নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুন, ২০১৬ ০১:৩৩

ফের আওয়ামী লীগ-জাসদ বিরোধ!

ফের আওয়ামী লীগ-জাসদ বিরোধকে সামনে নিয়ে আসলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) তুলোধুনো করে দলটিকে  ‘হঠকারী’ সংগঠন আখ্যা দিয়ে  ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে এইসব হঠকারীদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

সোমবার (১৩ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘দুই দিনব্যাপী বর্ধিত সভার সমাপণী’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিতে গিয়ে তিনি জাসদ সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।

জাসদকে ‘হঠকারী’ সংগঠন আখ্যায়িত করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে ছাত্রলীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাসদ গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাসদ নামক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে পরিচালিত করে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতাকর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। তারা যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করতো তবে বাংলাদেশ একটি ভিন্ন বাংলাদেশ হতো।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এদের কারণেই দলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আবার তাদের মধ্য থেকে একজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্তে আস্তে দলকে সংগঠিত করেছেন। নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে দেশ আগেই অর্থনৈতিক অগ্রসরতা অর্জন করতো। শুধু হঠকারীদের (জাসদ) কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রিত্ব করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের একজনকে আবার মন্ত্রিত্বও দেয়া হয়েছে। যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন করতে হবে।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক,  ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত বছর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করলে আরও কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে সুর মেলান।

শেখ সেলিমের বক্তব্যের পরের দিন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও সংবাদ সম্মেলনে জাসদের ১৯৭২-৭৫ সময়কার ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।

এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ আবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেন, ইনুরা তখন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।

তার প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি ইনু অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করতে বর্তমান রাজনৈতিক মিত্র দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতার ওই অবস্থানের মূল্যায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “চলার পথে বহু পদক্ষেপ নিতে হয়, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, এটা ইতিহাস বিচার করবে।”

তবে বর্তমান ঐক্যে কোনো ফাটল ধরার সম্ভাবনা নাকচ করে ইনু বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নেওয়ার জন্য ঐক্য দরকার।”

১৯৭২-৭৫ সময়ে দলের ভূমিকা নিয়ে জাসদের অন্য অংশের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল বলেছিলেন, তারা এখন ওই সময়ের ভুলের ‘কাফফারা’ দিচ্ছেন।

সম্প্রতি কাউন্সিলে জাসদ ভেঙে গেলে ইনু ও বাদল এখন আলাদা অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত