চয়ন চৌধুরী

০৩ মার্চ, ২০১৫ ২০:৩৩

ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমিই হয়ে গেলো ব্যাটিং স্বর্গ

গ্রুপ পর্বের আর দিন দশেক বাকি থাকতে দল ও সমর্থকদের মধ্যে এখন চলছে ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র হিসেব

অর্ধেক বিশ্বকাপ শেষ; দরজায় কড়া নাড়ছে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব। গ্রুপ পর্বের আর দিন দশেক বাকি থাকতে দল ও সমর্থকদের মধ্যে এখন চলছে ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র হিসেব। শেষ ৮ দলের লড়াইয়ের জন্য অবশ্য ইতিমধ্যে চার দল প্রায় নিশ্চিত হয়েই গেছে বলা যায়। বাকি চারটি দল হতে দুই গ্রুপে অন্তত ৭ টি দল এখন ওই হিসেব-নিকেশের গ্যাঁড়াকলে। আনন্দের বিষয়, এই হিসেবে আমাদের বাংলাদেশও ভালোভাবে রয়েছে। আগামী তিন ম্যাচের মধ্যে ‘মাত্র’ দুটিতে জয় পেলেই এ গৌরব অর্জন করবে মাশরাফি এন্ড কোং।

টাইগারদের লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ আশা করি বৃহস্পতিবার নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতেই পূর্ণ হবে। তারপর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড পরীক্ষা। অবশ্য অন্য দলগুলোর কে-কি করবে; এ লেখায় এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। বরঞ্চ এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের গতি প্রতিকৃতি নিয়েই এ লেখার চেষ্টা। রানের খেলা ক্রিকেট বলে এ লেখায় ব্যাটসম্যানদের নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকছে। পরের লেখায় হয়ত থাকবে বোলারদের আলোচনা। এ থেকে হয়ত আগামী ম্যাচগুলোর একটা হিসেব পাওয়াও যেতে পারে।

সবসময় দেখা যায় সফরকারী দলগুলোর জন্য অসি-কিউইদের সিমিং কন্ডিশনের সঙ্গে বাউন্সি উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকে। গতির খেলায় বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক এই দুটি দেশ অতীতে বরাবর প্রতিপক্ষকে বধ করে চরম নির্মমতায়। চলতি বিশ্বকাপেও ব্যাটসম্যানদের এমন ‘মৃত্যুর’ আশঙ্কায় ছিলেন প্রায় সকলে। তাই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ ওখানে আগেভাগে গিয়ে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সকলের জন্য ‘চমক’ হয়ে উঠেছে টুর্নামেন্টটি; গতির দেশের বিশ্বকাপ উল্টো এখন ব্যাটিং স্বর্গ।

সম্ভবত দর্শকদের কথা চিন্তা করেই আইসিসি’র প্রেসক্রিপশনে উইকেটগুলো ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি থেকে এমন স্বর্গে পরিণত হয়েছে। চলতি আসরে আজ পর্যন্ত ২৪ ম্যাচের ১৫টি তিনশ রানের ইনিংস দেখা গেছে; যাতে আবার দুটি চারশ ছাড়িয়েছে। অ্যায়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪১১ ও ৪০৮ রানের পাহাড় গড়ার কৃতিত্ব দক্ষিণ আফ্রিকা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে হোচট খেলেও এবারের আসরে অন্যতম ফেভারিট প্রোটিয়াদের এছাড়া একটি তিনশ রানের ইনিংসও রয়েছে।

এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিনটি এবং শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ইংল্যান্ড দুটি করে তিনশ রানের ইনিংস গড়েছে। একটি করে তিনশ রানের ইনিংস গড়ার তালিকায় দুই স্বাগতিকের সঙ্গে রয়েছে আইরিশরাও। সম্ভাব্য বোলারদের বিশ্বকাপের পাশার দান পাল্টে দেওয়ার মিশনে যথারীতি নেতৃত্ব দিচ্ছেন গেইল-ভিলিয়ার্সদের মত হার্ডহিটাররা। পিছিয়ে নেই কপি-বুক ক্রিকেটের পতাকাধারী সাঙ্গাকারা-আমলা’রাও। ক্যারিবিয়ান ত্রাস গেইলের ব্যাট থেকে এসেছে এবারের আসরের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরির (২১৫) ইনিংস।

মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে নেই প্রোটিয়া অধিনায়ক ভিলিয়ার্স (১৬২*), শ্রীলঙ্কান ওপেনার দিলশান (১৬১*) কিংবা প্রোটিয়া ওপেনার আমলা (১৫৯)। পুরো আসরটি বোলারদের বধ্যভূমিতে পরিণত করতে অবশ্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন লঙ্কান বা-হাতি সাঙ্গাকার। চার ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিতে ২৬৮ রান করে তিনি-ই এখন রান সংগ্রহকারীদের তালিকার শীর্ষে। বিস্ময়রকর বিষয় হচ্ছে, দুই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে নিউজিল্যান্ড ও ভারত শীর্ষে থাকলেও দলীয় বড় ইনিংসের মত ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের শীর্ষ ১০-এ তাদের কেউ নেই।

সাঙ্কাকারা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন তার স্বদেশী দুই ওপেনার তিরিমান্নে ও দিলশান। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের এমন ফর্ম অবশ্যই শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তির। সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে গেইল থাকলেও শীর্ষ ১০-এ দলীয় রানের মত প্রোটিয়াদেরই জয়জয়কার। ভিলিয়ার্স-আমলা ছাড়াও তালিকায় ডু প্লেসিস ও মিলারের উপস্থিতি তাদের ব্যাটিং লাইনের শক্তিরও প্রমাণ দিচ্ছে। শক্ত ব্যাটিং লাইনের জন্য পরিচিত ভারতের ওপেনার ধাওয়ানের থাকাটা স্বাভাবিক মানলেও এ তালিকায় বিস্ময় অবশ্যই আরব আমিরাতের আনোয়ারের উপস্থিতি।

শীর্ষ ৫০ জনের তালিকায় যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৪তম স্থানে রয়েছেন আমাদের সাকিব (১০৯) ও মুশফিক (১০৭)। এখন পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠা এ আসরে দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণে তাই আমাদের টপ অর্ডারের অন্যদেরও দ্রুত রানে ফেরা জরুরী।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত