০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ০৭:৫৯
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক অর্থ, পররাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী এবং দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী (৮৩) মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ দিন ধরে ঢাকার বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। রাতে ধানমন্ডির নিজ বাসার সামনে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এবং রাতেই তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দিনাজপুর-৪ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী সর্বশেষ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী এবং এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল বিনিময় তিরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ই হয়।
১৯৪৩ সালের ২ জুন দিনাজপুরের খানসামার ডাক্তারপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএ এবং ১৯৬৩ সালে এমএ করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে নিজের শিক্ষায়তনে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে মাহমুদ আলী যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কূটনৈতিক ফ্রন্টে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কূটনৈতিক দায়িত্ব নিয়ে ১৯৬৮ সালে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তিনি তখন পাকিস্তানের নিউ ইয়র্ক মিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন এবং ওই বছর মে মাসে মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হন।
মাহমুদ আলী মুজিবনগর সরকারের বিদেশ প্রতিনিধি প্রধান এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বিচারপতি আবু সায়িদ চৌধুরীর নির্বাহী সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের হয়ে বিভিন্ন মিশনে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন মাহমুদ আলী। বেইজিংয়ে রাষ্ট্রদূতের পদমর্যাদায় উপমিশন প্রধান; ভুটান, অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, জার্মানি ও নেপালে রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্যে হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত।
ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় রাজ জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়। ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক সে সময় নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।
১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে তিনি ভারতের সাথে তিন বিঘা করিডোর বাস্তবায়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। একই বছর মিয়ানমারের শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের আলোচনায় যোগ দেন। সে সময় ভারত ও পাকিস্তানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীও ছিলেন তিনি।
খালেদা জিয়া যখন দিনাজপুরে স্কুলে পড়তেন, মাহমুদ আলীর ছোটবোন ছিলেন তার সহপাঠী।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকার জন্য দুই বছরের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল মাহমুদ আলীকে। সেই হিসেবে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি কূটনৈতিক পেশায় ছিলেন।
২০০১ সালের এপ্রিল মাসে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর মাহমুদ আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
আপনার মন্তব্য