে মাঠে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের অপরাধে আরিফ খান জয়কে ১ বছরের জন্য স্থগিত দণ্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি। পরে শাস্তির ২১ দিনের মাথায় জয়ের স্থগিত দণ্ডাদেশ বহাল রেখে অর্থদণ্ড মওকুফ করে দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত