সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:১২

রেমিটেন্সে প্রণোদনার নীতিমালা জারি

প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিতে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে এখন থেকে যারা আয় পাঠাবেন, তাদের সুবিধাভোগীরা ২ শতাংশ বেশি টাকা পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এ নীতিমালা জারি করে কার্যকর করার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দিতে বিলম্ব বা হয়রানি করা হলে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে যারা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, তারাও সরকারের ২ শতাংশ নগদ সহায়তা সুবিধা পাবেন। আর ১ হাজার ৫০০ ডলারের কম আয় এলে কোনো নথিপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাওয়া যাবে। এ সুবিধা দিতে ব্যাংকগুলোকে অগ্রিম তিন মাসের প্রণোদনার অর্থ দেবে সরকার। তবে এখনই টাকা ছাড় না হলেও ব্যাংকগুলোকে সুবিধাভোগীদের প্রণোদনা দেওয়া শুরু করতে হবে।

নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব ব্যাংকে প্রবাসী আয় আসবে, তারাই সুবিধাভোগীকে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেবে। প্রতি বার ১ হাজার ৫০০ ডলারের আয় এলে তাৎক্ষণিক সুবিধা দিতে হবে। এর বেশি আয় এলে পাসপোর্টের কপি, বিদেশি কোম্পানির নিয়োগপত্র, ব্যবসার নথিপত্র জমা দিলে নগদ সহায়তা মিলবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ দিনের মধ্যে প্রণোদনা দিতে হবে। গ্রাহককে আয় আসার তথ্য জানানোর সময় নগদ সহায়তার তথ্য আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে।

কোনো গ্রাহক নিয়ম ভেঙে নগদ সহায়তা নিলে তা ফেরত দিতে হবে বলেও জানানো হয়েছে নীতিমালায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যে হিসাব রয়েছে, তা থেকে ওই টাকা কেটে রাখবে ব্যাংকগুলো । এ কাজে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তিও দেওয়া হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো পরবর্তী তিন মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের প্রণোদনার তহবিল নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চাহিদা দিতে হবে। এ তহবিল শেষ হলেও ব্যাংকগুলোকে নিজ তহবিল থেকে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি প্রণোদনার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এতে প্রবাসী আয় প্রেরকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট, গ্রহণকারী নাম ও পেশা, ব্যাংকের নামসহ আরও নানা তথ্য জমা দিতে হবে।

সহায়তা পেতে যে সব পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:

  • বিদেশ হতে প্রেরিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক প্রযোজ্য বিনিময়হারে টাকায় রূপান্তরিত অর্থ প্রচলিত বিধিবিধান পরিপালন করে উপকারভোগীর হিসাবে জমা/ উপকারভোগীকে প্রদানের সময় উক্ত অর্থের উপর ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করবে।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় পরিচালিত বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজ/ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে হবে।
  • একজন প্রবাসীর রেমিটেন্সের উপর প্রতিবারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ ডলার/সমমূল্যের অর্থের জন্য কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • ১৫০০ ডলারের বেশী লেনদেনে প্রাপককে রেমিটেন্স প্রেরকের বৈধ কাগজপত্র (যেমন-পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা কর্তৃক প্রদত্ত নিয়োগপত্রের কপি/ বিএমইটি প্রদত্ত সনদপত্রের কপি, ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি ইত্যাদি) রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক শাখায় দাখিল সাপেক্ষে নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
  • বিধিবহির্ভূতভাবে নগদ সহায়তা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরবর্তীতে সে/তাঁরা এ সুবিধা প্রাপ্য হবে না এবং প্রদত্ত অর্থ তার কাছ থেকে আদায় করা হবে।
  • বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের প্রবাসী আয় আহরণের গড় মাসিক অংকের ভিত্তিতে তিন মাসের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ সহায়তার অনুমিত পরিমাণের তহবিল সরকারি বরাদ্দ হতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইমপ্রেস্ট আগাম আকারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুকূলে হস্তান্তর করবে।

নগদ সহায়তার অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়া:

  • রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য একটি পৃথক টাকা হিসাব পরিচালনা করবে।
  • প্রাপকের হিসাব রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক ভিন্ন অন্য কোন ব্যাংকে হলে রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক ২ শতাংশ নগদ সহায়তাসহ বিইএফটিএন, আরটিজিএস, এনপিএসবি বা এমএফএস এর মাধ্যমে তাঁর (প্রাপকের) হিসাবে জমা করবে।
  • বেনিফিশিয়ারির মোবাইল ফোনে তার অনুকূলে রেমিটেন্সের টাকা জমা হওয়ার মেসেজ/লেনদেনের রশিদ প্রদান করবে। উক্ত মেসেজে/লেনদেনের রশিদে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তার পরিমাণ পৃথকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
  • শর্ত মোতাবেক প্রাপক রেমিটেন্স গ্রহণের দিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল না করলে পরবর্তী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা উপস্থাপন করলে রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক তাকে প্রাপ্য নগদ সহায়তা প্রদান করবে।
  • এই প্রণোদনা ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত