সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০১:২১

বিদেশি খুন: কাইয়ুমকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুর বদল

ঢাকায় বিদেশি খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে এম এ কাইয়ুমকে শনাক্তের কথা বলার ১২ ঘণ্টার মধ্যে সুর পাল্টে ফেলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এবার তিনি বলছেন, ওই বিএনপি নেতাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার সচিবালয়ে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, হাসানুল হক ইনুসহ সাত মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর আগের দিনের বক্তব্য থেকে ঘুরে যান আসাদুজ্জামান কামাল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি বলেন, “যুগান্তর পত্রিকায় একজনের নাম প্রকাশ করেছে, আমি বলেছি, সে (কাইয়ুম) সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, আমরা তাকেও সন্দেহ করছি।”

গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের নাম মঙ্গলবার রাতে প্রথমে একাত্তর টেলিভিশনকে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি একই কথা বলেছিলেন।

বিএনপি নেতা কাইয়ুমের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তখন মন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ।” পুনরায় প্রশ্ন করা হলেও তিনি ‘হুঁ’ বলেছিলেন। বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ ধরনের কথা হয়নি।

“আমি যেটা বলেছি, সেটা রিপিট করছি- আমি একাত্তর জার্নালকে বলেছি, যুগান্তর পত্রিকায় যেটা ছাপা হয়েছে যে, কাইয়ুম বিএনপির এক ওয়ার্ড কমিশনার, আমরা তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। সে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।”

“তাকে (কাইয়ুম) ছাড়াও আরও অনেকজনকে সন্দেহ করেছি, তারাও সন্দেহের তালিকায় আছে।”

গত বছরের মে মাসে একবার ৭ খুনের আসামি নূর হোসেনের এক সহযোগী হাসমত আলী হাসুকে গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করে পরে অস্বীকার করেছিলেন আসাদুজ্জামান কামাল। ওই বছরের ৫ মে সকালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, হাসুকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পরে রাতে তিনি বলেন, “হাসমত আলী হাসুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। এখনো কনফিউশন রয়েছে। আইজিপি সাহেব এখনও জানেন না।”

সকালের নিশ্চিতের পর রাতে অস্বীকারের বিষয়ে তিনি তখন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে- “আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম, আমি টিভিতে দেখেছি যে, তাকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; আপনিও দেখেন।”

তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার পুলিশ বলেছিল, এক ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনীতিবিদ রয়েছে। তবে তখন কারও নাম বলেননি তিনি। রাতে কাইয়ুমের নাম বলেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাইয়ুম ঢাকা মহানগর কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় তিনি গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম। তবে তিনি এখন বিদেশে বলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত কি না- এ প্রশ্নে মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আমাদের তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বাদ বাকি জানা যাবে।”

ঢাকায় তাভেল্লা খুনের পাঁচ দিনের মধ্যে এই মাসের শুরুতে রংপুরে জাপানি নাগরকি কুনিওকে একইভাবে গুলি চালিয়ে হত্যার পর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার দাবি উঠলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।

পুলিশ বলছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্য থেকে বিদেশিদের হত্যা করা হয়।

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়ে তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কবার্তা দিচ্ছে।

সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন এনিয়ে কথা বলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের (বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি) যদি সিকিউরিটি কনসার্ন এতই থাকে তাহলে তারা কীভাবে অবস্থান করছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অত্যন্ত সন্তোষজনক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সঙ্কট উৎরে যাচ্ছি।”

দুই বিদেশি হত্যা, সম্প্রতি গাবতলীতে পুলিশ হত্যা এবং শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে হামলার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে সংঘটিত এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করছেন সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা।
আমু বলেন, “দেশে একটি অরাজক অবস্থা সৃষ্টির জন্য ২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করছি।”

তাভেল্লা হত্যামামলায় গ্রেপ্তার একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, আরও তিনজন রিমান্ডে আছেন বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, হোসাইনী দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় জিলানী নামে একজন গ্রেপ্তার রয়েছেন এবং আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

এছাড়া গাবতলীতে এসআই ইব্রাহীম মোল্লা হত্যায় জড়িত থাকায় ঘটনাস্থল থেকে মাসুদ রানা নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর বগুড়া থেকে জামায়াত-শিবিরের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই বৈঠকে অংশ নেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ছাড়াও আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই’র মহাপরিলক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে ছিলেন।

চলতি বছর ৬ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে জানিয়ে আমু বলেন, রোহিঙ্গা আসা ঠেকাতে ৪৮টি চৌকি দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে মাদক নির্মূলে অভিযানে গত ১৫ মাসে পাঁচ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

আমু বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত