০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:১১
আজ ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পৃথক নামে দিনটি পালন করে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। পঁচাত্তর সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সিপাহি-জনতা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমানকে।
৭ নভেম্বরকে জাসদ ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল ও সংগঠন ৭ নভেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই দিনই সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনাসদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থান ঘটান। সে সময় সেনাবাহিনীতে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। এ সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দি করা হয়। ৬ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদকে গ্রেপ্তার করেন। একপর্যায়ে ৬ নভেম্বর গভীর রাতে সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়ে সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসেন। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার এক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ ও তার কিছু অনুসারী। তারপর থেকেই ৭ নভেম্বর পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ বছর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটিকে পালন করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। আজ ৭ নভেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টায় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা। এর আগে সকাল ৬টায় সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ৩টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। এদিন জেলা ও বিভাগীয় শহরে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ১২ নভেম্বর বুধবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্ৰে আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়া ৬ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ডকুমেন্টারি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব শুধু মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা নয়, এ দেশে আধিপত্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অভ্যুদয়ের সূচনা করেছিল। সে জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনোত্তর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজ স্বার্থে দেশকে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে ঠেলে দিয়ে ক্ষমতা চিরদিনের জন্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। বাকশালি সরকার ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের অধিকার হরণ করে। এই চরম সংকটকালে ৭৫-এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্ত হন।’
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয় এবং গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় এজেন্টরা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে।
পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখনো দেশে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়নি। আর সে জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ৫ আগস্টের পরে দেশবাসী কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। ৭ নভেম্বরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরতরে বিদায় করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
আপনার মন্তব্য