
০৪ মার্চ, ২০১৫ ২১:১৭
এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে! স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়েও অনেকের মনে শঙ্কা! আবার ক্রিকেট বিশ্বে পুঁচকে স্কটিশরাই কি-না টাইগারদের উল্টে হুমকি দিচ্ছে! অথচ নিউজিল্যান্ডের ছোট্ট শহর নেলসনে বাংলাদেশ কত বিশাল ব্যবধানে জিতে, এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু চলতি রান উৎসবের বিশ্বকাপে সমর্থকদের এখনও ধাঁধায়
রেখেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরাই। সাকিব-মুশফিককে বাদ দিলে আর কেউ-ই এখনও আস্থার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাব্বির অর্ধশত পেলেও ততক্ষণে বাংলাদেশ লড়াই থেকেই ছিটকে পড়ে যায়। একইভাবে সৌম্য সরকার দুটি ম্যাচে ভালো সূচনা করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। একই কথা খাটে অভিজ্ঞ রিয়াদের ক্ষেত্রেও। অবশ্য এই ৪/৫ জনকে বাদ দিলে অন্যদের অবস্থা আরো সূচনীয়। এমন পরিস্থিতিতে স্কটিশ ম্যাচটাই হওয়া উচিৎ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরার মঞ্চ। অনেক সমালোচনার পরও কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতে এই ম্যাচটাই যে সবচেয়ে সহজ।
স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া পার্থে আফগানদের রান বন্যায় উড়িয়ে দেওয়ার দিনে এবারের আসরে ধুকতে থাকা পাকিস্তান-ও আমিরাতের বিরুদ্ধে তিনশ রানের ইনিংস গড়েছে। এমনকি ক্রিকেটে এখনও কুলীন স্বীকৃতি না পাওয়া আইরিশরা এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এ অবস্থায় রানে ফেরার জন্য আজকের ম্যাচটাকেই টার্গেট করতে হবে বাংলাদেশকে। কয়েকজন ব্যাটসম্যানের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও এই সামর্থ্য টাইগারদের অবশ্যই আছে।
আর এটা বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা; আরো স্পষ্ট করে বললে নির্দিষ্ট ব্যাটিং লাইনআপ। বিশ্বকাপের মত একটি আসরে খেলার সময়ও দলের থিংক-ট্যাঙ্ক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা, দলের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা মুশফিক-সাকিবদের নির্ধারিত পজিশন থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রুপে নিজেদের পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে-ই গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির সমাধান প্রয়োজন।
মুশফিক-সাকিবদের বেশি বল খেলার সুযোগ দিতে উপরের দিকে খেলানোর পাশাপাশি টপঅর্ডারে ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এসেছে। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়া তামিম এবং ওপেনিংয়ে তার পার্টনার এনামুল কেউ-ই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এক সময়ে নিয়মিত ওয়ান ডাউনে খেললেন চলতি আসরে মুমিনুলের অবস্থাও সূচনীয়। দুটি ম্যাচে ভিন্ন পজিশনে খেলিয়ে তাকে আরো অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
স্কটিশদের হারানোর মিশনে অবশ্য তামিম, এনামুল ও মুমিনুলের মধ্যে অন্তত একজনকে ছেটে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি। অতীত বিবেচনায় এবং ঝড়ো সূচনার আশায় তামিম-এনামুলকে রাখাটাই ভালো বলে মনে করি। নেলসনের ছোট মাঠে তারা দু’চারটে বড় শট খেললেই পুরনো ছন্দে ফিরে আসার আত্মবিশ্বাসটাও পাবে। মুমিনুল বা অন্য কাউকে বাদ দিয়ে বিকল্প ব্যাটমস্যান না নিয়ে বোলিং শক্তি বাড়ানোর চিন্তাও খারাপ না।
উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর স্পিনে দুর্বলতার কথা সর্বজনবিদিত; আর এই হিসেবে আরাফাত বা তাইজুল দলে আসতে পারে। তাহলে মাশরাফির নেতৃত্বে তাসকিন-রুবেলের পেস আক্রমনের পাশাপাশি স্পিনে সাকিবকে সহায়তা দিতে পারবে। আর রিয়াদের অফস্পিন তো আছে-ই। মুমিনুল ছাড়া অন্য কেউ বাদ পড়লে ওপেনিংয়ে নামতে পারে সৌম্য। তবে চার ও পাঁচ নম্বরে মুশফিক ও সাকিব-ই সবচেয়ে ভালো পছন্দ। পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয় ও সাতে রিয়াদ ও সাব্বিরের মধ্যে অদল-বদল হতে পারে।
স্কটিশদের ব্যাটিংয়ে কয়েকজন ইংলিশ কাউন্টি খেলা খেলোয়াড় থাকলেও তারা খুব একটা কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। আগের তিন ম্যাচ মিলে তাদের মোট দলীয় ৫৩৬ রান সংগ্রহ-ই টাইগারদের নির্ভার রাখতে সাহায্য করবে। তবে টাইগারদের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে স্কটিশ পেসার জোশ ড্যাভি। তিন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে সে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় ৪র্থ স্থানে রয়েছে। তবে এই দলটির বিরুদ্ধে শতভাগ সাফল্যের আত্মবিশ্বাস টাইগারদের জয়কে তরান্বিত করাই উচিৎ।
গত কদিন ধরে ক্রিকেট বিশ্বে চমক সৃষ্টি করে ‘এ’ গ্রুপে তৃতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ; যদিও আফগানদের উড়িয়ে এখন ওখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। অসিদের বিরুদ্ধে বৃষ্টির সৌজন্যে এক পয়েন্ট প্রাপ্তি মাশরাফি এন্ড কোংদের শেষ আটে উঠার রাস্তাকে মসৃণ করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, এই রাস্তাটা মসৃণ থাকবে না বাকি তিন ম্যাচের দুটি জয় না পেলে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ডের মুখোমুুখি হওয়ার আগে নির্ভুল পরিকল্পনায় স্কটিশ বধ করে ইংলিশ জয়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
আপনার মন্তব্য