সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২০:৪৭

আযহারী দেশত্যাগ করেন কীভাবে, প্রশ্ন মেননের

একাত্তরের মানবতাবিরোধি অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ওয়াজ করেও মিজানুর রহমান আযহারী কী করে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়া চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী এ প্রশ্ন তুলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষতার মূলনীতি উপহার দিয়েছিলেন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে তিনি কেবল সোচ্চার ছিলেন না, বাস্তবে তার অনুসরণও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এ সংসদে স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ইউটিউবে প্রচারিত ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্যের পেন-ড্রাইভ দিয়েছিলাম। সে সবের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা নেই।
মেনন আরও বলেন, সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজকারী জনৈক আযহারী সম্পর্কে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। অথচ আইসিটি আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। আর শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কি অতীতের মতো আবার মৌলবাদকে পোষকতা দিচ্ছে? না হলে আযহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারেন না। খতমে নবুয়ত নতুন করে হুঙ্কার ছাড়তে পারে না। হেফাজত সমর্থন (?) প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারে না। এরাই ক’দিন পর পাকিস্তানি কায়দায় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে বলবে, যেমন এ সংসদেই যুদ্ধাপরাধী নিজামী সে প্রস্তাব তুলেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নামে যে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে তাকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তার ছেঁদ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টার অবসান হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রচারে, আমাদের আচার-আচরণে, বেশ-ভূষার পরিবর্তনে তার রেশ আমরা দেখি। ফেসবুক, ইউটিউবের নিত্য প্রচারে সে মানসিকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।’

উল্লেখ্য, ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আযহারী সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউবে ব্যাপক আলোচিত এক বক্তা। ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই বক্তা তার বিভিন্ন মাহফিলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে বিভিন্ন কথা বলে আসছেন। এছাড়াও তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য, মোহাম্মদ (সা.)-এর স্ত্রী বিবি খাদিজাকে নিয়ে কটূক্তি, এবং চার খলিফার অন্যতম হযরত ওসমান-আলী (রাহ...)-কে মদ্যপ-মাতাল বলে কটূক্তি করলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাহফিলে তার দেওয়া ফতোয়া নিয়ে আলেম সমাজে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় দেশের আলেম সমাজের একটা অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন মিজানুর রহমান আযহারী। বিভিন্ন জায়গায় তার মাহফিলে বাধা আসতে থাকে। সর্বশেষ গত মাসে সিলেটের একাধিক মাহফিলে তিনি অতিথি হয়ে আসতে পারেননি। সম্প্রতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সমালোচনা করেন এই ইসলামি বক্তার। এরপর এক ফেবসুক পোস্টে আযহারী আগামী মার্চ পর্যন্ত তার সকল মাহফিল স্থগিত ঘোষণার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত